পলাশ তোমায় টুপি খোলা সালাম: শিমুল খান

প্রকাশ | ১৩ মে ২০২২, ১৪:৩০

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বর্তমানে বাংলাদেশের ভিজ্যুয়াল নাটকে নতুন দিনের অভিনেতাদের ভেতরে নিঃসন্দেহে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতার নাম জিয়াউল হক পলাশ। তবে নতুন দিনের প্রবল জনপ্রিয় নির্মাতা কাজল আরেফিন অমি পরিচালিত ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ধারাবাহিক নাটকের আকাশসম জনপ্রিয়তার দরুণ সাধারণ দর্শকরা পলাশকে ভালোবেসে ‘কাবিলা’ নামেই চেনে।

কারণ উক্ত ধারাবাহিকে সে নোয়াখালীর ভাষায় ‘কাবিলা’ চরিত্রটিকে এত্ত প্রাণবন্ত করে ফুটিয়ে তুলেছেন যে, দর্শকদের হয়তো তাকে কাবিলা চরিত্রের বাইরে অন্য কোনো চরিত্রে কল্পনা করতেও কষ্ট হয়।

এই পয়েন্টটাকেই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে তরুণ অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। তাইতো পলাশ তার বস পরিচালক কাজল আরেফিন অমির পরিচালনার বাইরে যে দুই একটি কাজ করতে রাজি হচ্ছেন সেগুলোর সবকটি চরিত্রই আদতে ব্যাচেলর পয়েন্টের কাবিলা চরিত্রের পুরো বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে।

যেমন, সম্প্রতিককালে ভারতীয় জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হৈচৈ-এর আলোচিত ওয়েব সিরিজের কথা বলি, প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে একটি ওভিসি এবং বিশেষ করে বঙ্গ বিডি প্রযোজিত মেধাবী নির্মাতা আশিকুর রহমানের পরিচালনায় এই কোরবানির ঈদের অন্যতম আলোচিত এবং প্রশংসিত ‘সাদা প্রাইভেট’ নাটকে ড্রাইভার সেলিম চরিত্রটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

কারণ সত্যিই পলাশ এখানে অতুলনীয় এক বাস্তবধর্মী অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করেছে। নির্মাতা আশিকুর রহমানকে ধন্যবাদ, পলাশকে নিয়ে এমনভাবে একদম আউট অব দ্যা বক্স টাইপ কিছু ভেবে সেটার বাস্তবায়ন করার জন্য।

যাহোক এই প্রোডাকশনগুলোতে কাবিলা চরিত্রকে ছাপিয়ে জিয়াউল হক পলাশের একজন সব্যসাচী অভিনেতা হবার অনির্বাণ চেষ্টা সত্যিই চোখে পড়ার মতো। আমি বিশ্বাস করি, পলাশ যদি সারা দেশব্যপী তার অভিনয়ের এই তুমুল জনপ্রিয়তাকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে এভাবেই জনপ্রিয় এবং মেধাভিত্তিক কাজের সুষম বন্টন করার মধ্য দিয়ে সিরিয়াস অভিনয় চালিয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে অবশ্যই এই দেশের নাটক, সিনেমা এবং ওয়েবের অবিসংবাদিত অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে সে।

কারণ, কোনো অভিনেতার ঝুলিতে প্রবল জনপ্রিয়তা থাকলে কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়। দোয়া করি আগাগোড়া- নির্মোহ, ভদ্র, মার্জিত, নিরহংকার, নির্লোভ এই মাটির মানুষ জিয়াউল হক পলাশ তার এই তুমুল বৈচিত্র্যময় অভিনয় চেষ্টা দিয়ে ক্যারিয়ারে সেই পর্যায়ে অধিষ্ঠিত হোক। হৃদয়ের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা থেকে ভালোবাসা রইল জিয়াউল হক পলাশের জন্য।

বিঃ দ্রঃ- পলাশ মনেপ্রাণে মূলত একজন নির্মাতা এবং অবশ্যই মেধাবী নির্মাতা। বর্তমানে সে নির্মাতা হিসেবে নিজের পরিচালনায় নাটক, বিজ্ঞাপন বানানোর পাশাপাশি দেশের অন্যতম শীর্ষ জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা কাজল আরেফিন অমির সহযোগী পরিচালক হিসেবে বুম ফিল্মসের সেকেন্ড ইন কমান্ড পারসন হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি খুবই কম পরিমাণে অভিনয় করে থাকে।

তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে চরম বিস্ময়কর ব্যপারটা হচ্ছে- গত কয়েক বছর ধরে অভিনয়ের সুবাদে পলাশ এখন দেশের নাটকের অন্যতম চাহিদাসম্পন্ন এক হটকেক অভিনেতায় পরিণত হয়েছে। যার সুবাদে বর্তমান নাটকের বাজার অনুপাতে পলাশ চাইলেই অনায়াসে প্রতি মাসে অতি উচ্চ পারিশ্রমিক হাকিয়ে, যা তা গল্পে চোখ বুজে ৩০ দিন শুটিং করে, অন্য অনেক বাজার চলতি অভিনেতাদের মতো ভালো গাড়িতে চড়ে, ভালো ফ্ল্যাটে থেকে, ব্যাংক-ব্যালেন্স করার মধ্য দিয়ে চরম চিল এবং নিরাপদ লাইফ লিড করতেই পারতো।

কিন্তু ব্যক্তি জিয়াউল হক পলাশ তা করছে না, কারণ সে তার শিকড়কে ভুলে যেতে চায় না এবং অবশ্যই সে অন্য অনেকের মতো গড্ডালিকা প্রভাহে গা ভাসিয়ে নিতম্বে রকেট সেট করে মহাশূন্যে উড়ে বেড়াতে চায় না। সে চায় মেধাভিত্তিক সৃজনশীল কাজ করতে এবং অতি সহজ-সরল জীবনযাপন করে সবার ভালোবাসা নিয়ে বাঁচতে। সত্যিই এই যুগে অন্ততপক্ষে এই দেশের মিডিয়ায় এমন মাটির ছেলে পাওয়া অকল্পনীয় বটে। পলাশ তোমায় টুপি খোলা সালাম।

লেখা: শিমুল খান, চলচ্চিত্র অভিনেতা

(ঢাকাটাইমস/১৩ মেএলএম/এএইচ)