এরশাদ শিকদারের মেয়ে এশার আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলার তদন্ত কত দূর?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ১৩ মে ২০২২, ১৯:১৫

এরশাদ শিকদারের মেয়ে জান্নাতুল নওরিন এশার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলার তদন্ত চলছে। তবে এশার মৃত্যুর দুই মাস ১০ দিনেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন হাতে পায়নি পুলিশ। ফলে তদন্তেও ধীরগতি। এদিকে এশার প্রেমিক ও মামলার একমাত্র আসামি প্লাবন ঘোষ জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

এশার আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনা মামলাটি করেন তার মা সানজিদা নাহার। এত দিনেও মামলার তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় তিনি হতাশ। নিজের শারীরিক অবস্থার কারণে কত দিন মামলা চালাতে পারবেন, তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

জান্নাতুল নওরিন এশার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুরের প্লাবন ঘোষ নামের এক যুবকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মামলায় অভিযোগ করা হয়, সনাতন ধর্ম পরিবর্তন করে প্লাবন এশাকে বিয়ে করবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে এশাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেন প্লাবন।

গত ৪ মার্চ রাজধানীর গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন এশা। এ ঘটনায় এশার মা সানজিদা নাহার আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে প্লাবন ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

জান্নাতুল নওরিন এশা এরশাদ শিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী সানজিদা নাহারের মেয়ে। সানজিদা মেয়েকে নিয়ে থাকতেন রাজধানীর গুলশানের সুবাস্তু নজরভ্যালির শাহাজাদপুরের একটি বাসায়।

ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়ে মামলার এজাহারে এশার মা বলেন, গত ৩ মার্চ রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টার দিকে প্লাবন এসে এশা ও তার এক বান্ধবীকে আমাদের বাসার নিচ থেকে নিয়ে যায়। এশার বান্ধবী আমাকে জানায়, ঘোরাঘুরির সময় এশা ও প্লাবনের মধ্যে মোবাইল ফোনে একটি কল আসাকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে এশার বান্ধবী তাদের দুজনকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করে। সেখানে সমাধান না হওয়ায় এশা বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে এশা তার রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমি তখন বাসায় ঘুমাচ্ছিলাম। পরে জানতে পারি, শুক্রবার ভোর ৫টা ২৪ মিনিটে প্লাবনের কাকা আমার মেয়ের বান্ধবীকে ফোন করে জানায়, এশার বাসায় যাও, সে পাগলামি করছে, আত্মহত্যার চেষ্টা করছে।

এরপর ভোর ৫টা ২৯ মিনিটে প্লাবন আমাকে ফোন করে জানায়, আপনার মেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছে। আমি তার ফোন পেয়ে দ্রুত এশার রুমের দরজা খোলার চেষ্টা করি। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পাই। পরে বাসার সিকিউরিটি গার্ড মেজবাহ, আলামিন ও এশার বান্ধবীর সহায়তায় দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করি। আমরা দেখতে পাই, এশা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছে। এরপর সিকিউরিটি গার্ডদের সহায়তায় আমরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এশা মারা যায়।

এজাহারে এশার মা আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, তারা ভিন্ন ধর্মের হওয়ায় বিয়ের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিল প্লাবন ঘোষ। এজন্য সে কৌশলে এশার সঙ্গে ঝগড়া বাধায় এবং ইচ্ছে করেই এশাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। প্লাবন এশাকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করে।’

সম্প্রতি এশার মা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এই মামলায় প্লাবন ঘোষ জামিন পেয়েছে বলে শুনেছি। অথচ তদন্ত মেষ হয়নি। আমার শরীরটা বেশি ভালো না। আমি এখন আমার বাবার বাড়িতে আছি। তেমন দৌড়ঝাপ করতে পারি না। কীভাবে মামলাটি চলবে তাই ভাবছি।’

মামলাটি তদন্ত করছেন গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওহিদুল ইসলাম। ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘মামলার আসামি প্লাবন ঘোষ রোজার মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়েছেন। ওই কাগজ তখন আমার কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আর পরে জজ কোর্ট থেকে স্থায়ী জামিন নিয়েছে, যার কাগজও আমি পেয়েছি। আসামি জামিনে থাকায় তাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আমার কিছু করার নেই। আর এশার ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এখনো হাতে পাইনি। এই প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।’

কবে নাগাদ এশার ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে- জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. মাকসুদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, কোনো ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এক মাসে দেওয়া যায়। আবার কোনো ময়না তদন্তের প্রতিবেদন দিতে ছয় মাসও লাগতে পারে। এশার ময়না তদন্তের বিষয়টি আমার মনে নেই। না দেখে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারব না।’

গত ৩ মার্চ দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারের বাসায় গলায় ফাঁস দেন জান্নাতুল নওরিন এশা। পরদিন ভোর ছয়টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক এশাকে মৃত ঘোষণা করেন।

(ঢাকাটাইমস/১৩মে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :