কোরআন বিতরণ করে প্রশংসিত খ্রিস্টান পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশ | ১৪ মে ২০২২, ১২:০৮

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)

মুসলমানের ধর্মীয় গ্রন্থ আল-কোরআন। এই গ্রন্থের প্রতিটি বাণী শীতল করে মানুষের প্রাণ। তাই তো অন্য ধর্মালম্বী হয়েও মানুষের মাঝে আলো ছড়াতে পুলিশ কর্মকর্তা বেছে নিয়েছেন পবিত্র এই ধর্ম গ্রন্থ। অবিশ্বাস্য হলেও এ কাজটি করে চলেছেন সাভার মডেল থানার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী পুলিশ কর্মকর্তা মাকারিয়াস দাস। এতে সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি ।

সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) মাকারিয়াস দাস গত তিন মাসে মসজিদ, মাদ্রাসা ও দরিদ্রের মাঝে প্রায় দেড় শতাধিক কোরআনের কপি বিতরণ করেছেন। পবিত্র কোরআন কোন শিক্ষার্থীর কাছে থাকলে- তিনি ভাল মানুষ হয়ে গড়ে উঠবেন বলে মনে করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

শুক্রবার সকালে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাকারিয়াস দাশ ঢাকাটাইমসকে বলেন, আমি ছোট থেকে শুনে এসেছি কোরআন হলো পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। যা আল্লাহর কাছ থেকে নাজিল হয়েছে। আমি চাই, এই ধর্ম গ্রন্থের প্রতিটি বাণী মানুষের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ুক। মানুষ ভাল ফলাফলের জন্য এগিয়ে আসুক, আল্লাহকে স্মরণ করুক। 

বিতরণের উদ্দেশ্য কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি যখন ইন্টারমেডিয়েটে পড়ি তখন থেকে টিউশনির মাধ্যমে অনেক কষ্টে টাকা উপার্জন করেছি। আমাদের দেশের মানুষ খেঁটেখাওয়া মানুষ। অনেকেরই পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ কেনার সামর্থ নেই। তবে আমি সব সময় বিশ্বাস করি, ভাল একটি গ্রন্থ যদি কোন শিক্ষার্থীর কাছে থাকে, অবশ্যই সে ভাল মানুষই হবে। এজন্য এই পবিত্র গ্রন্থটিকেই বেছে নিয়েছি। 

তিনি আরো বলেন, আমি রমজানের সময় কোরআন বিতরণ করি। আমাদের বড় দিন হলে খ্রিষ্টীয়দের মাঝে বাইবেল বিতরণ করি। হিন্দু ধর্মালম্বীদের পূজায় গীতা বিতরণ করারও চেষ্টা করি।

অশ্রুসিক্ত নয়নে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের দেশে অনেক মানুষ দিনমজুরির কাজ করছেন। তাদের সামর্থ হয় না- একটা পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কেনার। অনেক মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও রয়েছে এমন। নতুন গ্রন্থ পেয়ে তারাও খুশি। এটা আমাকে অত্যন্ত স্পর্শ করে।  তাই আমি আমার অনুভূতি থেকে শত  কষ্টের মধ্যেও চেষ্টা করি- একটা পবিত্র গ্রন্থ বিতরণ করার। 

কোরআন বিতরণের অনুভূতি জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, পবিত্র কোরআন আল্লাহর গ্রন্থ। এই গ্রন্থটি যদি একটা মানুষের হাতে তুলে দিতে পারি, একজন খ্রিস্টান হয়ে আমি বিশ্বাস করি সে মানুষটি ভাল হয়ে উঠবে। আমি বিশ্বাস করি, সে মানুষটি আলোর পথে চলবে। পাপাচার থেকে মুক্ত থাকবে।  কারণ আল্লাহকে আমরা সবাই শ্রদ্ধা করি। তাকে আমরা ভালবাসি। গ্রন্থটি থাকলে তার যে আলো- সে আলোর পথেই চলবে।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কোরআন উপহার পেয়ে আল-আমীন বলেন, আমি এই প্রথম ইসলামের প্রতি কোন অমুসলমানের ভালবাসা দেখেছি। শুধু তাই নয়, তিনি প্রকৃত মানুষের ভূমিকা পালন করছেন। আমি অনেক আনন্দিত- এমন উপহার পেয়ে। এ ধারা অব্যাহত থাক, আমি দোয়া করি। 

প্রসঙ্গত, মাকারিয়াস দাস ছাত্রজীবন থেকেই টিউশনির টাকা দিয়ে এমন কাজ করে আসছেন। তিনি পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার ফকিরগঞ্জ খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৮৪ সালের ১২ এপ্রিল প্রয়াত সিমন দাস ও খ্রিস্টিনা দাস দম্পতির ৪র্থ সন্তান হিসেবে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তিনি আটোয়ারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে আটোয়ারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক শেষ করেন। পরে মির্জা গোলাম হাফিজ ডিগ্রি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি শেষ করে ২০১০ সালের ১ জুলাই রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ট্রেনিং-এর মাধ্যমে পুলিশে যোগ দান করেন । 

দীর্ঘ ১ বছর ট্রেনিং শেষে উপ-পুলিশ পরিদর্শক পদে তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও থানায় শিক্ষানবিস হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তেজগাঁও থানা, তেজগাঁও জোন অফিস, সদর কোট, তেজগাঁও রিজার্ভ, তেজগাঁও থানা, আদাবর থানা, শেরেবাংলা নগর থানা, তেজগাঁও থানায় দায়িত্ব পালন করেন। এরপর সিআরও হতে গুলশান বিভাগ, গুলশান বিভাগের বনানী থানা ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনের পর সর্বশেষ ২০২১ সালের ১৫ মার্চ পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে ঢাকা রেঞ্জে যোগ দেন। ২০২১ সালের ২৩ মার্চ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) হিসেবে ঢাকা রেঞ্জ অফিসে যোগদান করেন। একই দিন বিকালে ঢাকা জেলায় পোস্টিং হয় তার। 

২০২১ সালের ৩১ মার্চ পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) হিসেবে সাভার মডেল থানার দায়িত্ব বুঝে নেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে একই থানায় ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। দায়িত্ব পালনের ফাঁকে তিনি এসব সামাজিক কাজ করে চলেছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৪মে/এলএ)