ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় বিবর্ণ কৃষকের স্বপ্ন

আহমাদ সোহান সিরাজী, সাভার (ঢাকা)
 | প্রকাশিত : ১৫ মে ২০২২, ১১:৩৯

ঢাকার ধামরাইয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৫৮টি কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা প্রায় শতাধিক। বিভিন্ন সময় এসকল অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে ভাটাগুলোকে আর্থিক জরিমানাসহ ভাটার বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে দিয়ে সেগুলোর কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিল পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও সে সকল ইটভাটার মালিকরা ভাটাগুলোতে ইট তৈরির কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইট তৈরির মৌসুমের শেষ সময়ে এসকল অবৈধ ইটভাটার বেশ কয়েকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ভাটার চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় ওইসব এলাকার ধানি জমি নষ্ট হয়ে ধান চিটা হয়ে যাওয়ায় পাশাপাশি ধান গাছ পুড়ে গেছে। এসকল ইটভাটার কারণে উপজেলার গাংগুটিয়া এবং কুশুরা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ১৭০০ শতাংশ জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে গত রবিবার (৮মে) ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী কৃষকেরা।

এ ঘটনায় শনিবার (১৪মে) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ধামরাই উপজেলার মধুডাঙ্গা এলাকার মেসার্স মদিনা ব্রিকস, মেসার্স খান ব্রিকস, মেসার্স নূর ব্রিকস, মেসার্স রাহাত ব্রিকস ও মেসার্স মক্কা মদিনা ব্রিকসের পাশের ধানের জমিগুলোর ধান গাছের পাতা পুড়ে গেছে। ধানগুলোর অধিকাংশ চিটা হয়ে গেছে। মেসার্স মক্কা মদিনা ব্রিকসের পাশে জমি থেকে ধান কেটে ফাঁকা স্থানে ধান মাড়াই করে ঝাড়ছেন কৃষকেরা। মলিন মুখে কাজ করছেন তাঁরা। কৃষকদের অভিযোগ ইটভাটাগুলোর চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ার তাপে কেটে আনা ধানের মধ্যে বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে।

পঞ্চাশোর্ধ কৃষক ফজল হকের সাথে কথা হলে তিনি ঢাকা টাইমসকে জানান, ঈদের ২ দিন আগে রাতের বেলা ইট পোড়ানোর কাজ শেষ হওয়ায় মক্কা মদিনা ব্রিকসের মালিক ভাটার আগুন নিভিয়ে দেয়। পরদিন সকালে তিনি তার জমিতে এসে দেখেন জমির অধিকাংশ ধান গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। পরে সেই ধান কেটে গত বুধবার ধান মাড়াই ও ঝাড়ার পর দেখতে পান অধিকাংশই চিটা হয়ে গেছে।

তিনি আরও জানান, তার জমির পাশেই আরেক কৃষক মো. হুমায়ুনেরও আড়াই বিঘা জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে।

এই ভাটার কাছাকাছিই অন্যান্য ভাটাগুলোর অবস্থান। সেখানে কেবল মেসার্স রাহাত ব্রিকস ছাড়া বাকি ইটভাটাগুলোর আগুন নিভিয়ে দিয়েছে মালিক পক্ষ। এসকল ভাটার কাছাকাছি ৬০ বিঘা জমিতে ব্রি-২৯ জাতের ধান লাগিয়েছেন মো. মুক্তার আলী। তাঁর দাবি প্রজেক্টের অধিকাংশের ধানই নষ্ট হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ৬০ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করে বিরাট বিপদে পরেছি ভাই। সব ধান গাছ পুড়ে গেছে। কোন ধান নাই সব চিটা।

পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযুক্ত এই ৫টি ইটভাটাকে মোট ২৪ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করেন পাশাপাশি ইটভাটার আগুন নিভিয়ে এবং স্কেভেটর দিয়ে স্থাপনা ভেঙে ভাটাগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

ভূক্তভোগী কৃষক চাঁন মিয়া বলেন, তারা তো পুরাপুরি ভেঙে দেয়না। খালি একটু কোনাকানচি ভাঙে। ভাটা মালিকেরা পরদিনই তা ঠিকঠাক করে ইট পুড়ানো শুরু করে। পরে তো আর কারো কোন খোঁজ থাকে না।

মেসার্স মক্কা মদিনা ব্রিকসের ব্যবস্থাপক মো. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ভাটাগুলোর ইট পুড়ানো এখন শেষ। এই সময় চুল্লির আগুন নেভানোর আগে চুল্লির নিচে পানি দিতে হয়। তা না দিলে ভাটার চিমনি দিয়ে কয়লার আগুনের যে ফুলকি বের হয় সেগুলো বাতাসে যে জমিতে গিয়ে পরে সে জমিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চুল্লি নেভানোর ১৫ দিন আগেই পানি দিয়েছিলাম। অনেকেই সেটি করেন না তাই জমির ধানগুলো নষ্ট হয়েছে। তবুও আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জানিয়েছি যেসকল ভাটা দায়ী হবে তাদের সাথে আমরাও ক্ষতিপূরণ দিতে প্রস্তুত।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী ঢাকা টাইমসকে বলেন, কয়েকটি ইটভাটার চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও কালো ধোঁয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ধানের জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রকৃত তথ্য পাওয়ার পর এব্যাপারে কৃষকদের সহায়তা এবং অবৈধ ইটভাটার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুল হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ওইসব এলাকায় গিয়ে প্রকৃতপক্ষে কতটুকু জমির ধান ক্ষতি হয়েছে তার একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে আগামী সোমবার (১৬মে) ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাথে বসে সেই প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :