বুদ্ধপূর্ণিমার মাহাত্ম্য কী?

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২২, ১২:০০ | আপডেট: ১৫ মে ২০২২, ১২:২৭

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

মহামতি গৌতম বুদ্ধ। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তাকে সেই বোধিপ্রাপ্ত বা দিব্য শিক্ষক মনে করেন, যিনি সম্পূর্ণ বুদ্ধত্ব অর্জন করেছেন। তিনি নিজের অন্তর্দৃষ্টির কথা সকলকে জানিয়ে চেতন সত্তাদের পুনর্জন্ম ও দুঃখের পরিসমাপ্তি ঘটাতে সাহায্য করেছেন।

‘আত্মানং বিদ্ধি’ অর্থাৎ নিজেকে জানো। সেই ব্রহ্ম তথা নিজেকে জানতেই রাজপুত্র সিদ্ধার্থ একদিন ঘরসংসার, নগর, প্রজা ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন রাস্তায়। কপিলাবস্তুর রাজপরিবারে তাঁর জন্ম। রাজা শুদ্ধোদন ও রানি মায়াদেবীর কোল আলো করে বাগানের শালবৃক্ষের ছায়ায় জন্ম হয়েছিল তাঁর।

ছোট থেকেই বালক সিদ্ধার্থ যেন অন্য ধাতুতে গড়া। অল্প বয়সে প্রায় সমস্ত ক্ষত্রিয়দের মতোই তাঁরও অস্ত্রবিদ্যায় হাতে খড়ি হয়। খেলাধুলা ও কৃষিকাজেও অল্প সময়েই অর্জন করেন দক্ষতা। তবু সংসারে থেকেও যেন ছোট্ট ছেলেটার ছিল অদ্ভুত নির্লিপ্তি। মাঝেমধ্যেই আনমনে ধ্যানমগ্ন হয়ে যেত। তা যেন ছিল সার্বিক তথাগত হয়ে ওঠারই প্রস্তুতি।

তারপর এক রাতে স্ত্রী ও সদ্যজাত সন্তানকে ঘুমন্ত রেখে ঘর ছাড়লেন সিদ্ধার্থ। ছয় বছর ধরে চললো কঠোর তপস্যা। তারপর একদিন নিরঞ্জনা নদীর তীরে বটবৃক্ষের তলায় বোধিপ্রাপ্ত হলেন তিনি। সেদিনও ছিল এক বৈশাখী পূর্ণিমার রাত। আকাশে তখন পূর্ণ চাঁদ। নতুন করে জন্ম হলো ৩৫ বছরের সিদ্ধার্থের। না, তিনি আর সিদ্ধার্থ নন। তিনি তখন তথাগত।

বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেন, গৌতম বুদ্ধের জীবনকাহিনী, কথোপকথনের বিবরণ, সন্ন্যাস নিয়মাবলি তার মৃত্যুর পর থেকে সঙ্গায়নের মাধ্যমে বুদ্ধের বাণী সংরক্ষণ করে রাখতেন। ইতিহাসে এরকম এই পর্যন্ত ছয়টি সঙ্গায়ন হয়েছে।

প্রথম সঙ্গায়ন হয়েছিল বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের পর রাজা অজাতশত্রুর পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতের সপ্তপর্ণী গুহায়। দ্বিতীয়টি হয়েছিল বৈশালীতে কালাশোকের পৃষ্ঠপোষকতায়। তৃতীয়টি হয়েছিল অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায়। এভাবে বড় বড় রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ত্রিপিটক বুদ্ধবচন সংরক্ষিত হয়ে আসছে। সনাতন ধর্ম মতে, গৌতম বুদ্ধ ভগবান বিষ্ণুর অবতার।

বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমা তিথি তাই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই দিনে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা স্নান করে পট্টবস্ত্র পরেন। তারপর চলে বুদ্ধের আরাধনা ও নানা মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান।

মনে করা হয়, এই দিনে বুদ্ধের উপাসনা করলে পার্থিব দুঃখ-কষ্ট থেকে পরিত্রাণ মেলে। বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে এই দিনটা তাই আলোর দিন। এ দিনটাকে আলোর উৎসব হিসেবেই পালন করেন তাঁরা। গরিব-দুঃখীদের পেট ভরে খাওয়ান অনেকে। করেন দান-ধ্যানও।

শুধু বৌদ্ধদের কাছেই নয়, হিন্দুদের কাছেও এ দিনটির মাহাত্ম্য কিছু কম নয়। হিন্দু ধর্ম অনুসারে, বিষ্ণুর নবম অবতার গৌতম বুদ্ধ। এর পাশাপাশি চন্দ্রদেবের পূজারও রেওয়াজ রয়েছে এই দিনে।

প্রচলিত বিশ্বাস, বুদ্ধদেবের পাশাপাশি এই দিন চন্দ্র ও বিষ্ণুর উপাসনা করলে ইচ্ছাপূরণ হবেই হবে। বৌদ্ধ বিহারসহ বেশ কিছু জায়গায় এদিন মেলা বসে। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে চলে তিনদিনব্যপী অনুষ্ঠান।

‘বৌদ্ধং শরণং গচ্ছামি’—বৌদ্ধধর্মের মূল। এ ধর্মে কোনো জাতিভেদ নেই। হিংসার কথা নেই। কেবল বুদ্ধের শরণ নেয়াটুকুই সার। কেউ কেউ মনে করেন, বুদ্ধ কেবল তথাগত নন, তিনি যেন চেতনারই দ্যোতক। আর সেই চর্চার শরণে যাওয়ার কথাই বলে গিয়েছিলেন বুদ্ধদেব।

সেই সময়ে দাঁড়িয়ে সাম্যবাদী সমাজব্যবস্থা প্রচলন করতে চেয়েছিলেন তিনি। শুরু করেছিলেন সংঘের। সর্বজীবে মৈত্রীকেই মুক্তির পথ হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন তিনি। মানবতার সেই অবিচল ধর্মের কথাই বলতে চেয়েছিলেন মহামতি বুদ্ধ।

তবে আজ বোধহয় সেই পন্থার কথা ভুলতে বসেছে বিশ্ব। অন্তত চারদিকে যেভাবে হিংসার উন্মত্ততা সেদিকে তাকালে তেমনটাই মনে হয়। এই বুদ্ধপূর্ণিমার দিনে মানুষের মনে সেই শুভবুদ্ধিটুকুই ফিরুক।

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/কেআর/এফএ)