কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস নেই পাঁচ দিন: বৈধ গ্রাহকদের ঘাড়ে অবৈধ সংযোগের খড়গ

প্রকাশ | ১৫ মে ২০২২, ২১:৪৪ | আপডেট: ১৫ মে ২০২২, ২১:৫৭

রেজাউল করিম হীরা, ঢাকাটাইমস
প্রতীকী ছবি।

গত পাঁচ দিন ধরে গ্যাস নেই রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে। বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ সংযোগ বেশি হওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তিতাস। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বৈধ গ্রাহকরা। যদিও বৈধ গ্রাহকদের কাছে ৬৭ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে দাবি করেছে তিতাস।

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারা জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় গ্যাস বন্ধ করে দেয় তিতাস। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার কয়েক লাখ বাসিন্দা। এমনকি বৈধ সংযোগধারীদের যারা নিয়মিত গ্যাসের বিল পরিশোধ করে আসছেন, তারাও পড়েছেন বিপাকে। এই এলাকার বৈধ মোট ১২ হাজার গ্রাহকের এখন লাইন কাটা। এ অবস্থায় কেউ লাকড়ির চুলায় রান্না করছেন, কেউবা হোটেল থেকে খাবার এনে খাচ্ছেন। এই সুযোগে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কাঠ আর কেরোসিনের দামও বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি হোটেলের খাবারের দাম বেড়ে গেছে। ফলে সেখানকার বাসিন্দারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দা মাহমুদুল করিম বলেন, ‘কোনো কিছু না জানিয়েই হঠাৎ করে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে তিতাস। এর আগে আমাদের কোনো নোটিসও দেওয়া হয়নি। অবৈধ সংযোগ বন্ধ করতে গিয়ে বৈধ গ্রাহকদেরও এখন বিপাকে পড়তে হয়েছে। গত পাঁচ দিন ধরে পুরো কামরাঙ্গীরচরে গ্যাস নেই। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারো কোনো মাথাব্যথাও নেই।

‘আর এই সুযোগ নিয়েছে এখানকার কেরোসিন ও লাকড়ি বিক্রেতারা। হোটেলেও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খাবার—যোগ করেন তিনি’

পূর্ব রসূলপুরের বাসিন্দা বাবু বলেন, ‘আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসারে বেতনের অর্ধেক যায় বাসা ভাড়ায়। আর এখন অর্ধেক চলে যাচ্ছে খাবারের ব্যবস্থা করতে গিয়ে। গত পাঁচ দিন গ্যাস না থাকায় কখনো হোটেল থেকে কখনো বা লাকড়ির চুলায় খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এতে অনেক টাকা চলে যাচ্ছে।’

এদিক গ্যাস না থাকার সুযোগে স্থানীয় দোকানদাররা কেরোসিনের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন বাসিন্দারা। তারা কোথাও লিটার ৮০ তো কোথাও ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আলাউদ্দিন নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, সারাদিন অফিসে কাজ করে আবার খাবারের চিন্তা করতে হচ্ছে। কেরোসিনের চুলা কিনেও আরেক বিপাকে পড়লাম। সব জায়গায় কেরোসিনও পাওয়াও যাচ্ছে না, পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত দাম চাচ্ছে। আমরা তো নির্দিষ্ট টাকায় সংসার চালাই। এই অবস্থায় বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসবে? কে দেখবে আমাদের এই ভোগান্তি?’

আব্দুল আজিম নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার লাইন বৈধ এবং কোনো বকেয়া নেই। সমস্যা হচ্ছে অনেক অবৈধ লাইন আছে। কিন্তু দোষ কার? অবৈধ লাইনের কারণে আমাদের বৈধ লাইনও কেটে দিয়েছে। এটা কেমন যুক্তি?’

‘১০ মে বিকাল ৫টা থেকে গ্যাস নেই। লাকড়ি দিয়ে রান্না করছেন আজিম। এখন লাকড়িও পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও দাম অনেক বেশি। আগে যেখানে ছিল ১৫ টাকা কেজি, এখন তা ৬০-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।’

আজিম বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। এক-দুই বেলা খাবার কিনে খাওয়া যায়, কিন্তু প্রতিদিন তো কিনে খাওয়া সম্ভব না। হোটেলে আবার ৫ টাকার ভাতের প্লেট এখন ১৫ টাকায় উঠেছে। শুধু ভাত না, সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।’

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, বৈধ সংযোগের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অবৈধ সংযোগ কামরাঙ্গীরচরে। আর বৈধ গ্রাহকদের কাছে ৬৭ কোটি টাকা বকেয়া। এসব অভিযোগে গত ১০ মে বুধবার সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীর চরের সব গ্যাস লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।

তিতাসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অবৈধ গ্রাহকদের শায়েস্তা করতে গ্যাসের ভাল্ব খুলে নিয়ে আসা হয়েছে। এজন্য বৈধদের গ্যাসও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে কামরাঙ্গীরচরে তিতাসের গ্রাহক ১২ হাজারের মতো।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা বলেন, ‘সেখানে বৈধ গ্রাহকের চেয়ে অবৈধ গ্রাহকের সংখ্যা বেশি। অবৈধ সংযোগ কেটে দিলে পরদিনই আবার তা স্থাপন করে ফেলছে। বৈধ গ্রাহকদের অনেকের কাছে আমাদের বকেয়া প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। আমরা বেশি দামে বিদেশ থেকে এলএনজি এনে এভাবে তো গ্যাস চুরি করতে দিতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে সব লাইন বন্ধ করে দিয়েছি।’

বৈধ গ্রাহকদের কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সোমবার (আজ) স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মিটিং আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তারা একটি কমিটি গঠন করবেন। সেই কমিটির মাধ্যমে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করবেন, বকেয়া আদায় করে দেবেন, তারপর আমরা লাইন দিয়ে দেব। এভাবে দিনের পর দিন সরকারি সম্পত্তির অপচয় করা যায় না।’

(ঢাকাটাইমস/১৫মে/আরকেএইচ)