যেভাবে দেশে ফেরানো যাবে পি কে হালদারকে

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২২, ০২:১০ | আপডেট: ১৬ মে ২০২২, ১৪:৩১

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশের আর্থিক খাতের অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের অন্যতম হোতা প্রশান্ত কুমার হালদারকে (পি কে হালদার) গ্রেপ্তার করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। আটকের পরই এখন সবার কৌতূহল আলোচিত এই অর্থ পাচারকারীকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, কিংবা কীভাবে ফেরানো হবে। কত দিন লাগবে। 

বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা পাচার করে ভারতে আত্মগোপন করা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদারকে শনিবার পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার করে ইডি। একই সঙ্গে তার পাঁচ সহযোগীও ধরা পড়েন। শিবশঙ্কর নাম নিয়ে পি কে হালদার ভারতে অবস্থান করছিলেন।

আটকের পর ইতোমধ্যে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে আলোচিত ব্যাংক লুটেরা পি কে হালদারকে। এদিকে দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, পিকে হালদারকে শেষ পর‌্যন্ত বাংলাদেশে হস্তান্তর করতে চায় তারা।

ইডির ওই কর্মকর্তা ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফকে জানায়, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ২০১৩ সালের প্রত্যর্পণ চুক্তি বা বন্দী বিনিময়

চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে তারা হস্তান্তর করতে চায়।
পিকে হালদারকে ভারত থেকে দেশে ফেরাতে বহিঃসমর্পণ বা বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনেই সুযোগ দেখছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ঊর্ধ্বতন অনেক কর্মকর্তা। সরকারিভাবে বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুসরণ করেই তাকে দেশে ফেরত আনার কথাও জানান তারা।

স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের জানান, ‘পি কে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে এসেছে, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে তাকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছিল। ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা ছিল। খুব দ্রুত বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’ 

বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশনের দেওয়া তথ্যের ওপর অনুসন্ধার করে ভারতের ইডি অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারকে ধরেছে বলে ঢাকা টাইমসকে জানান দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে খুরশীদ আলম বলেন, ‘সরকারের কাছে ভারত থেকে প্রতিবেদন পাঠালে পি কে হালদারকে ফেরত আনার বিষয়ে কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া ভারতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তারা তাকে কি শাাস্তি দেয় সেটা একটা বিষয়। সেটার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।’ তবে বহিঃসমর্পণ চুক্তির মাধ্যমে তাকে ফেরত আনতে তিন থেকে ছয় মাসের মতো লাগবে বলে জানান দুদকের এই আইনজীবী। 

পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মোট ৩৭টি মামলা করেছে দুদক। এর মধ্যে একটি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, তিনটি মামলার তদন্ত চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি ৩৩টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয় ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি। রেড অ্যালার্ট জারির ষোল মাস পর তাকে ভারতে দেশটির অর্থসংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী ইডি হাতে গ্রেপ্তারের খবর এল। তার সঙ্গে ধরা পড়েছেন পাঁচ সহযোগীও।

পি কে হালদার চক্রের বিরুদ্ধে দুদকের মামলাগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পিকে হালদারকাণ্ডে মামলাগুলো হওয়ার পর বিভিন্ন সময়ে পিকে সিন্ডিকেটের ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে দুদক। তাদের মধ্যে ১১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।’

সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পি কে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। ৬৪ জনের বিদেশ গমনে আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। আর এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। 

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/মোআ)