সংকটে চা শিল্প, উৎপাদন বাড়লেও বাড়ছে না বাগান

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২২, ১১:৪২ | আপডেট: ১৬ মে ২০২২, ১১:৪৫

আব্দুল বাছিত বাচ্চু, মৌলভীবাজার

দেশে এমন একটা সময় ছিলো দেশের বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা চা বাগান করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলেন। দেশের দ্বিতীয় রপ্তানি পণ্য হিসেবে চায়ের ব্যবসা তাদের পছন্দের তালিকায় প্রথম ছিলো। ইস্পাহানি, এইচআরসি, ইসলামগ্রুপ ট্রান্সকম, হা-মীমসহ নামি গ্রুপের চা বাগানে রয়েছে সিলেট বিভাগেও। এখন তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দেশের শিল্পপতি কোটিপতিরা এখন আর  চায়ের বাগান করতে চান না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অতিরিক্ত খরতাপ, অনাবৃষ্টি, উত্তরাঞ্চলে অপরিকল্পিত চায়ের চাষাবাদ, উৎপাদিত চায়ের প্রকৃত মূল্য না পাওয়া এবং দেশে দিন দিন বনভূমি কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

ফলে বিশ্বের মধ্যে উৎপাদনে দশম আর দেশের দ্বিতীয় রপ্তানিপণ্য চা শিল্প এখন এক  কঠিন সময় অতিক্রম করছে। প্রতিবছর চায়ের  উৎপাদন বাড়লেও হচ্ছে না চাষাবাদের সম্প্রসারণ। চা-বাগান সংশ্লিষ্টরা এই শিল্পকে ঠিকিয়ে রাখতে চায়ের প্রকৃত মূল্য পাওয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়াসহ সমস্যা দূরীকরণে বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিবর্তে চা শিল্পকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি চায়ের উৎপাদন খরচ কমাতে সার কীটনাশকের ভর্তুকি বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বৃটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির সময় ১৮৩৪ সালের দিকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলায় চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। পরে চট্টগ্রাম জেলায় তা সম্প্রসারিত হয়। বর্তমানে দেশে বানিজ্যিক চা বাগানের সংখ্যা ১৬৬ টি। আর সিলেট অঞ্চলে চা বাগানের সংখ্যা ১৩৭ টি। চায়ের রাজধানী শুধু মৌলভীবাজার জেলায় আছে ৫৮ টি চা বাগান। এর বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বানিজ্যিক এবং  উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলায় ব্যক্তি পর্যায়ে চায়ের চাষবাদ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ চা মৌসুমে দেশে ৯৫ দশমিক ৬০ মিলিয়ন কেজি এবং ২০২১-২২ মৌসুমে ৯৬ দশমিক ৭০ মিলিয়নকে জি চা উৎপাদিত হয়। যাহা এখন পর্যন্ত দেশে চায়ের সর্বোচ্চ উৎপাদন রেকর্ড।
ফিনলে টি কোম্পানির ভাড়াউড়া চা বাগানের জেলারেল ম্যানেজার (জিএম) মি. শিবলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশে বর্তমানে চা চাষ সম্প্রসারণে বড় বাধা প্রয়োজনীয় টিলা তথা বনভূমির অভাব। পাশাপাশি চায়ের বাজার মূল্য এখন  অনেক কম।
তিনি মনে করেন, উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড় জেলায় চায়ের চাষ হয় ধানের মতো ব্যক্তিপর্যায়ে। সেখানের চাষিরা ধান হয় না এমন কৃষি জমিতে চা লাগিয়ে কাচি ( কাস্তে) দিয়ে তা কাটে। এতে তাদের  উৎপাদন খরচ কম হয়। এসব চায়ের গুণগত মান নিম্নপর্যায়ের হওয়ায় ১৫০-৬০ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি করে দেয়। যেকারণে আমরা চায়ের প্রকৃত মূল্য পাই না।
বাংলাদেশ  টি এসোসিয়েশন নর্থ সিলেট ভ্যালির চেয়ারম্যান এবং খাদিম টি কোম্পানির জেলারেল ম্যানেজার (জিএম) নোমান হায়দার চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে জানান, দেশে এখন  ভারতীয় চায়ের বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় চায়ের প্রকৃত মূল্য মিলে না। ফলে মালিকপক্ষ এখন আর চা চাষে আগ্রহী হয় না।
তিনি আরও জানান, চা চাষে প্রচুর ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএস পি)  এবং মিউরেট অব পটাস ( এমওপি) সারের প্রয়োজন হয়। এছাড়া আছে কিটনাশকের প্রয়োজনীয়তা। বাজারে এসব সারের প্রচুর দাম। তাই চা চাষকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিলে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়বে।  তখন মালিকপক্ষ চা চাষে আগ্রহী হবে।
বাংলাদেশ টি রিচার্স ইন্সটিটিউট (বিটিআরআই) শ্রীমঙ্গলের পরিচালক মি. মোহাম্মদ আলী ঢাকা টাইমসকে বলেন, দেশে চায়ের চাষ সম্প্রসারণে বড় বাধা জমি। চায়ের জন্য প্রয়োজন টিলা রকমের জমি যেখানে থাকবে প্রখর রৌদ্র আর অতি বৃষ্টি। পাশাপাশি কম টেম্পারেচার এবং বাতাসের আদ্রতা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন রোধ বৃষ্টির কোনো হিসেব নেই।

উত্তরাঞ্চলের অপরিকল্পিত চায়ের চাষ বিষয়ে তিনি বলেন, সেখানে চা চাষ একধরনের কৃষি উৎপাদনের মতো। সেখানের কৃষকেরা নিজেদের পরিত্যক্ত জমিতে চায়ের চাষ করে। দুটি পাতা একটি কুড়ি মানে মানসম্পন্ন চা। এ বিষয়ে তাদের অনেক প্রশিক্ষণ দিচ্ছি কিন্তু তা না মেনে তারা ধানের মতন ক্যাচি দিয়ে চা গাছের আগা কেটে বিভিন্ন  মিলে বিক্রি করছে। ফলে চায়ের গুণগত মান বজায় থাকছে না। পাশাপাশি বাজারে চায়ের  দর পড়ে যাচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/এসএ)