‘শ্বেতপত্রটি সারবত্তাহীন, কমিশন বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক চিহ্নিতের চেষ্টা করছে’

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২২, ১৬:৩৬ | আপডেট: ১৬ মে ২০২২, ১৬:৪৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত “গণ কমিশন” শতাধিক ইসলামি বক্ত ও আলেমদের নিয়ে যে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে সেটি আলেম সমাজের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ।

তারা বলছেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের উদ্যোগে গঠিত কমিশনের শ্বেতপত্রটি সারবত্তাহীন। আলেমরা জনমানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা মানুষকে কল্যাণের পথে ডাকেন। তাদের ধর্মব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে এই কমিশন কোটি মানুষের সঙ্গে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। কমিশন বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দেশ হিসেবে বিশ্বে চিহ্নিতের চেষ্টা করছে। সাম্প্রদায়িক সংঘাতের সঙ্গে আলেমদের যোগ টানা হচ্ছে। অথচ এ ধরনের সংঘাতগুলো রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়িক নয়।  আলেমরা সব সময় শান্তির পক্ষে অবস্থান নেন, সংঘাতের পক্ষে নয়।

সোমবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিতর্কিত সংগঠন ঘাদানিক এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাসের উদ্যোগে গঠিত “বাংলাদেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে “গণ কমিশন” নামে একটি কথিত কমিশন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। “বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন” শীর্ষক কথিত শ্বেতপত্রটি গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোড়ক উন্মোচন করেছেন। এর দুইমাস পরে গত ১২ মে দুপুর বারোটায় এই শ্বেতপত্রটি দুদক চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রকাশের সঙ্গে জড়িতদের ভাষ্যমতে এখানে ১১৬ জন আলেম ও ১০০০ মাদ্রাসা সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ১১৬ জন আলেমের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে ধর্মব্যবসায়ী বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাদের ভাষ্যমতে ধর্মব্যবসায়ীদের অপরাধের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে।

এই শ্বেতপত্র জনসাধারণে প্রকাশ করা হয়নি। ফলে এই বিষয়ে আমাদের নির্ভর করতে হয়েছে তাদের মিডিয়ায় ব্রিফিং থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপরে। যদি তাদের উদ্দেশ্য সৎ হত এবং তাদের সৎসাহস থাকত তাহলে উপস্থাপিত শ্বেতপত্র জনসম্মুখে উন্মুক্ত করে দিতে পারতো। অন্তত যাদের ব্যাপারে তারা অভিযোগ উত্থাপন করেছে, তাদেরকে প্রতিবেদন পাঠাতে পারতো। কথিত শ্বেতপত্র নিয়ে তাদের একধরণের রাখঢাক-লুকোচুরি ও মিডিয়াবাজী প্রমাণ করে যে, তারা সারবত্তাহীন অভিযোগ পত্র নিয়ে নাগরিকদের মাঝে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে।

তারা বলেন, কথিত এই শ্বেতপত্রে প্রধানত টার্গেট করা হয়েছে জনসম্পৃক্ত উলামাদেরকে, যারা দেশব্যাপী ওয়াজ-মাহফিলের মাধ্যমে মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করেন। ওয়াজ করা ও মানুষকে সৎপথের দিকে আহবান করা উলামাদের শরয়ী দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে উলামাদের একনিষ্ঠতা, নিরবচ্ছিন্নতা, স্বার্থহীনতা, কল্যাণকামিতা এবং মানুষের চরিত্র, ভাষা ও মনস্তত্ব বুঝে আকর্ষণীয়পন্থায় ওয়াজ উপস্থাপনের দক্ষতার কারণে কোটি-কোটি মানুষ উলামাদের বক্তব্য শোনেন। তাদের প্রতি ভক্তি-ভালোবাসা রাখেন। তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘এই যে কোটি কোটি মানুষের উদ্যোগ-আয়োজন, উৎসাহ, আগ্রহ ও ভালোবাসা তাকে ধর্মব্যবসা বলে অবহিত করা দেশের কোটি কোটি নাগরিকের সঙ্গে ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। উলামাদেরকে আর্থিক লেনদেনের বিষয়কে তদন্তের বিষয় বানানো ঘৃণ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপকর্ম ছাড়া কিছু নয়।’

‘কথিত শ্বেতপত্রের প্রধান উপজীব্য করা হয়েছে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে এবং সে জন্য দায়ী করা হয়েছে উলামায়ে কেরামকে। এখানে বিবেচ্য বিষয় দুটি। এক. বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা আসলেই বিরাজমান কি না এবং দুই. সাম্প্রদায়িক সংঘাতের নামে যা দেখানো হয় তাতে আদৌ ধর্মের কোনো সংযোগ আছে কি না এবং ওলামায়েকেরাম সেখানে কোন ধরনের ভূমিকা পালন করেন?

সত্যনিষ্ঠ যে কেউ স্বীকার করবেন যে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব নেই। এখানে হাজার বছর ধরে মন্দির-মসজিদ একসাথে অবস্থান করছে। হাজার বছর ধরে সকল ধর্মের ধর্ম-কর্ম পাশাপাশি পালিত হয়। এখানে এটা চিরসত্য।

হ্যাঁ, কালে-ভাদ্রে সম্প্রদায়কেন্দ্রীক কিছু অশান্তি দেখা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সত্য হলো, এর প্রতিটিতে স্থানীয় রাজনীতি, ভূমি ও স্বার্থের প্রেক্ষিতে সৃষ্ট সংঘাতকে ধর্মীয় চেহারা দেয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী যে, প্রতিটি ঘটনায় উলামা কেরাম বরাবরই শান্তির পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।

ঘাদানিক এত আয়োজন করে বিশাল রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ঘাদানিককে অর্থায়ন করে কারা? কোন স্বার্থে কোন শক্তি ঘাদানিক পোষে? ঘাদানিকের আয়-ব্যয়ের হিসাব কী কোথাও প্রকাশিত হয়েছে বা আদৌ কি তাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জনতা জানে? এ প্রশ্নের জবাব ঘাদানিককে দিতে হবে।

এ সময় তারা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের সর্বধারার ওলামায়ে কেরাম ও নাগরিক সমাজের পক্ষে আট দফা দাবি উত্থাপন করেন।

দাবিগুলো হলো—

১) যারা কথিত শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে দেশের সম্মানিত আলেমদের সম্মানহানি করেছে, আলেমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, দেশবাসীর সামনে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে; তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২) যারা বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করে দেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে চায়, তাদের কার্যক্রমকে তদন্তের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের গতিবিধিকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনতে হবে।

৩) যারা মাঠ প্রশাসনের এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের নামে উদ্দেশ্যমূলক অবৈধ তৎপরতা চালিয়েছে, তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

৪) দেশের সম্মানিত আলেমদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

৫) কারাবন্দী সকল মজলুম আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।

৬) ওয়াজ মাহফিল নিছক একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তাই সারা দেশে ওয়াজ মাহফিল সব প্রশাসনিক বিধি নিষেধের আওতামুক্ত রাখতে হবে।

৭) সারা দেশের আলেম ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে সকল প্রকার হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৮) আল্লাহ, রাসূল (স.), ধর্মীয়-রাজনৈতিক ও সামাজিক সম্মানীয় ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে মানহানিকর শব্দের ব্যবহার নিষিদ্ধে আইন করতে হবে এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/কেআর/ইএস)