তিন বান্ধবীর পেছনেই ৮০০ কোটি টাকা খরচ পি কে হালদারের

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২২, ১৬:৪৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

দেশের আর্থিক খাতের অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাটের অন্যতম হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) লোপাটের টাকা দিয়ে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার তথ্য পাওয়া গেছে। লোপাট করা টাকার ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা শুধু তিনজন বান্ধবীর পেছনে খরচ করেছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তথ্যে উঠে এসেছে।

ঘনিষ্ঠ এই তিন বান্ধবীকে পি কে হালদারের ‘প্রেমিকা’ বলেও উল্লেখ করেছে দুদক। তারা হলেন- অবন্তিকা বড়াল, নাহিদা রুনাই ও শুভ্রা রানী ঘোষ। তারা তিনজনই এখন কারাগারে আছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে গ্রেপ্তার তার তিন বান্ধবীর জবানিতে মিলছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই তিন নারীকে বিলাসী জীবনে আকৃষ্ট করে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতেন পি কে। বিনিময়ে তাদের কাউকে ফ্ল্যাট, গাড়ি, দামি উপহার ও অর্থ দিয়েছেন। অসংখ্যবার তাদেরকে নিয়ে গেছেন বিদেশ ভ্রমণে। তার প্রতিষ্ঠানে দিয়েছেন বড় পদের চাকরি।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে প্রকারেই হোক, অর্থ লোপাট আর প্রেমিকাদের নিয়ে ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকাই ছিল পি কে হালদারের অন্যমত নেশা। নারী সঙ্গ ছাড়া তিনি বিদেশ যেতেন না।

বান্ধবীদের মধ্যে নাহিদা রুনাইকে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে উপহার দিয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স কোম্পানি। অবন্তিকাকে উপহার দিয়েছেন পিপলস লিজিং। আর এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পাচার করেছেন ৩৬ কোটি টাকা।

রুনাই চালাতেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ও ফাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। রুনাইয়ের অসীম ক্ষমতার উৎস ছিল পি কে হালদার। তাই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কয়েক বছরে তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৭২ কোটির টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নাহিদা রুনাইকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ দিয়েছিলেন পি কে হালদার। তাকে নিয়ে ভারতে গেছেন ২২ বার। আর সিঙ্গাপুরে গেছেন ২৫ বার। তাকে ২০ কোটি টাকা দেয়ার তথ্যও পেয়েছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা।

এছাড়াও অবন্তিকার কর্তৃত্বে চলত পিপলস লিজিং। তাকে নিয়ে অসংখ্যবার সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড গেছে পি কে। অবন্তিকাকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পাঁচ কোটি টাকায় ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পি কে হালদারের অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে।

এছাড়া অন্যান্য বান্ধবীদের মধ্যে অনন্দিতাকে রাজধানীর উত্তরায় নয় তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করে দিয়েছেন। সুস্মিতা সাহাকে দেওয়া হয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেনামি ঋণ, পাপিয়া ব্যানার্জি ও মমতাজের প্রত্যেককে দেওয়া হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা করে বেনামি ঋণ।

আর দুর্নীতির আরেক সহযোগী ও বান্ধবী শুভ্রা রানী ঘোষকে অস্তিত্বহীন কোম্পানি ওয়াকামা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান করেছেন পি কে। ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

নাহিদা রুনাইকে গত বছরের ১৬ মার্চ রাজধানীর মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ১৩ জানুয়ারি নিজ ফ্ল্যাট থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন অবন্তিকা। শুভ্রা রানী ঘোষকে গ্রেপ্তার করা হয় গত বছরের ২২ মার্চ। ওই দিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছিলেন তিনি।

এছাড়াও অসংখ্য নারীর সঙ্গে কোটি টাকা লোপাটের অন্যতম হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/কেআর/কেএম)