ইতিবাচক পথেই হাঁটছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

প্রকাশ | ১৬ মে ২০২২, ১৮:৪৩ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১৬:০০

অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা

স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনার শাসনামলে গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের নানা ক্ষেত্রে আগের তুলনায় প্রভূত উন্নতি হয়েছে।

পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের পাশাপাশি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী টানেল, ঢাকায় মেট্রোরেলসহ দেশি-বিদেশি অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে চলেছে আরও ১০-১২টি মেগা প্রকল্প। এসব প্রকল্প পুরোদমে চালু হলে প্রভূত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে।

স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশের বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটিতে। অর্থাৎ বাজেটের আকার বেড়েছে ৭৬৮ গুণ।

সবমিলিয়ে বিশালাকার ধারণ করা বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতি ইতিবাচক পথেই হাঁটছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা।

সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের অধীনে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা অর্থনীতিবিদ সায়মা হক শ্রম অর্থনীতি, উন্নয়ন অর্থনীতি, কৃষি অর্থনীতি, অ্যাপ্লায়েড ইকোনমেট্রিক্সের ওপর বিশেষজ্ঞ।

ঢাকাটাইমসের সঙ্গে আলাপচারিতায় এই অর্থনীতিবিদ আলোকপাত করেছেন বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, মাথাপিছু গড় আয়, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, করণীয়সহ সার্বিক বিষয়ে। এসব বিষয়ে ড. সায়মার বক্তব্য তুলে ধরা হলো—

অর্থনীতিতে ‘ইতিবাচক’ শব্দটি ব্রড অ্যঙ্গেলে (বিশাল পরিসর) বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আমরা বেশ কিছু সূচকে ইতিবাচক দেখছি। পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক একটি ট্রেন্ডও (ধারা) দেখতে পাচ্ছি।

সার্বিকভাবে বলতে গেলে, গত ৫০ বছরের পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দিকে ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে বিশেষ করে জাতীয় আয় বেড়েছে, দারিদ্রতা কমেছে, আর্থ-সামাজিক বিভিন্ন সূচক যেমন, মাতৃমৃত্যু, শিশুমৃত্যু, পুষ্টি, শিক্ষার বিভিন্ন সূচকে বেশ উন্নয়ন হয়েছে। আমি মনে করি, এই বিষয়গুলোতে তর্ক করার কিছু নেই।

তবে একটি বিষয় সামনে আসে যখন প্রশ্ন তোলা হয়, অর্থনীতিতে বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য কী এবং আমরা কতদূর যেতে পেরেছি বা বর্তমানে আমাদের অবস্থান কোথায় এবং কতটুকু?

আমাদের লক্ষ্যগুলোর অন্যতম একটি হলো— টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা। এটিকে বিবেচনা করলে ও সার্বিক উন্নয়নকে বিবেচনায় নিলে বাংলাদেশর জন্য বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের জায়গা আছে।

চ্যালেঞ্জগুলোর অন্যতম একটি হলো—জাতীয় আয়ের সুফল সাধারণ জনগন সমানভাবে পাচ্ছে কি না সেবিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আরেকটি চ্যালেঞ্জের জায়গা হলো—অর্থনৈতিক বৈষম্য, এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

আমরা যদি লক্ষ্য করি, দারিদ্র দূরীকরণে দেশের অবস্থান মোটামুটি অগ্রগতি হয়েছে। কর্মসংস্থানের একটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের প্রবৃদ্ধির সুফল জনগনের কাছে পৌঁছে দেয়ার একটি উপায় হলো কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়া।

আইএলও তথা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় বলা হয়, কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আয়ের ব্যবস্থা করা, যাতে এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফলগুলো সাধারণ জনগন পেতে পারে। আর এটিকেই অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি বলা হয়ে থাকে। আমাদের অর্থনীতির মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত—সবার জন্য উন্নয়ন। অর্থাৎ, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন হবে। যার সুফলটা সমানভাবে সবাই পাবে।

কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের ক্ষেত্রে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে, যেমন পুষ্টি, শিশুমৃত্যু, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করার আরো সুযোগ আছে।

আমি মনে করি, শ্রীলংকার মতো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বাংলাদেশ এখনো নাই। একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, শ্রীলংকার সার্বিক অবস্থা থেকে যেকোনো উন্নয়নমূলক রাষ্ট্রের শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

আমরা আমাদের বৈদেশিক ঋণ নিয়ে সতর্ক হতে পারি, আমরা টাকাগুলোকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি কি না সেদিকে নজর দিতে হবে। শ্রীলঙ্কার দিক বিবেচনা নিলেও সামষ্টিক দিক বিবেচনায় আমাদের এখনো সেরকম শঙ্কা তৈরি হয়নি।

এদিকে দেশের মাথাপিছু আয় বেড়েছে এটি স্বস্তিদায়ক বিষয়। দেশের গড় আয় বাড়ার বিষয়টি ইতিবাচক। তবে গড় আয়ের বাইরে অনেক কিছুই থেকে যায়। দেশের চর, হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক প্রভার্টি কমিউনিটি আছে যেখানে অনেক ক্রিটিক্যাল ইস্যু রয়েছে। সেগুলো সমন্বয় করা প্রয়োজন। এটি গড় আয়ের প্রথম দিক।

দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো, আমরা সবসময় আয়ের সংখ্যাগত বিষয়ের ওপর আলোকপাত করি বেশি। কিন্তু, আমাদের গড় আয়ের সংখ্যাগত দিক বিবেচনা করে গুণগত দিকটি বিবেচনায় আনতে হবে। সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষেরা গড় আয়ের সুফল কতটুকু পাচ্ছে সেটাতে লক্ষ্য রাখতে হবে। এজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কর পদ্ধতি, স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থাপনা—এই জিনিসগুলো ঠিক করা প্রয়োজন। গড় আয়ের গুণগত মানটাই চিন্তার মূল বিষয় হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

(ঢাকাটাইমস/১৬মে/আরএল/ডিএম)