পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবরে অস্বস্তিতে যারা

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২২, ০৯:২৯ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১৩:১৯

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকাটাইমস

প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ভারতে ধরা পড়ার পর যারা তার ‘পৃষ্টপোষক’, তাদের মধ্যে শুরু হয়েছে অস্বস্তি। পি কে হালদারকে দেশে ফেরানো গেলে এই রাঘব দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন এই রাঘব বোয়ালরা।

দেশের চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচার করে পলাতক থাকা অবস্থায় গত শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার।
দেশটির অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী তথা ইডি পি কে হালদারের সঙ্গে তার পাঁচ সহযোগীকেও গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর তাদেরকে তিন দিনের রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে গতকালও দফায় দফায় জেরা করা হয়েছে।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার ধরা পড়ার পর অর্থ পাচারে তার সঙ্গে মূল দুষ্কৃতকারী ও আসল পৃষ্ঠপোষক কারা ছিল এখন চলে সেই আলোচনা।

প্রশ্ন উঠেছে, পি কে হালদারের প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার বেশি পাচারের পেছনে বড় কোনো রাঘব বোয়াল জড়িত? দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজিরবিহীন এই অর্থ লোপাটের ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান ও সাবেক কিছু কর্মকর্তার নামও এসেছে।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ লুটপাটের ঘটনায় গত ২৯ মার্চ এই দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে দুদক।

পি কে সিন্ডিকেটের যে ১৩ জনকে এখন পর্যন্ত দুদক গ্রেপ্তার করেছে তাদের মধ্যে ১১ জন নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা জবানবন্দী দিয়েছেন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হক আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তাদের পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা করে দিত রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
রাশেদুল হক জবানিবন্দিতে বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক শাহ আলমকে প্রতি মাসে দেওয়া হতো দুই লাখ টাকা করে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়ম-দুর্নীতি ‘ম্যানেজ’ করতেন সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী।

পি কে হালদারকে দেশে ফেরানোর পর নাম আসা ব্যক্তিরা ফের দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে পারেন। ফলে অভিযোগের মুখে থাকা ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিরা অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্র বলছে, পি কে হালদারের অর্থ লোপাটের ঘটনায় সবমিলিয়ে ৩৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে অভিযোগপত্র হয়েছে মাত্র একটি মামলায়। তিনটি মামলার তদন্তকাজ শেষ হয়েছে।

এখন পর্যন্ত পিকে হালদারের ৮৩ সহযোগীর ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। ৬৪ জনের বিদেশ গমনে আদালতের মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। আর এক হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে।

এদিকে পিকে হালদার ইস্যুতে দুদক গতকাল জরুরি বৈঠক করেছে। বৈঠকে পিকে হালাদারকে ভারত থেকে ফেরানোর প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া তাকে দ্রুত কিভাবে ফেরানো যায় সেজন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে দুদকের ভারপ্রপ্ত সচিব সাঈদ মাহবুব খান ঢাকটাইমসকে বলেন, ‘ইন্টারপোলের মাধ্যম পিকে হালদারে রেড এলার্ট জারি ছিলো, আমরা ভারতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি তাকে ফেরাতেওে সেদেশের ইন্টারপোলও আমাদের সহযোগীতা করবে। আমাদের জন্য ভাল খবর ইন্টারপোল অথরিটি খুব দ্রুত রিয়্যাক্ট করেছে আসামী ফেরত পাঠানোর বিষয়ে।’

এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ভারতে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে সেসব প্রক্রিয়াতো থাকবেই এর পরও আমাদের বন্দিবিনিময় চুক্তির মাধ্যমে যত দ্রত সম্ভব তাকে দেশে আনার চেষ্টা করা হবে।

বিদেশ থেকে সম্পদ ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার দুদকের সফলতা আশাব্যাঞ্জক নয় জানিয়ে সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন সাঈদ মাহবুব খান বলেন, এই ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা কম। তবে আমরা সম্পদ ফিরিয়ে আনতে আশাবাদি।ভ তবে এই প্রক্রিয়াটা সহজ হবে না।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/ডিএম)