উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ডায়েটে যেসব খাবার রাখবেন, জানুন

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২২, ১০:৫৬ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১৫:০১

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

বর্তমান বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। উচ্চ রক্তচাপের শিকার সারা বিশ্বে ১৫০ কোটির বেশি মানুষ। প্রতি বছর ১৭ মে বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এই দিনটি পালনের মূল লক্ষ্যই হল, কার্জিওভাসকুলার রোগ সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো। সহজ ভাষায়,হাইপারটেনশন হল হাই ব্লাড প্রেসার। সারা বিশ্বে কার্ডিওভাসকুলার রোগের অন্যতম প্রধান এবং সাধারণ কারণ হল উচ্চ রক্তচাপ।

মানুষের অসচেতনতা এবং ভুল ধারণার কারণে এই রোগটি শরীরে বাসা বাধে। বিশ্বব্যাপী, বর্তমানে এক বিলিয়নেরও বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপের শিকার। তার মানে, উচ্চ রক্তচাপ বিশ্বব্যাপী প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৩০ শতাংশেরও বেশি প্রভাবিত করে।

উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বেশি লবণ গ্রহণ, অতিরিক্ত মেদ, কাজের চাপ, মদ্যপান, পরিবারের আকার, অতিরিক্ত আওয়াজ এবং ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকা। উচ্চমাত্রার লবণের ব্যবহার এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। প্রায় শতকরা ৬০ ভাগ রোগী লবণের ব্যবহার করার কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকে।

মানসিক চাপপূর্ণ পরিস্থিতিতে অথবা শারীরিক শ্রমের কারণে আপনার রক্তচাপ ওঠানামা করে। যদিও, বিশ্রামের সময়ে অথবা ধকল-শূন্য অবস্থাতেও – তা যদি সব সময়েই বেশি থাকে, তবে আপনার হাইপারটেনশন রয়েছে বলা যায়। উচ্চ রক্তচাপ (হাইপারটেনশন) বলতে ধমনীতে প্রেশারের অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়াকে বোঝায়। যা দীর্ঘকাল ধরে চলতে থাকে। হৃৎপিণ্ড যত বেশি রক্ত ​​পাম্প করে, ধমনীগুলো সরু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে, যার ফলে রক্তচাপ দ্রুত বেড়ে যায়।

রক্ত প্রবাহের চাপ হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে  অনেক বেশি থাকলে সেটিকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। দু'টি মানের মাধ্যমে এই রক্তচাপ রেকর্ড করা হয় - যেটার সংখ্যা বেশি সেটাকে বলা হয় সিস্টোলিক প্রেশার, আর যেটার সংখ্যা কম সেটা ডায়াস্টলিক প্রেশার। প্রতিটি হৃৎস্পন্দন অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের সংকোচন ও সম্প্রসারণের সময় একবার সিস্টোলিক প্রেশার এবং একবার ডায়াস্টলিক প্রেশার হয়।

একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ থাকে ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি। কারও ব্লাড প্রেশার রিডিং যদি ১৪০/৯০ বা এর চেয়েও বেশি হয়, তখন বুঝতে হবে তার উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে। অন্যদিকে রক্তচাপ যদি ৯০/৬০ বা এর আশেপাশে থাকে, তাহলে তাকে লো ব্লাড প্রেশার হিসেবে ধরা হয়। যদিও বয়স নির্বিশেষে রক্তচাপ খানিকটা বেশি বা কম হতে পারে।

উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে স্ট্রোক, হাইপারটেনসিভ এনসেফালোপ্যাথি, প্যারালাইসিস, মস্তিষ্কে জটিলতা, মস্তিষ্কের সাবঅ্যারাকনয়েড স্পেসে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। এছাড়া হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যাওয়া, হার্ট অ্যাটাক ও ফেইলিউর, করোনারি হার্ট ডিজিজ প্রভৃতি হতে পারে। এটি চোখেরও বিভিন্ন ক্ষতি করে থাকে। যেমন: হাইপারটেনসিভ রেটিনোপ্যাথি, দৃষ্টিশক্তির ব্যাঘাত, প্যাপিলিডিমা।

 

উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডায়েটে যেসব খাবার তালিকাভুক্ত করবেন, সেগুলো জেনে নিন একনজরে…

 

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল

ভিটামিন সি সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফল যেমন— জাম্বুরা, কমলা এবং লেবু ইত্যাদি ফলগুলো উচ্চ রক্তচাপ কমাতে শক্তিশালী হিসেবে কাজ করতে পারে।  এগুলো ভিটামিন, খনিজ এবং উদ্ভিদের যৌগ দ্বারা পরিপূর্ণ যা উচ্চ রক্তচাপের কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এবং আপনার হার্টকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।

 

কলা

কলায় সোডিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। অন্যদিকে, পটাসিয়াম, ফাইবার ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ থাকায় রক্তচাপ কম রাখে ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কলা আপনি ব্রেকফাস্টে ফলের মত করে খেতে পারেন। আবার স্মুদি বা মিল্কশেক হিসেবেও খেতে পারেন। এতে হজমশক্তিও বাড়ে ও দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে।

 

কমলালেবু

কমলালেবু প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। রক্তচাপ কমাতে এর বিকল্প নেই। হার্টকে সুস্থ রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর ফাইবার ও ভিটামিন সি থাকে এতে। সকালের ব্রেক ফাস্টে বা টিফিন ব্রেকে কমলালেবুর রস খেতে পারেন।

 

বেদানা

বেদানায় রয়েছে এসিই নামক এনজাইম কমাতে সাহায্য করে। তাতে রক্তনালীর আকার নিয়ন্ত্রণ করে ও রক্তচাপ কমায়। বেদানা আপনি যেমনভাবে খুশি খেতে পারেন। জুস হিসেবে, বা সালাদে মিশিয়ে খেতে পারেন।

 

আম

ফলের রাজা আমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, বিটা বিটা ক্যারোটিন ও পটাসিয়ামের একটি বড় উৎস। যার কারণে রক্তচাপ কমাতে কার্যকর হয়।

 

কুমড়া বীজ

কুমড়া বীজ দেখতে অনেক ছোট মনে হলেও পুষ্টিগুণে অনেক পরিপূর্ণ। এতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির একটি ঘনীভূত উৎস যেমন— ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আর্জিনিন থাকে।  এছাড়া এতে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় একটি অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা রক্তনালী শিথিলকরণ এবং রক্তচাপ কমানোর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

 

চর্বিযুক্ত মাছ

বিভিন্ন চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অনেক ভালো উৎস হতে পারে। আর এটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এই চর্বিগুলো উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমানো ছাড়াও প্রদাহ কমাতে এবং অক্সিলিপিনস নামক রক্তবাহী যৌগের মাত্রা হ্রাস করে।

 

চিয়া বীজ

চিয়া বীজে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অপরিহার্য পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম এবং ফাইবার প্রচুর পরিমাণে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ রক্তচাপ কমায় এবং এটি ১২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে খেলে তা আরও বেশি উপকার করে।

 

তুলসি পাতা

নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে যদি তুলসি পাতার রসের সঙ্গে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে খেতে পারেন, তাহলে রক্ত চাপ স্বাভাবিক মাত্রায় চলে আসতে সময় লাগে না। তাই তো বন্ধু পরিবারে যদি এই মারণ রোগটির ইতিহাস থাকে, তাহলে নিয়মিত এই ঘরোয়া টোটকাটিকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন!

 

পেঁয়াজের রস

গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত কাঁচা পেঁয়াজ খাওয়ার পাশাপাশি যদি পেঁয়াজের রস খেতে পারেন, তাহলে দেহের ভিতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনাই থাকে না। এখন প্রশ্ন হল কীভাবে খেতে হবে পেঁয়াজের রস? এক্ষেত্রে ১ চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে সমপরিমাণে মধু মিশিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে!

 

তরমুজ

যে রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তরমুজ বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তরমুজের ভিতরে উপস্থিত ফাইবার, ভিটামিন এ, পটাসিয়াম এবং লাইকোপেন, রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

রসুন

খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি যে দারুন কাজে আসে সে সম্পর্কে তো সবারই জানা আছে। কিন্তু একথা জানা আছে কি নিয়মিত দু-কোয়া রসুন খাওয়া শুরু করলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে! আসলে রসুন খাওয়া মাত্র সারা শরীরে রক্তের প্রবাহ এতটা বেড়ে যায় যে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসতে সময় লাগে না।

 

বিট

রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সবজির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। আসলে বিটে উপস্থিত নাইট্রিক অ্যাসিড ব্লাড ভেসেলের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সারা শরীরজুড়ে রক্তের প্রবাহ এতটাই বেড়ে যায় যে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার কোনও সুযোগই পায় না।

 

মিষ্টি আলু

বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত এই সবজিটি খাওয়া শুরু করলে দেহের অন্দরে পটাশিয়ামের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা ব্লাড প্রসোরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

পালং শাক

পালং শাকে নাইট্রেট বেশি থাকে।এ ছাড়া এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকায় তা উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে পারে। এ ছাড়া পালং শাক ধমনীর শক্ততা হ্রাস করতে এবং হৃদযন্ত্রের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।

 

গাজর

গাজরে ক্লিনোজেনিক, পি-কুমারিক এবং ক্যাফিক অ্যাসিডের মতো ফেনোলিক যৌগ থাকে। আর এ যৌগগুলো রক্তনালীকে শিথিল করতে এবং প্রদাহ কমিয়ে উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে। আর রক্তচাপ কমাতে গাজর কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া আরও উপকারী।

 

নারিকেলের পানি

নারিকেলের পানিতে রয়েছে প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট, যা শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে প্রতিদিন এক গ্লাস নারিকেলের পানি পান করুন।

(ঢাকাটাইমস/১৬ মে/আরজেড)