রোগ প্রতিরোধে গোলমরিচের কার্যকরী ভেষজ গুণাগুণ

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২২, ১১:৫৬ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১১:৫৯

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

গোলমরিচ একটি বহুবর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ যার ফল বেরি হিসেবে পরিচিত। গোলমরিচ ফলটি গোলাকার, কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় হলুদ থেকে লাল বর্ণের হয়। এর মধ্যে একটি মাত্র বীজ থাকে। গোল মরিচ দু রকমের সাদা ও কালো। অর্ধ পক্ক দানাগুলো শুকিয়ে গেলেই কালো গোল মরিচ। গোলমরিচের দানা যখন পুরোপুরি পেকে যায় তখন ওপরের কালো খোসাটা ছাড়িয়ে দিলেই পাওয়া যায় সাদা গোল মরিচ।

প্রাচনীকাল থেকে গোলমরিচের গুঁড়া মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। গোলমরিচকে বলা হয় মসলার রাজা। কারণ গোলমরিচের মতো গুনাগুণ নাকি আর কোনো মসলায় এত নেই। গোলমরিচ উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম পিপার নিগ্রাম।

ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, ব্রাজিল, থাইল্যান্ড এবং অন্যান্য ট্রপিকেল দেশে গোলমরিচ চাষ হয়। বাংলাদেশের সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে গোলমরিচ চাষ হয়। গোলমরিচের গুঁড়া ইউরোপীয় দেশে খাদ্যে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ঔষধি গুণাগুণের জন্যও এটি সমাদৃত। গোলমরিচে পাইপারিন নামের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে, যা  থেকে এর ঝাঁঝালো স্বাদটি এসেছে।

গোলমরিচ উৎপাদনে অম্লীয় মাটি এবং উঁচু-নিচু টিলার প্রয়োজন। যেখানে কোনো পানি আটকাবে না এমন উঁচু জায়গায় ভালো জন্মে। এছাড়াও ছায়াময় এলাকায় গাছগুলো ভালো জন্মে। গোলমরিচ যেহেতু বহুবর্ষজীবী লতা জাতীয় গাছ, তাই লতা রোপণের ৪/৫ বছর পর থেকে ফল ধরতে শুরু করে। গাছ বয়স ৮-৯ বছর হলে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতায় আসে এবং ২০-২৫ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। গোলমরিচ গাছ সাধারণত সহায়ক গাছকে আঁকড়িয়ে  বেড়ে ওঠে। এ গাছ সর্বোচ্চ ৩০-৩৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। এ গাছের পাতা দেখতে অনেকটা পান পাতার মতো। একটি গাছ থেকে বছরে ৩-৫ কেজি পর্যন্ত  গোলমরিচ পাওয়া যায়।

পুষ্টিবিজ্ঞানের তথ্যানুসারে এতে ক্যালরি কম, আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন সি। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ইত্যাদি খনিজও এতে বিদ্যমান। তাই খাবারের স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি চর্বি কমাতেও তা অনন্য।

 

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কাজ করে গোলমরিচ

গোলমরিচে রয়েছে উচ্চ পরিমাণের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া যাদের অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে হয়, এজন্য মানসিকভাবে ক্লান্ত থাকেন, তাদের জন্য গোলমরিচ দারুণ ঔষধির কাজ করে।

 

সংক্রমণের বিরুদ্ধে গোলমরিচ

গোলমরিচের এন্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদান সেসব সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুণ ভূমিকা পালন করে। এরকম প্রমাণ মিলেছে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি পরীক্ষায়। দেখা গেছে, গোলমরিচে থাকা পিপারাইন শরীরে যেকোনো জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়ে। বিশেষ করে শরীরে কোনো জীবাণু প্রবেশ করে প্রজনন শুরু করলে সেটি প্রচণ্ড লড়াই করে জীবাণুকে ধ্বংস করে দেয়।

 

গ্যাসের জন্য গোলমরিচ

গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে গোলমরিচের ভূমিকা খুবই কার্যকর। গোলামরিচে এমন কিছু কিছু উপাদান রয়েছে, যা পেট ফাঁপা বা টক ঢেকুর থেকে মুক্তি দেবে নিমিষেই। পেটে গ্যাস হলে এক কাপ গরম পানিতে এক চামচ গোলমরিচ মিশিয়ে পান করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

 

উচ্চ কোলেস্টেরলের সমস্যায়

অনেকে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ কোলেস্টেরলের সম্যসায় ভুগছেন। তাদের জন্য ভালো তথ্য হলো- রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। তাই রোজ গোলমরিচ খাওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

 

ডায়াবেটিস

গোলমরিচে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক করতে সাহায্য করে ও হাইপারগ্লাইসেমিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত, গোলমরিচের তেলে থাকা বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দুই রকমের এনজাইম সৃষ্টি করে যা স্টার্চকে গ্লুকোজে পরিণত করে। করে। এর ফলে ডায়াবেটিসের প্রবণতা অনেক কমে আসে।

 

ক্যানসারের বিরুদ্ধে গোলমরিচ

ক্যানসার প্রতিরোধকারী উপাদান সেলিনিয়াম, কারকিউমিন, বেটা-ক্যারোটিন এবং ভিটামিন বি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে গোলমরিচে। কোলন ক্যানসারের ক্ষেত্রে রেকটামে চাপ কমাতে সাহায্য করে গোলমরিচ। প্রোস্ট্রেট ক্যানসারের জন্যও এটি বিশেষভাবে উপকারী। ক্যানসারের জন্য যেসব ডোক্টাক্সেল বা কেমো থেরাপির ওষুধ ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর অনেকগুলোই তৈরি হয় গোলমরিচ দিয়ে।

 

সর্দি কাশি ও ঠান্ডায় গোলমরিচ

দুই চামচ গোল মরিচের গুঁড়ার সাথে এক চামচ মধু এক কাপ গরম পানিতে মিশিয়ে পান করলে তা সর্দি সারাবে সহজেই। খুলে দেবে বন্ধ নাক। এটি দিনে তিন বার পান করতে হেবে। যাদের অ্যাজমা বা সাইনাসের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য গোলমরিচ উপকারী ভেষজ মসলা।

 

দাঁত ও মুখের জন্য গোলমরিচ

দাঁত ব্যথা ও মুখের জন্যে খুব উপকারী গোলমরিচ। এজন্য কিছু কিছু টুথপেস্ট তৈরিতেও গোলামরিচের ব্যবহার করা হয়। গোলমরিচের এন্টি ব্যাক্টিরিয়াল উপাদান দাঁত ও মুখের জন্যে বিশেষভাবে উপকারী। মাড়ির সমস্যা হলে বা ফুলে গেলে এক চিমটি লবণের সাথে একটুখানি গোলমরিচের গুঁড়া মিশিয়ে মাড়িতে হালকা করে মালিশ করুন। ভাল ফল মিলবে অবশ্যই।

 

ওজন কমাতে চাইলে

ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস হালকা গরম পানির সঙ্গে এক চামচ গোলমরিচের গুঁড়া আর এক চামচ মধু মিশিয়ে খান। প্রচুর উপকার পাবেন।

এছাড়াও যারা সকালে লেবু পানি বা অন্য কিছু খান তারা যদি গোলমরিচের গুঁড়া লিকার চায়ের সঙ্গে পাঁচ মিনিট ধরে ফুটিয়ে খান তাহলেও চলবে। গরম চায়ে বেশ ঝালের স্বাদ থাকবে। বেশি ঘাম হলেই বুঝবেন তা ওজন কমানোর সহায়ক।

 

হজমের জন্য গোলমরিচ

বেঁচে থাকার খাদ্য হজম করার জন্য দরকার হয় প্রয়োজনীয় এনজাইম বা হরমোন। তা গোলমরিচের দ্বারা ভালোভাবে তৈরি করা যায়। খাওয়ার সময় গোলমরিচ খেলে তা প্যানক্রিয়াস ও লিভারের হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। খাদ্যকে ছোট ছোট করে ভেঙে এনজাইম দ্বারা হজম করতে সাহায্য করে।

(ঢাকাটাইমস/১৬ মে/আরজেড)