নর্থ সাউথের অর্থ আত্মসাৎ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২২, ১৩:০৮ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১৬:৪৬

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ যে ছয় জনের বিরুদ্ধে দুদক মামলা করেছে, তাদের গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে।

এই আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িতদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এই দাবি করেছে আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন।

রাজধানীর সেগুনবাগিচা শিল্পকলা একাডেমির সামনে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় এই মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে সংগঠনটির উপদেষ্টা ড. সুফী সাগর সামসসহ প্রমুখ ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ অতিরিক্ত ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়ে তা আত্মসাতের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে গত ৫ মে মামলা করে দুদক।

মামলায় আসামিরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিন আহমেদ, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য এম এ কাশেম, বেনজীর আহমেদ, রেহানা রহমান, মোহাম্মদ শাহজাহান ও আশালয় হাউজিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিন মো. হিলালী।

মানববন্ধনে ড. সুফী সাগর সামস বলেন, ‘মামলার চার্জশিটভুক্ত এই ছয় আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না আনলে এই সিন্ডিকেটের কবল থেকে নর্থ সাউথের মতো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না।’

তিনি বলেন, ‘মূলত আজিম কাসেম সিন্ডিকেটের কারণেই নর্থ সাউথ পরিণত হয়েছে দুর্নীতি-অনিয়ম ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে। তাই এদের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।’

ড. সুফী সাগর সামস আরও বলেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রত্যেকেই সমাজের প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী। তারা যেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে সেজন্য তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ও গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের আওতায় আহ্বান জানাই।’

সুফী সাগর সামস দাবি করেন, ‘নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ট্রাস্টি আজিজ আল কায়সার টিটোও এসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তার বাবা এমএ হাসেম নর্থ সাউথে থাকাকালেই এই সিন্ডিকেটের অংশ ছিলেন। টিটোও এর বাইরে নন। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে তাকে মামলা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে।’

কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান তালুকদার, বাংলাদেশ পরিবেশ ও মানবাধিকার বাস্তবায়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান এম ইব্রাহিম পাটোয়ারি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফেডারেশনের সভাপতি বিদ্যুৎ বিশ্বাস, সাংবাদিক নেতা কালিমুল্লা ইকবালসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।

দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও জঙ্গি তৈরির কারখানায় পরিণত হওয়াসহ নানা অভিযোগে বিপর্যন্ত দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি জরুরি বলে বক্তারা দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, দুদকের মামলার এজাহারে বলা হয়, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির সিন্ডিকেট, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে ট্রাস্টি বোর্ডের কয়েকজন সদস্যের অনুমোদন/সম্মতির মাধ্যমে ক্যাম্পাস উন্নয়নের নামে ৯০৯৬ দশমিক ৮৮ ডেসিমেল জমির দাম ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ ১৩ হাজার ৪৯৭ টাকা বেশি দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কম দামে জমি কেনা সত্ত্বেও বেশি দাম দেখিয়ে প্রথমে বিক্রেতার নামে টাকা দেন, পরে বিক্রেতার কাছ থেকে নিজেদের লোকের নামে নগদ চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আবার নিজেদের নামে এফডিআর করে রাখেন।

পরবর্তীতে আবার ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গ করে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারী অর্থ আত্মসাত করে নিজেরা অন্যায়ভাবে লাভবান হয়েছেন। ওই বেআইনি কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতারণা ও জালজালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে কমিশন বা ঘুষের আদান প্রদান করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/এএ/ডিএম)