দেশের অর্থনীতি পাবে নতুন গতি, বদল আসবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১৬:৩০ | প্রকাশিত : ১৭ মে ২০২২, ১৬:০০

বাংলাদেশের আর্থিক সক্ষমতার মূর্ত প্রতীক পদ্মা সেতু এখন পুরোটাই দৃশ্যমান। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আর্শীবাদ হিসেবে দেখছে পদ্মা সেতুকে। উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে তাদের যাতায়াতের কষ্ট লাঘব হতে চলেছে। এই সেতু চালু হলে শুধু যাতায়াত ব্যবস্থাই নয়, বরং দেশের একটা বড় অংশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও আসবে নতুন মাত্রা।

আগামী জুন মাসের শেষ দিকে সরকার পদ্মা সেতু চালু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে এরইমধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। উদ্বোধনের দিন-ক্ষণ ঠিক করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সারসংক্ষেপ পাঠানোর কথাও জানিয়েছেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। নদীশাসন কাজের বাস্তব অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। মূল সেতুর পিচঢালাই কাজের অগ্রগতি ৯১ শতাংশ। প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৩.৫ শতাংশ।

উদ্ভোধনের অপেক্ষায় থাকা কোটি কোটি লোক এখন দিন গুণছে পদ্মা সেতুতে চড়ার। সেতুটি উদ্ভোধন হলে পদ্মা পাড়ের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রত্যাশাও তাদের।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা সিরডাপের প্রকল্প পরিচালক (গবেষণা) ড. হেলাল উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের পাশাপাশি পুরো বাংলাদেশের জন্যই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

‘এতদিন পদ্মার ওপারে তেমন শিল্প-কারখানা হয়নি বললেই চলে। এর মূল কারণ ছিল যাতায়াত ব্যবস্থা। কেননা পদ্মা যখন তখন উত্তাল হয়ে যায়। তখন যাতাযাতে বিঘ্ন ঘটে। সেতুটি চালু হলে শিল্প-কারখানার মালিকদের এ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। ফলে খুব দ্রুতই ওদিকে শিল্পায়ন ঘটবে। এতে লাখ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া ওই এলাকার তৃণমূল লোকজন সুবিধা পাবে। কৃষক থেকে শুরু করে সবাই এতে উপকারী হবে।’

উদাহরণ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘একজন কৃষক জমিতে থেকেই তার পণ্য বিক্রি করত। সেক্ষেত্রে কয়েকটা হাত হয়ে ঢাকায় এসে উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রি হয়। কিন্তু প্রান্তিক ওই কৃষক ন্যয্য দাম পেত না। এখন যোগাযোগ ভালো হওয়ায় প্রান্তিক ওই কৃষক চাইলে সরাসরি পছন্দমত গন্তব্যে নিয়ে তার পণ্য বিক্রি করতে পারবে। এছাড়া পচনশীল পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুই দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে সহজে নেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে আমি বলতে পারি এই সেতুর কারণে আমাদের পুরো জিডিপিতেই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

‘এছাড়া আমরা অনেক দেখেছি উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেক রোগীকে ঢাকায় আনতে রাস্তায় সময় লাগার কারণে সমস্যা হতে। এখন এই সমস্যাটাও লাগব হবে’—যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

পদ্মার ওপাড়ের মানুষ হিসেবে ব্যাক্তিগত অনুভূতি জানতে ঢাকাটাইমস কথা বলে শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমের সঙ্গে।

তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হবে এটা ভাবতেই যেন গা শিউরে উঠছে। এই খুশি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পদ্মা সেতু হলে প্রথম উপকারী হবে এই এলাকার লোকজন। একটা সেতু আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কারণে এটা হওয়া নিয়ে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল।’

‘কিন্তু আমার নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দমে যাওয়ার লোক নন। বিশ্ব ব্যাংক মুখ ফিরিয়ে নিলেও বঙ্গবন্ধুকন্যা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নিমার্ণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছি শেখ হাসিনা যখন বলেছেন সেতু একটা হবেই হবে। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। সকল ষড়যন্ত্রকে ফিছনে ফেলে অপেক্ষা এখন শুধু পদ্মা সেতুতে যান চলাচলের। কাজও ৯৮ শতাংশ শেষ।’

শামীম আরও বলেন, ‘বাংলার মানুষ শেখ হাসিনার এই অবদান কখনো ভূলতে পারবে না। এই সেতু হওয়ার কারণে পদ্মার এপাড়ের লোকজনের সর্বক্ষেত্রে সুবিধা হবে। কল-কারখানা হবে, কর্মসংস্থান হবে, তৃণমূলের জনসাধারণ উপকারভোগী হবে। এছাড়া আমি সম্প্রতি জাতীয় সংসদে সম্প্রতি শরীয়তপুর-চাঁদপুর মেঘনা সেতুর কথা বলেছি। এটি হলে পুরো বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় অনন্য এক পরিবর্তন হবে।’

‘সবশেষে আমি বলছি, পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্নের সেতু। এটি উদ্বোধন হলে আমাদের জিডিপিতে বিশেষ অবদান রাখবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবো’—যোগ করেন শামীম।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু পুরোপুরি দৃশ্যমান হয়েছে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর। একইসঙ্গে চলতে থাকে রোডওয়ে, রেলওয়ে স্ল্যাব বসানোসহ অন্যান্য কাজ। সেতুর মূল আকৃতি দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে এ সেতুর কাঠামো।

সেতুতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। পদ্মা সেতুতে এখন বড় কাজের একটি ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। সেই কাজটিই এখন চলছে রাত-দিন। পুরো সেতুতে বসানো হয়েছে ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট। এছাড়া পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য স্ট্রিট লাইটিং ও বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থায়ী আর্কিটেকচারাল লাইটিং করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :