সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, তলিয়ে গেছে নগরের বিভিন্ন এলাকা

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২২, ১৬:৫৬ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১৭:১০

মো. মুন্না মিয়া, সিলেট ব্যুরো

সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির আপাতত কোনো লক্ষণ নেই। বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হওয়ার পর এখন সিলেট মহানগরের বিভিন্ন এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। উজানের ঢল আর বৃষ্টি না থামায় পরিস্থিতি মোড় নিচ্ছে চরম দুর্ভোগের দিকে। অব্যাহত পানিবৃদ্ধির কারণে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষের রাত কেটেছে নির্ঘুম। বাসাব-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে পাঠদানে বিঘ্নিত হচ্ছে। সড়ক ডুবে চলাচলে তৈরি হয়েছে প্রতিবন্ধকতা। জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। বিশেষ করে অফিসগামী, ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে তাদের গন্তব্যস্থলে ছুটছেন।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, টানা কয়েকদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাব ছিল, অন্যদিকে শুরু হয়েছে বর্ষা। মাঝারি, ভারী আর অতিভারী বৃষ্টির কবলে পড়ে সিলেটে এখন বন্যার যাতনা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উজানে ভারত থেকে নেমে আসা ঢল।

বৃষ্টি আর ঢলের কারণে সিলেটের সদর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েক লাখো মানুষ এখন পানিবন্দি। এসব উপজেলার প্রধান কয়েকটি সড়কও তলিয়ে গেছে। ফলে গ্রাম থেকে উপজেলা সদর কিংবা উপজেলা সদর থেকে জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে মানুষের ঘরবাড়ি, বাজার, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব।

সোমবার থেকে পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে শুরু করে। সুরমা নদীর পানি বাড়তে থাকায় এর তীরবর্তী সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করে। নগরের শাহজালাল উপশহর, সোবহানীঘাট, কালীঘাট, চাঁদনীঘাট, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, তালতলা, কলাপাড়া, মজুমদারপাড়া, মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে নতুন নতুন এলাকায় ঢুকছে পানি। গত রাতে ক্রমেই পানি বাড়তে থাকায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় মানুষ নির্ঘুম রাত পার করেন। নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়া, নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার নিয়ে চরম ব্যস্ত ছিলেন নগরবাসী। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় যারা কয়েক তলা ভবনের নিচতলার বাসিন্দা, তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

নগরের শেখঘাটের বাসিন্দা শাহেদ  আহমদ বলেন, ‘দুর্ভোগের শেষ নাই। বাসায় পানি ঢুকে পড়েছে, রাতে কেউ ঘুমায়নি। জরুরি জিনিসপত্র আরেক জায়গায় নিয়ে রেখেছি। ড্রেনের ময়লা আবর্জনা যুক্ত পানি শরীরে চুলকানি শুরু হয়।

নগরের তালতলা এলাকার বাসিন্দা মাহি বলেন, ‘এই পরিস্থিতির জন্য বৃষ্টি আর উজানের ঢলের ভূমিকা আছে সত্য। কিন্তু সুরমা নদীর নাব্যতা সংকট, নগরের ড্রেন, নালা, ছড়া পরিষ্কার না থাকা, ময়লা-আবর্জনা ফেলে এগুলোর গতিপথ আটকে দেওয়া, কর্তৃপক্ষের যথাযথ নজরদারির অভাব এসবও কিন্তু এই দুর্ভোগের জন্য দায়ী।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টি যদি না থামে, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম। বৃষ্টি থেমে আকাশে রোদের ঝিলিক দেখা গেলে পানি দ্রুত নেমে যাবে। না হয় দুর্ভোগ পোহাতে হবে দীর্ঘ সময়ের জন্য।

সিলেটের আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী বলেন, গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণের কারণেই মূলত সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় পানি বেড়েছে। তাছাড়া উজানের ঢলের কারণে সিলেটের নদনদীর পানি বাড়ছে। তিন দিন আগেও যেখানে পানি নদীর পাড় থেকে কয়েক ফুট নিচে ছিল সেখানে গত ২৪ ঘণ্টায় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়েছে।

সিলেট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান, সিলেটের নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। এটি দুশ্চিন্তার কারণ। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেখানের পানি আমাদের দেশে আসছে। যদি ভারতের মেঘালয় রাজ্যে বৃষ্টি না কমে, তবে এই পানি কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। টানা বর্ষণ আর ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১.৫ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/এআর)