কী কারণে বাড়ল ফাস ফাইন্যান্স ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ারদর

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২২, ১৮:৩১ | আপডেট: ১৭ মে ২০২২, ১৯:১৪

বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস

দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাত ও পাচার করে পলাতক থাকা অবস্থায় ভারতে গ্রেপ্তার প্রশান্ত কুমার ওরফে পি কে হালদারের দখল করা চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নতুন করে আলোচনায়। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, এফএসএ (ফাস) ফাইন্যান্স ও পিপলস লিজিং।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে পিপলস লিজিংয়ের লেনদেন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। আর আজ মঙ্গলবার বিআইএফসির শেয়ার দরে পতন হয়েছে। তবে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে অন্য দুই প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড এবং ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের শেয়ার নিয়ে।

গত সোমবার শেয়ার দর চমক দেখিয়ে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি হয়। এদিন ফাস ফাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার দর সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়ে যায়, যা রীতিমতো আলোচনার সৃষ্টি করে।

সোমবার ডিএসইতে ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দর ৫ টাকা ১০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা বা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ টাকা ৬০ পয়সায়। আর ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার দর ৫ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫০ পয়সা বা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ টাকায়।

এদিন কোম্পানি দুটির শেয়ার সর্বোচ্চ লেনেদেন হয়ে আলোচনার শীর্ষে উঠে আসে। সোমবার ফাস ফাইন্যান্সের ৪১ লাখ এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাড়ে ৯ লাখ শেয়ার লেনদেন হয়।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য মতে, দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও শেয়ার দর বৃদ্ধির অব্যাহত থাকে। আগের দিনের তুলনায় আরেক দফা বাড়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এবং ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দর।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৫০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে ৬ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আর ফাস ফাইন্যান্সের শেয়ার দর ২০ পয়সা বা ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেড়ে ৫ টাকা ৮০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুযায়ী একদিনে কোনো কোম্পানির শেয়ার দর ১০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে না।

বিনিয়োগকারীদরে অনেকেরেই ধারণা, পি কে হালদার ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার খবরে এ দুই কোম্পানির বিনিয়োগকারীদের মনে আশা জাগায়। তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতকারী পি কে হালদার গ্রেপ্তার হওয়ায় এবার সেই অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা আছে।

আর এই ধারনাকে কাজে লাগিয়ে এ দুই কোম্পানির শেয়ারে যাদের বিনিয়োগ রয়েছে তারা শেয়ার দর বাড়িয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করছেন। আর এই কারণে আকস্মিকভাবে ফাস ফাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ারের দামে উল্লম্ফন।

বিনিয়োগকারীদের কেউ কেউ বলছেন, এখন দেখার বিষয়, এই শেয়ার দর কয়দিন পর্যন্ত বাড়তে থাকে। যেভাবে সবাই পি কে হালদারের গ্রেপ্তারের খবরে এই দুই কোম্পানির শেয়ারে হামলে পড়েছে এটা কতটা যৌক্তিক তাও চিন্তার বিষয় বলে তারা মনে করছেন।

বাজার সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ বলছেন, পি কে হালদার ধরা পড়লেও আত্মসাত করা হাজার হাজার কোটি টাকা সহসা উদ্ধার হয়ে যাবে তেমন সম্ভাবনা নেই। বিনিয়োগকারীদের অনেকেই বুঝে বা না বুঝেই হোক ফাস ফাইন্যান্স এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের শেয়ার হাতে রেখে দাম বাড়ায়। ফলে সোমবার এই দুই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্রে জানা যায়, পি কে হালদার ফাস ফাইন্যান্স থেকে বিভিন্ন নামে বেনামে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেন ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

আর ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের নামে নেন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার ঋণ। এসব ঋণের অর্থ কিছু নামসর্বস্ব, জামানতবিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে।

জালজালিয়াতি করে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ২০১৯ সালে গোপনে দেশ ছেড়ে পালায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি পি কে হালদার।

এরপর তিন বছরের বেশি সময় ধরে পি কে হালদারের অবস্থান নিয়ে ধোয়াশার মধ্যে গত ১৩ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরে এক অভিযান চালিয়ে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অর্থ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী—ইডি।

গ্রেপ্তারের পর পি কে হালদারকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় ইডি। তিন দিনের রিমান্ডের পরে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাকে ফের দশ দিনের হেফাজতে নেওয়ার খবর এসেছে।

প্রসঙ্গত, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ২০০৮ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ২১০ কোটি টাকা। কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১৪৯ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। বর্তমানে কোম্পানিটি বি ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।

অন্যদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। এর পরিশোধিত মূলধন ২২১ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। কোম্পানিটি বর্তমানে বি ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে।

(ঢাকাটাইমস/১৭মে/ডিএম)