সম্রাটকে কি ফিরিয়ে নেবে যুবলীগ?

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ০৯:০৩ | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০২২, ০৮:৫৪

যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের জামিনে মুক্তির পর আবার রাজনীতিতে ফেরা নিয়ে অধীর আগ্রহ তার অনুসারীদের মধ্যে। তারা বলছেন, সম্রাটকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। দল তাকে চাইলেই তিনি রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হবেন।

তবে বর্তমান যুবলীগ নেতৃত্ব বলছেন, সম্রাট ইস্যু পুরনো কমিটির বিষয়। এ নিয়ে তারা এখন কিছু ভাবছেন না।

ক্যাসিনো-কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় আড়াই বছর পর গত ১১ মে জামিনে কারামুক্ত হন সম্রাট। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। দেড় বছর ধরে এখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মুক্তির পর তিনি এখানেই অবস্থান করছেন চিকিৎসকদের পরামর্শে।

বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের ডি ব্লকের সিসিইউর যে কক্ষে সম্রাট চিকিৎসাধীন, সেখানে মধ্যরাত অবধি নেতাকর্মীদের ভিড়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ নগরের বিভিন্ন স্তরের কর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হচ্ছেন প্রতিদিন। ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত আনসার সদস্য মোতায়েন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কর্মী-অনুসারীদের দল বেঁধে তার কাছে আসার কারণ হিসেবে একজন বলেন, ‘ভাইয়ের মামলা শেষ হইছে, আমরা চাই তিনি আবার যুবলীগে ফিরবেন।’

ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসার পর ২০১৯ সালের ১৭ অক্টোবর তখনকার যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি সম্রাটকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করে। সেদিন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হারুন রশিদ জানান, সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সম্রাটের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। সম্রাটের যুবলীগে ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে এই বিষয়টাই সামনে আনছেন তার অনুসারীরা। তাদের দাবি, কোনো দাপ্তরিক প্যাডে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সম্রাটকে বাহিষ্কার করা হয়নি। যুবলীগের তখনকার কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ সম্রাটকে বহিষ্কারের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছিলেন। কিন্তু এর কোনো দালিলিক ভিত্তি নেই।

ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ভাবমূর্তি সংকটে পড়লে যুবলীগের প্রতি ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে।

২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ মণির বড় ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে নির্বাচিত করা হয়। সংগঠনের সপ্তম কংগ্রেসে তারা এই নেতৃত্বে আসেন। এরপর তারা বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের বিভিন্ন্ ইউনিটের কমিটি দেন।

সেই হিসাবে আগের কমিটির আর কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু সম্রাটের অনেক অনুসারী মনে করেন, তিনি এখনো ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি। তারা মনে করেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সম্রাট ছাড়া কারো কথা চলে না।

সম্রাটের রাজনীতিতে ফেরার বিষয়ে তার এক অনুসারী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘সম্রাট ভাই তো রাজনীতি ছাড়েনই নাই। তাকে বহিষ্কারাদেশের কোনো দালিলিক প্রমাণপত্র নেই। তিনি এখনো যুবলীগ মহানগর দক্ষিণের সভাপতি। দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তির গ্রিন সিগন্যাল পেলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়াবেন তিনি।’

জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সম্রাটকে হাসপাতালে গিয়ে তার অনেক অনুসারী ফুল নিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তারা সম্রাটকে ফুরফুরে মেজাজে দেখে এসেছেন। এতে উৎফুল্ল অনুসারীরা সম্রাটের রাজনীতিতি ফেরার অপেক্ষা করছেন।

সম্রাটকে আবার যুবলীগের রাজনীতিতে ফেরানো হবে কি না- এ বিষয়ে জানতে ঢাকা টাইমস যোগাযোগ করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের একাধিক নেতার সঙ্গে। তাদের ভাষ্য, এ বিষয়ে তারা কিছু বলতে পারবেন না। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা যুবলীগের চেয়ারম্যান আর সাধারণ সম্পাদক নেবেন।

যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল এ বিষয়টি এক কথায় নাকচ করে দেন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সম্রাটকে যুবলীগে আবার আনার কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। ওনাকে আদালত জামিন দিয়েছে। এতে যুবলীগের কোনো সম্পর্ক নাই।’

ভবিষ্যতে তাকে ফের সংগঠনে আনা-না আনার বিষয়ে যুবলীগ কিছু ভাবছে কি না জানতে চাইলে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘এই বিষয়টি তো তৎকালীন কমিটিতে যারা ছিলেন তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে আমাদের নতুন করে ভাবার কোনো দরকার নেই।’

সম্রাটের অনুসারীরা বলছেন তার বহিষ্কারের কোনো দাপ্তরিক দলিল নেই। সংগঠনের দাপ্তরিক প্যাডে সম্রাটকে বহিষ্কারের কোনো দালিলিক প্রমাণপত্র রক্ষিত আছে কি না এমন প্রশ্নে যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বলেন, এসব বিষয় আগের কমিটির। তাই তিনি এ নিয়ে কিছু বলতে অপারগ।

তিন শর্তে সর্বশেষ দুই মামলায় জামিন পান সম্রাট। এর মধ্যে রয়েছে তার অসুস্থতার চিকিৎসার তথ্য নিয়মিত আদালতকে দিতে হবে, বিদেশ যাওয়া যাবে না, পাসপোর্ট জমা দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে মোট চার মামলার অন্য দুটিতে আগেই জামিন পেয়েছিলেন তিনি।

সম্রাট যেদিন মুক্তি পেলেন, সেদিন এক সংবাদ সম্মেলনে বিএসএমএমইউয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নজরুল ইসলাম খান বলেন, সম্রাটের ৩১-৩৩ শতাংশ হার্টের ফাংশনাল ছিল। শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক বলা যাবে না। তারা শঙ্কায় ছিলেন যেকোনো কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে কি না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রায়হান মাসুম মন্ডল বলেন, ‘সম্রাটের হার্টের এমন কিছু ক্রিটিক্যাল অবস্থা আছে, যেকোনো সময় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ ছাড়া আছে ভাল্বের সমস্যা। দূর থেকে অনেকটা সুস্থ মনে হলেও চিকিৎসক হিসেবে দেখলে বোঝা যায় ওনার দেহে যেন একটা বোম বাঁধা রয়েছে।’

চিকিৎসকরা তাকে বিশ্রামে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। চিকিৎসকদের ভাষায়, সম্রাটের হৃদযন্ত্রের অবস্থা বেশি ভালো নয়। তার সবশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে সোমবার মেডিকেল বোর্ড বসে। তাতে সিদ্ধান্ত হয়, সম্রাটকে আরও কয়েক দিন বিএসএমএমইউতে রাখা হবে। তবে তার পরিবার চাইলে চিকিৎসার জন্য তাকে অন্য কোথাও এমনকি বিদেশ নিতে পারে।

২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে এর ১৯ দিন পর ৬ অক্টোবর ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও তার সহচর হিসেবে পরিচিত মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি এমরানুল হক আরমানকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাবের হাতে আটকের পর ক্যাঙ্গারুর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার ক্যাসিনোতে প্রায় ২২২ কোটি টাকা পাচার, দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন, অবৈধ অস্ত্র ও মাদক রাখার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক, র‌্যাব ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সর্বমোট চারটি মামলা করে।

এর আগে ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ফকিরাপুলের ইয়ংমেনস ক্লাবে র্যা বের অভিযানে দেশে ক্যাসিনো কারবারের বিষয়টি সামনে আসে। ওই ক্লাব পরিচালনা করতেন যুবলীগের সে সময়ের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তিনি ছিলেন সম্রাটের ঘনিষ্ঠজন। পরে বেরিয়ে আসে ঢাকায় ক্যাসিনো কারবারে হাত রয়েছে সম্রাটের। ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী আরেক যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :