সেই তাজরীন এমডি এখন উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি

প্রকাশ | ১৮ মে ২০২২, ১৪:৪২ | আপডেট: ১৮ মে ২০২২, ১৫:০৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনের ঘটনায় মূল আসামি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়েছে। এতে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা সমালোচনার মুখে পড়েছেন। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

গত ১১ ও ১২ মে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করা হয় দেলোয়ার হোসেনকে এবং সাধারণ সম্পাদক হন আবদুল জলিল। দক্ষিণের কমিটি ঘোষণার জন্য অরাও সাতদিন সময় নেওয়া হয়েছে।

উত্তরের কমিটি চূড়ান্ত করার পর থেকেই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের সহযোগী এ সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

বিভিন্ন মহলে সমালোচনার কথা উল্লেখ করে মৎস্যজীবী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘দেলোয়ারকে ঢাকা মহানগর উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি করায় অন্য পদপ্রত্যাশীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। তারা বলছেন, দেলোয়ার হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে, এটা কখনো ত্যাগীনেতারা মেনে নিতে পারে না। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার বলেছেন ত্যাগী নেতাদের দলের মধ্যে জায়গা করে দিতে। কিন্তু ত্যাগীনেতারাই কোণঠাসা হয়ে আছে।’

দেলোয়ারের সাংগঠনিক কার্যক্রমে তেমন কোনো অংশগ্রহণ নেই। হঠাৎ করেই তিনি মৎস্যজীবী লীগে এসে উত্তরের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। এরপরই সম্মেলনের মাধ্যমে তাকে সভাপতি বানানো হয়েছে যা রীতিমতো দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা ছাড়া কিছুই নয়।’

মৎস্যজীবী লীগের নেতারা আরও বলেন, ‘দেলোয়ার সুবিধাবাদী লোক। ২০১৮ সালে দলের সুসময়ে যোগদান করেছেন। তিনি আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনের ১১১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যাওয়ার মূল আসামি। এই মামলা থেকে বাঁচতেই আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনে যোগ দিয়েছেন। দলের পদপদবী ব্যবহার করে এই মামলা থেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতেই কৌশলী হয়ে মৎস্যজীবী লীগ যোগদান করেছেন, যা দলের জন্য শুভ নয়। এখনি যদি দল থেকে তাকে বের করে দেওয়া না হয় তাহলে শেখ হাসিনার উন্নয়নের অর্জনের সুনাম নষ্ট হবে, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।’

জানা যায়, ২০১২ সালে আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন পোশাকশ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যায়। এরপর আওয়ামী লীগ সরকারকে দেশে-বিদেশে বেশ সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। তৈরি পোশাক খাত থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছিল।

অথচ সেই ঘটনার মূল আসামি তাজরীনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এখনো আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা। এই অগ্নিকাণ্ডের মামলা গত ১০ বছরেও সুরাহা হয়নি। সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিতেই টাকার বিনিময়ে নেতৃত্বের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মৎস্যজীবী লীগের একাধিক নেতা।

এ বিষয়ে সদ্য নির্বাচিত উত্তর মৎস্যজীবী লীগ সভাপতি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো প্রতিযোগী ছিল না, এছাড়া কাকে মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি বানাবে? এমন কাউকে পায় নাই। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে সভাপতি করা হয়েছে। মৎস্যজীবী লীগ করার মতো তো কেউ নেই। তাই আমাকে ২০১৮ সালে উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। এখন তারা সম্মেলনের মাধ্যমে আমাকে সভাপতি বানিয়েছে।’

আপনি তো আসামি এখনো মামলা চলমান তাহলে কীভাবে সভাপতি হলেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যা,, মামলা আছে। ১০৪ জন সাক্ষী কেউ তো একদিনও সাক্ষ্য দিতে আসে না। তারা তো কেউ স্থানীয় লোক নয়,তাই সাক্ষীও আর খুঁজে পায় না আদালত। সাক্ষীরা হলো গার্মেন্টসকর্মী, কয়দিন পরপর বাসা পরিবর্তন করে, গার্মেন্টস পরিবর্তন করে তাই আদালত তাদের খুঁজে পায় না, আর সাক্ষীও হাজির করতে পারে না।’

‘আপনি তো আগে আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না তাহলে কিভাবে কোন অদৃশ্য শক্তির বলে উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হয়ে গেলেন’-এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কে বলেছে আমি আওয়ামী  লীগের সঙ্গে ছিলামনা। আমি ছাত্রলীগ করে আসা ছেলে।’
 
কত সালে ছাত্রলীগ করেছেন, কোন নেতার, কোন কমিটিত ছিলেন জানতে চাইলে দেলোয়ারের বলেন, এতোকিছু এখন বলতে পারবো না। আমার সকল কাগজপত্র এমনকি ছাত্রলীগের কাগজ দিয়েছি মৎস্যজীবি লীগের সাধারণ সম্পাদককের কাছে।’

‘আপনি নাকি টাকার বিনিময়ে উত্তর মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হয়েছেন’-  এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসব মিথ্যা কথা। আমি কেন টাকার বিনিময়ে পদ নেব। আমাকে ছাড়া উত্তরে সভাপতি করার মতো তো আর কেউ নাই। আমার বাড়ি জামালপুর আমার কি টাকার বিনিময় পদ নেওয়া লাগে?’

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এফএ)