গণপিটুনিতে নিহত যুবকের শরীরে ছিল কাফনের কাপড়

প্রকাশ | ১৮ মে ২০২২, ১৯:৩০

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

সাভারের নবীনগরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে চলন্ত বাসে ছিনতাই চেষ্টার সময় গণপিটুনিতে নিহত নাজমুল মিয়া নামে সেই যুবকের সারা শরীরে কাফনের কাপড় পরিহিত ছিল। এতে করে হতবাক তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা। তবে কি কারণে তার শরীরে কাফনের কাপড় ছিল- তা এখনও স্পষ্ট নয়। 

বুধবার দুপুরে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শ্যামল।

এর আগে সোমবার রাতে সাভার ট্রাফিক বিভাগের পুলিশের এসআই হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনকে আসামি করে মামলাটি করেন। 

নিহতের নাম নাজমুল মিয়া। তিনি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার দক্ষিণপাড়া গ্রামের খোকা মিয়ার ছেলে। সাভারে রাজফুলবাড়ীয়া সাকিপাড়া বড় ভাইয়ের সাথে বসবাস করে আসছিল। 

জানা যায়, ঘটনার রাতে এসআই হেলাল উদ্দিন ছিনতাইকারীকে বাসে দৌড়ে গিয়ে ঝাপটে ধরে আটক করেছিলেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন ভুক্তভোগীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঘটনার স্পষ্ট সাক্ষী সাভজর পরিবহনের সেই বাসটিও শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।

মামলার বাদী ট্রাফিক পুলিশের এসআই হেলাল উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের নবীনগর বাস স্ট্যান্ডে গত সোমবার রাতে আমি দায়িত্ব পালন শেষে সাভারে যাওয়ার জন্য গাড়ির অপেক্ষা করছিলাম। সেখানে রাত সোয়া ১০টার দিকে সাভার পরিবহনের একটি বাস ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে। এসময় যাত্রীদের চিৎকার শুনে পেছনে থাকা হানিফ বাসে উঠে একটু সামনে গিয়ে বাসটির গতিরোধ করি। বাস থামার সাথে সাথেই ছুরি হাতে তিনজন বাসের জানালা দিয়ে লাফিয়ে পালিয়ে যেতে দেখি। ভেতরে গিয়ে দেখি নাজমুলের পুরো শরীরে দুই ভাগে কাফনের কাপড় পরিহিত ও ছুরি হাতে যাত্রীদের জিম্মি করে আক্রমণ করার চেষ্টা করছে। পরে তাকে ঝাপটে ধরলে আমার ওপর হামলার চেষ্টা করে। ধস্তাধস্তি করে তাকে বাস থেকে নিচে নামিয়ে আনি। এসময় উত্তেজিত জনতা তাকে গণপিটুনি দেন। বাসে থাকা প্রায় ২০ থেকে ২৫ জন যাত্রী যে যার মতো চলে যায়। এসময় সাভার পরিবহনের বাসটি থামতে বললেও দ্রুত গতিতে চলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দিলে ছুরিসহ কাফনের কাপড় জব্দ করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাজমুল মারা যান। 

নিহতের বড় ভাই মঞ্জু মিয়া বলেন, আমার ভাই খুবই শান্ত প্রকৃতির ছিল। অনেক কষ্টে চলতাম আমরা। কোন দিন অসৎ পথে হাঁটিনি। আমি ও নাজমুল একই সাথে গার্মেন্টসে চাকরি করতাম। পরে সে চাকরি ছেড়ে ভ্যানে করে বাচ্চাদের বিভিন্ন খেলনা বিক্রি করত। ৮ থেকে ৯ বছর ধরে এখানে বসবাস করি আমরা। আমার পাশের ঘরে নামজুল তার স্ত্রীসহ থাকতেন। গত ৩ দিন আগে তার বউকে নাজমুলের শ্বশুর এসে বাড়ি নিয়ে যায়। তাদের পারিবারিক ঝামেলা চলছিল। বাড়ি গিয়ে তাদের দেওয়া ফার্নিচার ফেরত নিতে এসেছিল নাজমুলের বউ। এর পরদিন রাত ৮টা থেকে নাজমুলের ফোন বন্ধ পাই আমরা। পরের দিন শুনি, আমার ভাইকে মেরে ফেলেছে। তবে নাজমুল কোথায় যাচ্ছিল নাকি বাড়ি ফিরছিল এমন কিছুই জানতে পারিনি। 

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আশুলিয়া থানার এসআই শ্যামল বলেন, কাফনের কাপড় পরিহিতের বিষয়টি আমাদেরও অবাক করেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, খুব এগ্রেসিভ চিন্তা ভাবনা থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে। সে গার্মেন্টস কর্মী ছিল। পরে চাকরি ছেড়ে ফেরি করে খেলনা বিক্রি করত। তার বিষয়ে কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এলএ)