রুপালি, নবিরণদের প্রশ্ন

মধুমতি কি বিলীন করবে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঠাঁই?

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২২, ১৩:৫৫ | আপডেট: ১৯ মে ২০২২, ১৪:৩৯

ফরিদপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর ভাঙনে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় তিনশ ঘর হুমকির মুখে পড়েছে। গত তিন বছরে এই উপজেলার চারটি ইউনিয়নের ছয়শ পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। বর্তমানে সেখানকার প্রায় এক হাজার পরিবার হুমকির মুখে রয়েছেন। নদী তীর রক্ষায় পদক্ষেপ না নিলে এসব ঘর দ্রুত নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন বসবাসকারীরা। এ অবস্থায় নদীতীর রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে বাসিন্দারা মাবনববন্ধন করেছেন।

জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার গোপালপুর ইউনিয়নের ছাতিয়াগাতি, দিগনগর, খোলাবাড়িয়া, কাতলাসুর ও পগনবেগ- এই পাঁচটি গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙনের মাত্রা তীব্র আকার ধারণ করেছে। এছাড়া আশপাশের বাজড়া, বাঁশতলা, দক্ষিণ চর নারানদিয়া, পশ্চিম চর নারাণদিয়া ও পাড়াগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী পাচুরিয়া, টগরবন্দ ও বানা ইউনিয়নেও মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। ভাঙনের কবলে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতভিটা, ফসলি জমি, স্কুলঘর, মসজিদসহ নানা স্থাপনা। 

গোপালপুর ইউনিয়নের কাতলারসুর গ্রামে মুজিববর্ষে গড়ে তোলা হয়েছে স্বপ্ননগর আশ্রয়ন প্রকল্প। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২৮৬ জন দরিদ্রের কাছে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর। দুই বছর না যেতেই এসব ঘরের বাসিন্দারা এখন নদী ভাঙনে ঘর হারানোর আশঙ্কায় ভুগছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা রুপালি বেগম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে একটু আশ্রয় পেয়েছিলাম। এখন এই আশ্রয় হারালে আবার পথে পথেই থাকতে হবে।’
 
নবিরণ বেগম নামে সত্তরোর্ধ্ব এক নারী বলেন, ‘এই ঘর হারাইলি আমরা হাবিডুবি খাবানি। আমাগে গাঙডা ইট্টু বাইন্ধ্যা দ্যান।’

ছাতিয়াগাতি গ্রামের শাহ মো. মুকুল হোসেন মিয়া বলেন, ‘পৈত্রিকসূত্রে প্রায় ৩০ একর জমি ছিল মধুমতির তীরে। এখন প্রায় সবই শেষ শুধু ভিটেটুকু বাদে।’

মুকুল হোসেন আরও বলেন, ‘বছরের পর বছর আমার গ্রামে মধুমতি নদীর ভাঙন চলছে। আমাদের প্রায় ৩০ একর জমি নদীতে চলে গেছে। এখন ভিটেটুকু রয়েছে। তাও ভাঙনের মুখে পড়েছে। বাপদাদার কবর ও মসজিদটাও নদীতে তলিয়ে যাবে যদি ভাঙনরোধ করা না যায়।’ 

সরজমিনে দেখা গেছে, একটি পুরনো মসজিদ ছিল যা নদীতে চলে যাওয়ার পরে নতুন স্থানে মসজিদ করা হয়। সেটিও ঝুঁকিতে রয়েছে। এছাড়া একবটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনা ঝুঁকিতে রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, মধুমতির ভাঙনে বাজড়া গ্রামের পুরনো একটি মসজিদ বিলীন হয়ে গেছে। এর পর নতুন স্থানে মসজিদ তৈরি করা হয়েছিল। সেটিও এখন ভাঙনের মুখে।

তারা জানান, গোপালপুর ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় গ্রাম ছিল খোলাবাড়িয়া। ভোটার ছিল প্রায় ২৬শ। এখন ওই পুরো গ্রাম মধুমতি নদীর গর্ভে চলে গেছে। তারা এখন আলফাডাঙ্গার নতুন নতুন গ্রাম বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান এ. কে. এম জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ সমস্যা নিয়ে বহুবার জেলার বিভিন্ন সভায় বলা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বুলবুল এবং ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার একাধিকবার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শনও করে গেছেন। কিন্তু ভাঙনরোধে সমন্বিত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এভাবে ভাঙতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে আরও হাজারখানেক পরিবারের ঘরবাড়ি নদীতে তলিয়ে যাবে। বিষয়টি গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এটি আশা করছি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, ‘দুই থেকে তিনবছর হলো আমরা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। স্থানীয় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভাতেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ওই এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ অন্যান্য ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য আবারো পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বের সঙ্গে জানাব।’

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এফএ)