খানসামায় ঝড়ে ফসল, বাড়িঘর-গাছপালা লণ্ডভণ্ড

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২২, ১৭:০৫

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় ঝড়ে হাজার হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি ও গাছপালা লণ্ডভণ্ড হয়েছে। ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমি ফল আম, লিচু, কলা, ভুট্টা ও ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়ায় পুরো উপজেলা বিধস্ত হয়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তবে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

স্থানীয়রা জানায়, বুধবার রাত ১০টার পর হঠাৎ ঝড়, শিলা বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়। এ ঝড় দুই দফায় স্থায়ী ছিল প্রায় ঘণ্টা খানেক। এ সময় ঝড়ের তাণ্ডবে উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের সূর্বণখুলী ওকড়াবাড়ি এলাকায় প্রায় ৩ শতাধিক, ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের বালাডাঙ্গী, চকরামপুর, হোসেনপুর, চকসাকোয়া, সরহদ্দ, ভেড়ভেড়ী, টংগুয়া মাদারপীর গ্রামের তিন শতাধিক ও আলোকঝাড়ি ইউনিয়নেও প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি লন্ডভন্ড হয়। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আরো প্রায় ৩/৪ শতাধিক বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়। প্রবল বাতাসে উড়ে যায় ঘরের চালা। নষ্ট হয়েছে ঘরে রক্ষিত খাদ্য সামগ্রী। লণ্ডভণ্ড হয়েছে ঘরের আসবাবপত্র। ছোট-বড় অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনের তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ভেঙে গেছে বিদ্যুতের অসংখ্য মিটার। রাস্তায় গাছ পড়ে বিঘ্ন হচ্ছে যান চলাচল। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বসবাস করছে খোলা আকাশের নিচে। বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। ঝড়ে খামারপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া পাঁচপীর ফাজিল মাদ্রাসার শ্রেণিকক্ষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঝড়ে ঘর-বাড়িসহ বোরো ধান, ভুট্টা, করলা, শসা, আম ও লিচুর ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা রাস্তার ওপর পরে থাকা গাছ গুলো সরানোর কাজ চলছে। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা ছুটে চলছেন উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে।

সূবর্ণখুলী গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ বাসিন্দারা বলেন, আমরা বিছানাই ঘুমাইছিলাম। হঠাৎ রাত ১০/১১ টারর দিকে ঝড়ে বাড়ির পার্শ্বের বড় বড় গাছ গুলো হুড়মুড় করে ঘরের উপর পরে। এতে ঘর ভেঙ্গে আমাদের ওপর পড়ে। জীবন রক্ষার্থে ঘরের বেড়া ভেঙ্গে আমরা বের হই। ঝড়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে তারা নিরুপায়। অনেকে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর দিন কাটছে। নষ্ট হয়েছে আবাদি ফসল। ভেঙ্গে গিয়েছে তাদের ঘর-বাড়ি।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ও আংগারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা আহমেদ শাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এলাকার বিত্তবান সহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

উপজেলা কৃষি অফিসার বাসুদেব রায় জানান, ঝড়ে আক্রান্ত ফসলের মধ্যে বোরো ধান ৪৫ হেক্টর, পাট ২৫ হেক্টর, সবজি ১০ হেক্টর, আম ২৫ হেক্টর, লিচু ৩৫ হেক্টর। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থ ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারনে মাঠে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ঘর-বাড়ি ও কৃষি খাতের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে ইউনিয়ন পরিষদ ও কৃষি বিভাগ কাজ করছে। সেটি হাতে পেলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের খাদ্য সামগ্রী, টিন ও আর্থিক সহায়তা করা হবে।

 

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এআর)