দেশে যেকোনো মুহূর্তে মহাবিপর্যয়, আশঙ্কা ফখরুলের

দেশের আকাশে মহাদুর্যোগের ঘনঘটা দেখা যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে শ্রীলঙ্কার চেয়েও মহাবিপর্যয়ের মুখে বাংলাদেশ পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুর দেড়টায় নীলফামারীর সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ফখরুল।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের ভয়াবহ লুটপাটে ইতিহাসের সবচেয়ে ভঙ্গুর অবস্থায় দেশের বর্তমান অর্থনীতি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আন্দোলনের বিকল্প নেই। দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে উচ্ছেদ করেই আসন্ন ভয়াবহতা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব। নয়তো চরম খেসারত দিতে হবে পুরো জাতিকে।

ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ এখন লুটের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। পি কে হালদার একজন নয়, এ রকম হাজারো অর্থ লুটেরা সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে দেশের সব সম্পদ লুটে বিদেশে পাচার করছে। এ কারণে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র চার মাস চলার মতো নিম্নপর্যায়ে পৌঁছেছে। ফলে দেশ এক ভয়ঙ্কর অমানিশায় নিমজ্জিত হতে যাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কার চেয়েও বাংলাদেশ মারাত্মক পরিস্থিতির শিকার হতে পারে আশঙ্কা করে মির্জা ফখরুল বলেন, অথচ সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা শুধু ব্যস্ত নিজেদের আখের গোছানো, লুটপাট নিয়ে। প্রতিটি উন্নয়ন কাজে অস্বাভাবিক বরাদ্দ দিয়ে অর্থ তসরুপ করছে। আর সেই তহবিল রক্ষায় জনগণের পকেট কাটছে নিত্যপণ্যসহ সব সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি করে। এমনকি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ সেবাখাতগুলোর দাম বাড়িয়েছে অসংখ্যবার। এর ঘানি টানতে হচ্ছে প্রতিটি নাগরিককে।

‘অথচ সরকারি দলের লোকজন আজ রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছে পরিণত হয়েছে। যারা এককালে ছেঁড়া স্যান্ডেল পরে ঘুরতেন তারা আজ লুটপাটের সহযোগী হয়ে দামী গাড়িতে চড়ে বেড়াচ্ছেন। এই অর্থ জনগণের। কিন্তু জনগণ আজ সব ধরনের অধিকার বঞ্চিত’, বলেন ফখরুল।

ফখরুল আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, নিজের ভোটটাও দিতে পারে না সাধারণ মানুষ। দিনের ভোট রাতে লুট করে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রেখে দেশকে চরম নৈরাজ্যে নিমজ্জিত করেছে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতার অহংকারে তারা এতটাই নিচে নেমেছে যে, প্রধানমন্ত্রীও অহরহ বেফাঁস কথা বলছেন। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনুস সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করেছেন।’

মীর্জা ফখরুল বলেন, এমন জনস্বার্থবিরোধী লুটেরা, খুনি ও হিংসাপ্রবণ সরকার আজ আমাদের বুকে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে। এদের ক্ষমতাচ্যুত করা ছাড়া জনগণের মুক্তি নাই। তাই দেশবাসী জনবান্ধব দেশপ্রেমিক দল বিএনপির দিকে চেয়ে আছে। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলে জনআকাঙ্ক্ষা পূরণে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে।

সৈয়দপুর শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক রোডস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত এই কর্মীসভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হেসেন ও রংপুর বিভাগীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আব্দুল গফুর সরকার। স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শাহীন আখতার শাহীন। সঞ্চালক ছিলেন সৈয়দপুর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রভাষক শওকত হায়াত শাহ।

কর্মীসভায় আরও বক্তব্য দেন রংপুর বিভাগীয় আহ্বায়ক সামসুজ্জামান শামু, রংপুর জেলা আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাবু, সৈয়দপুর জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এসএম ওবায়দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউল হক জিয়া, সৈয়দপুর পৌর আহ্বায়ক শেখ বাবলু, সদস্য সচিব এরশাদ হোসেন পাপ্পু, কিশোরগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম, নীলফামারী সদর উপজেলা সদস্য সচিব কাজী জুয়েল, সৈয়দপুর ওলামাদল যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সাইদুল ইসলাম, ছাত্রদল সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাবু, মহিলা দল সভাপতি রওনক আফজাল রিনু, কৃষকদল সদস্য সচিব সাদিদুজ্জামান সরকার দিনার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সদ্য প্রয়াত রংপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বিপুর স্ত্রী ও মেয়ের হাতে দলের পক্ষ থেকে তিন লাখ টাকার অর্থ সহায়তার চেক তুলে দেন মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/কেএম)