লক্ষ্মীপুরে ইটভাটার মালিকের নির্যাতনে শ্রমিকের মৃত্যু, আটক ২

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২২, ১৮:০২

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় ইটভাটার মালিকের নির্যাতনের শিকার হয়ে আনোয়ার হোসেন (২২) নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা। এ ঘটনা স্থানীয়ভাবে ধামাচাপা দেওয়ার খবর পেয়ে  বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় ওই ইটভাটার মালিক খলিল মাঝি ও তার ভাই খবির মাঝিকে আটক করা হয়।তারা একই এলাকার মো. সাদেকের ছেলে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার চরআলগীর চরহাসান থেকে তাদের দুজনকে আটক করা হয়।

নিহত ইটভাটার শ্রমিক আনোয়ার হোসেন চর হাসান-হোসাইন এলাকার আবদুস শহিদের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রামগতি উপজেলার চর আলগী ইউনিয়নের চর হাসান-হোসাইন এলাকার হতদরিদ্র  আবদুস শহিদের ছেলে আনোয়ার হোসেন ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতেন। খাগড়াছড়ির দিঘীনালার কেবি ব্রিকফিল্ডে খলিল মাঝির ভাই খবির মাঝির সাথে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন আনোয়ার। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাস কাজ করার থাকলেও আনোয়ার ৫ মাস কাজ করেন। এরপর বাড়িতে চলে আসেন। মাসখানেক আগে আবারও জোর করে আনোয়ারকে খাগড়াছড়ি দিঘীনালা কেবি  ব্রিকফিল্ডে পাঠায়। ১ মে আনোয়ার হোসেন আবারো বাড়িতে আসে। পরদিন খবির মাঝির ভাই খলিল মাঝির চরআলগীর নিজস্ব মালিকাধীন ইটভাটার অফিসে ডেকে নেয়। পরে আটকে রেখে হাত-পা বেঁধে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করেন।

এ ঘটনার খবর শুনে স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে ইটভাটা মালিকের ভয়ে কোন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে পারেনি আনোয়ার হোসেন। এক পর্যায়ে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন সে। মঙ্গলবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়া কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকায় প্রেরণ করেন।

কিন্তু পারিবারিক অর্থনৈতিক খারাপ থাকায় আনোয়ার হোসেনকে হাসপাতালে ভর্তি না করে বাড়িতে নিয়ে আসেন স্বজনরা। বুধবার রাতেই মারা যায় সে। পরে গোপনে চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুর নেতৃত্বে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ বিষয়টি জানার পর দুপুরে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহতের বাবা  আবদুস সহিদ বলেন, ইটভাটায় কাজ না করায় আমার ছেলেকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চান তিনি।

এদিকে  চরআলগী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনু ধামাচাপা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আনোয়ার হোসেনকে খবির মাঝি যে ইটভাটায় কাজ করতেন। সেখানে চড়-থাপ্পড় মারতে পারেন। কিন্তু খলিল মাঝির ইটভাটায় আটকে মারা হয়নি। আনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।

রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন মৃত্যুর ঘটনা নিশ্চিত করে বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য লক্ষ্মীপুর সদর হাসাপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশ ইটভাটার মালিক ও তার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এলএ)