সেই চোর ধরা: পকেট মারতে কমলাপুর গিয়ে ম্যানেজারের মোবাইল-টাকা চুরি করেন আজিজ

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২২, ১৯:৪২ | আপডেট: ১৯ মে ২০২২, ১৯:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজারের টাকা ও মোবাইল চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন আজিজ মোহাম্মদ (বাঁয়ে পাঞ্জাবি ও টুপি পরিহিত)

ঈদের আগে ভিড় হওয়ার কথা ভেবে গত ২৩ মার্চ সকালে পকেট মারতে কমলাপুর স্টেশনে যান আজিজ মোহাম্মদ। কিন্তু সংবাদ সম্মেলন চলার সময় সুযোগ বুঝে স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ারের মোবাইল ফোনসহ মানিব্যাগ নিয়ে সটকে পড়েন তিনি। ঘটনার ২৫ দিন পর তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় বুধবার রাতে তাকেসহ এ চক্রের আরও দুই সদস্য রনি হাওলাদার ও জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

ডিবি জানায়, গ্রেপ্তার চোর আজিজ একজন কোরআনে হাফেজ। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন মসজিদে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সৌদি আরবে ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন মালিকের গাড়ি চালকের কাজও করতেন তিনি। ড্রাইভিং করতে করতে তার গাড়ি চুরির নেশা হয়। বিএমডব্লিউ, লেক্সাসের মতো বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি গাড়িও চুরি করতেন তিনি। পরে দেশে এসে শিক্ষকতার পেশা বেছে নিলেও নেশার টাকা যোগারে ফের চুরির কাজে শুরু করেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান ঢাকাটাইমসকে এ তথ্য জানান।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সৌদি আরবে ২০১৫ সালে গাড়ি চুরির মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আজিজ মোহাম্মদ। ওই গাড়ি চুরির মামলায় তিন বছর সাজা হয় তার। পরে সাজা ভোগ করে ২০১৮ সালে দেশে এসে কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। কিছুদিন পরে মাদকের নেশায় জড়িয়ে যায় ওই ব্যক্তি। নেশার টাকা জোগাড় করতে মাদরাসায় মোবাইল চুরি করে ধরা পড়লে চাকরি চলে যায়। এরপর থেকে ঢাকা শহরে এসে বিভিন্ন মেসে অবস্থান নিয়ে চুরি করে আসছেন।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আজিজ মোহাম্মদ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি তিন বছর ধরে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, ঢাকা মেডিকেল, টিএসসি চত্বর, নগর ভবন, গুলিস্তান, ধানমন্ডি লেক ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০টি করে মোবাইল চুরি করে আসছেন। এরপর চোরাই মোবাইলগুলো গ্রেপ্তার রনি হাওলাদার ও জাকির হোসেনের কাছে বিক্রি করতেন। আসামিরা একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সক্রিয় সদস্য।

ডিবি গুলশান বিভাগের ডিসি বলেন, গত ২৩ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ারের অফিস কক্ষে ঈদুল ফিতরের অগ্রিম টিকিট বিক্রির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। এসময় স্টেশন ম্যানেজারের টেবিলের ওপরে রাখা তার দুটি মোবাইল ফোন, একটি ওয়ালেটের ভেতর প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ নগদ ৪৫ হাজার টাকা সুকৌশলে চুরি করে নিয়ে যান আজিজ। এই ঘটনার পরে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ ঘটনাটির ছায়া তদন্ত করতে থাকে।

বুধবার চোরাই মোবাইলসহ চোর আজিজ মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় গুলিস্তানের গোলাপশাহের মাজারসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ব্র্যান্ডের ১৭টি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করা হয়।

‘আজিজ মোহাম্মদ জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন যে তিনি সুকৌশলে সংবাদ সম্মেলন চলাকালে স্টেশন ম্যানেজারের ফোন এবং ওয়ালেট চুরি করে পালিয়ে যান।’

মোবাইল চুরির ঘটনায় রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে ও বংশাল থানায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আজিজের চোরাই কাজ আর বিক্রি

একটি মোবাইল চুরি করতে মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করে মাত্র ৪-৫ সেকেন্ডের মধ্যে পকেট থেকে মোবাইল চুরি করতে পারেন বলে স্বীকার করেছেন আজিজ। পরে সেই চুরি করা মোবাইলগুলো নিয়ে রনি হাওলাদার ও ফকিরাপুলের জাকিরের কাছে দেড়-দুই হাজার টাকায় বিক্রি করেন। জাকির চোরাই মোবাইলগুলো কিছু দিন নিজের কাছে রেখে লক ভাঙেন। আইএমইআই পরিবর্তন করে মানুষ বিক্রি করেন। এছাড়া বিক্রয় ডটকমে বিজ্ঞাপন দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ হাজার টাকা দামে বিক্রি করে আসছিলেন। এরমধ্যে যেসব মোবাইলের লক ভাঙতে ও আইএমইআই পরিবর্তন করতে পারেন না, সেগুলোপার্টস খুলে বিক্রি করতেন।

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এএইচ/ইএস)