সিলেটে বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়ছেই, তলিয়ে গেছে আশ্রয়কেন্দ্রও

মো. মুন্না মিয়া, সিলেট
 | প্রকাশিত : ১৯ মে ২০২২, ২০:৫৬

গত কয়েকদিন উজানের ঢলে ও টানা ভারী বর্ষণে সিলেট নগরসহ জেলার অন্তত ১০টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে মানুষজন। সেখানে গিয়েও পানিবন্দি অবস্থায় দিন কাটছে তাদের। একতলা বিশিষ্ট অনেক আশ্রয়কেন্দ্রের ভেতরেও বন্যার পানি উঠে গেছে। এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে সিলেটের নদনদীর পানি। গেল ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে দেড় ফিট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যাদুর্গতরাসহ নগরবাসী বিশুদ্ধ পানি সংকটে পড়েছেন। বন্যার কারণে সিলেট নগর ও জেলার প্রায় ৭ শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাঠদান বন্ধ রেখেছে। আর বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হলেও ৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৩৪৯ জন ব্যক্তি আশ্রয় নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ২৩৪ মেট্রিকটন চাল, ১৩ লাখ নগদ টাকা ও প্রায় ৩ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে।

জানা যায়, গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকেই সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। তবে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) ভোরে ও সকালে তীব্র বৃষ্টিপাত হলেও দিনভর ছিল হাল্কা রৌদ্রোজ্জ্বল। দিনের প্রায় সময়ও সিলেটের আকাশে রুদ্র থাকলেও মাঝেমধ্যে তীব্র গতিতে বৃষ্টিপাত হয়। এতে বন্যার পানি কোনোভাবেই কমে নাই। ভোর ও সকালের বৃষ্টির কারণে এক থেকে দেড় ফিট পানি বেড়েছে। যতোই সময় যাচ্ছে ততোই বন্যাদুর্গতদের ভোগান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যাদুর্গতরা নিরপাদ ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন। অনেকেই আবার ত্রাণ সংকটে রয়েছেন। ইতোমধ্যে সিলেট নগরের বেশির ভাগ জায়গাসহ জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ১০টি প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় ইতোমধ্যে জেলার প্রায় ৭শতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেক জায়গায় আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করেছে প্রশাসন। সেখানেও বন্যার পানি ডুকে পড়েছে। বিশেষ করে একতলা বিশিষ্ট ভবন ও ফ্লোরে বন্যার পানি ডুকে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বানভাসি।

বিশেষ করে আশ্রয়কেন্দ্রে পানি ডুকেছে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট উপজেলায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, অনেকগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের নিচতলায় পানি উঠেছে। আর একতলা আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে পানিবন্দি থাকায় জরুরি প্রয়োজনে নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র ঝুঁকি নিয়ে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।

সময় যত গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। বিভিন্ন উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন থাকায় নগরে ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব দেখা দিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার করতে হচ্ছে।

নগরের বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে আসছেন কিছু স্বেচ্ছাসেবী দল। বোতলভর্তি পানি ভ্যানগাড়িতে করে তারা বন্যাকবলিত এলাকায় বিতরণ করছেন।

নগরের উপশহরের বাসিন্দা রাসেল আহমদ বলেন, ‘বাসায় নাই বিদ্যুৎ। নিচের ফ্লোরে পানি। মানবেতর জীবনযাপন করছি। তীব্র পানি সংকটে রয়েছি। আমাদের মতো নগরের বিভিন্ন জায়গা মানুষ পানি সংকটে ভুগেছেন। বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।’

বন্যার কারণে পিছিয়েছে সিলেটে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা। আগামী ৩ জুন এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

কানাইঘাটের আবদুস শহীদ রাসেল জানান, গত দুই দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ঘরে প্রবেশ করেছে। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে না পারা মানুষজন ঘরেই অবস্থান করছে। ঘরের চৌকির নিচে পানি আসায় সন্তানদের নিয়ে খাটের উপরে অবস্থান করতে দেখা গেছে অনেককে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিলেট কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নিলয় পাশা বলেন, ‘এক থেকে দেড় ফিট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে বৃষ্টিপাত হলে সহসাই বন্যার উন্নতি হবে না।’

আর আবহাওয়াবিদ খো. হাফিজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিজলি চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে।

তিনি আরও বলেন, একই সঙ্গে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ সময় সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

সিলেট জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের জন্য আমরা ৩২৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছি। ইতিমধ্যে ৯৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৭৩৪৯জন আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও ২৩৮টি গবাদিপশু বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের ২৩৪ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৩ লক্ষ টাকা এবং ২৭৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার প্রদান করা হয়েছে।’

জেলার প্রায় ৭শতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে উল্লেখ করে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) ইয়াসমিন নাহার রুমা বলেন, ‘পাঠদান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ক্ষতি তো হবেই। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগে তো আমাদেরও কিছু করার নেই। পানি কমলে এই ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :