জমি বিক্রির কমিশনের ভাগ দিতে না চাওয়ায় হত্যা

প্রকাশ | ১৯ মে ২০২২, ২১:৩৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঢাকার খিলক্ষেতে আলোচিত মজিবর রহমান হত্যার দেড় বছর পর এর রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটি জানিয়েছে, জমি বিক্রির কমিশনের ভাগের টাকা দিতে না চাওয়ায় মজিবর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় মো. রাসেল  নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

নিহত মজিবর রহমান ঢাকার খিলক্ষেত থানার ডেলনা গ্রামের আছিম উদ্দিনের ছেলে।

গ্রেপ্তারকৃত রাসেলের বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, রাসেলসহ অন্যরা এবং নিহত মজিবুর রহমান জমি কেনা-বেচার মিডিয়া হিসেবে কাজ করত। খিলক্ষেতের মোড়লপাড়া এলাকার মো. নছু মিয়ার পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকার ২৩ নম্বর সেক্টরের ৪০৪  নম্বর সড়কের ৮ নম্বর প্লটটি বিক্রি করার জন্য মজিবরকে দায়িত্ব দেয়। পরে মজিবর ও ঘটনায় জড়িত অপর ব্যক্তিরা প্লটটি ভালো দামে বিক্রি জন্য চূড়ান্তভাবে মূল্য নির্ধারণ করে। ওই প্লটটি বিক্রি করে যে লভ্যাংশ হবে তার অংশ ঘটনায় জড়িত আসামিরা মজিবরের কাছে দাবি করে। কিন্তু মজিবর যে টাকা লভ্যাংশ পাবেন তা আসামিদেরকে দিতে অস্বীকার করায় মজিবরের সঙ্গে আসামিদের মনোমালিন্য হয়। তারা মজিবরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার আগের দিন বিকাল তিনটার দিকে আসামিরা মজিবরকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। তারা পূর্বাচল ২৫ নম্বর সেক্টরে গজাজি বনের মধ্যে গিয়ে মজিবরের সঙ্গে মাদক সেবন করে। মজিবর মাদক সেবনের পর ঘটনায় জড়িত আসামিরা মজিবরের কপালে একটি ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়। তখন মজিবর চিৎকার দিলে তারা মজিবরের হাত ধরে বুকের ওপর বসে পা ধরে। পরে প্লাস দিয়ে পায়ের নখ উঠায়। ওই সময়ে মজিবর চিৎকার দিলে আসামিরা তার গলা চেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। 

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন ঘটনাটি প্রায় দেড় বছর আগের ঘটনা। মজিবরের বাড়ি খিলক্ষেত থানা হলেও তিনি মূলত রাজউক পূবার্চল এলাকার প্লট বিক্রয়ের মিডিয়া হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনায় জড়িত আসামিরা  মজিবরের মত একই কাজ করত। ডিএমপির খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকায় নছু মিয়া নামের একজন ব্যক্তির প্লট বিক্রির মিডিয়া হিসেবে মজিবর কাজ করে। ঘটনায় জড়িত রাসেল ও অন্যান্য আসামিরা মজিবরকে ওই প্লট বিক্রির কাজে সহায়তা করে। কিন্তু মজিবর প্লট বিক্রয়ের পর যে লভ্যাংশ পাবে তা অন্য কোন ব্যক্তিকে দিতে অস্বীকার করে।  তখন  এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার রাসেল সহ তার সহযোগীরা ঘটনার দিন মজিবরকে ডেকে এনে মাদক সেবনের কথা বলে নির্মমভাবে হত্যা করে।

২০২০ সালের ২৮ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে মজিবর রহমানকে ব্যবসায়িক কাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। ওই দিন দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে তার স্ত্রীর সাথে পারিবারিক বিষয়ে কথা বলে। পরবর্তীতে মজিবর রহমানের মোবাইল ফোনে তার পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।  ঘটনার পরের দিন দুপুর  সোয়া ১২ টার দিকে মজিবরের প্রতিবেশী স্থানীয় সাবেক ইউ.পি সদস্য নাঈম বেপারী  ওরফে নাইম মেম্বার ঘটনাস্থলের পার্শ্বের লোকজনের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে মজিবর রহমানের স্ত্রীকে ফোন করে জানান,  কালীগঞ্জ থানার পারাবর্থা গ্রামের পূর্বাচল ২৫ নম্বর সেক্টর ওয়েস্টান চত্বরের অনুমান ৩০০ থেকে ৪০০ গজ পশ্চিমে ৫৩ নম্বর গজারী বনের ভেতরে তার স্বামীর লাশ পড়ে আছে। এ ঘটনায় মজিবর রহমানের স্ত্রী রুমি বেগম বাদি হয়ে কালিগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।  মামলাটি কালিগঞ্জ থানা পুলিশ প্রায় তিন মাস তদন্ত করে কোন রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় মামলাটি তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ সদর দপ্তর  গাজীপুরের পিবিআইরক তদন্তের নির্দেশে  দেয়।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদারের সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. হাফিজুর রহমান মামলাটি তদন্ত করেন। পিবিআইয়ের একটি দল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে খিলক্ষেত থানার পাতিরা এলাকা থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করে। রাসেলকে গ্রেপ্তারের আদালতে তোলা হলে তিনি নিজেকে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামিদের নাম উল্লেখ করে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জবানবন্দি দেন।

গ্রেপ্তার মো. রাসেল  ঢাকার খিলক্ষেত থানার পাতিরা গ্রামের  মৃত রুহুল আমিনের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/১৯মে/এএ/এআর)