‘যুবলীগ নেতার কাণ্ড’: ফুঁসে উঠছে কুমারজানীবাসী

প্রকাশ | ২০ মে ২০২২, ১৯:৪৪

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক জিএস সেলিম সিকদারকে না চেনায় নিরাপত্তা কর্মীর চুল কাটার ঘটনায় ফুঁসে উঠছেন বাওয়ার কুমারজানী গ্রামবাসী। গত সোমবার রাতে উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী  রোডে অবস্থিত একটি ভবনের নিরাপত্তা কর্মী মো. আনোয়ার খানের মাথার চুল কেটে নেন সেলিম সিকদারের লোকজন। এ ঘটনার পর দিন গত মঙ্গলবার নিরাপত্তা কর্মী আনোয়ার খান অভিযুক্ত সেলিম সিকদারসহ চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে অভিযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ করেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতাও পেয়েছে পুলিশ।

এ বিষয়ে ‘ঢাকা টাইমস’ এ ‘যুবলীগ নেতার কাণ্ড’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে বিভিন্ন মহলে নিন্দার ঝড় উঠে।

এদিকে ঘটনার পাঁচ দিন পরও অভিযুক্তদের কেউ আটক বা গ্রেপ্তার না হওয়াতে আনোয়ার খানের গ্রাম বাওয়ার কুমারজানীর লোকজন ফুঁসে উঠছেন। গত বুধবার বিকালে গ্রামবাসী বাওয়ার কুমারজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সভা করেন। তারা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।

অভিযোগে থেকে জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সেলিম সিকদার ওই রোডের খান টাওয়ার নামে আবাসিক ভবনের দ্বিতীয় তলার এক ভাড়াটিয়ার বাসায় যান। বাসায় ঢোকার সময় পাশেই নিরাপত্তা কর্মী আনোয়ার খান বসেছিলেন। এসময় তিনি দাঁড়িয়ে সম্বোধন না করার পাশাপাশি তাকে (সেলিম) না চেনার অপরাধে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। ওই বাসা থেকে ফেরার সময় নানা কথা বলে হুমকি দেন। এর ২০ মিনিট পর সেলিমের ছোট ভাই শামীম সিকদার, সহযোগী লাভলু মিয়াসহ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভবনের সামনে থেকে আনোয়ার খানকে ভবনের পশ্চিম পাশে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এক পর্যায়ে তারা আনোয়ার খানের হাত-পা চেপে ধরে কেচি দিয়ে মাথার চুল কেটে দেন। একই সঙ্গে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে আসেন। পরে তিনি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নেন। এদিকে মারধর ও চুল কেটে দেয়ার ঘটনায় আনোয়ার ও তার পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

আনোয়ার খান বলেন, ‘ওনি (সেলিম) আমাকে বলে তুই আমারে দেইখ্যা দাড়াইলি ন্যা ক্যা। তখন সেলিমের সহযোগী মোশারফ বলে তুই বেদব। ওর কাছে মাফ চা। তখন আমি কয়েকবার মাফ চাওয়ার পরও সেলিম আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। ২০ মিনিট পর তার ছোট ভাই শামীম সহযোগী লাভলুসহ তিন চারজন আইসা আমারে মারধর করে। একজন পেটে ছুরি ধরে। এরপর লাভলু আমার চুল কাটে। আর অন্যরা মারধর করে।’

মুঠোফোনে গত মঙ্গলবার সেলিম সিকদার বলেন, ‘পুলাপানে কি ঘটনা ঘটাইছে। সন্ধ্যার সময় (মঙ্গলবার) বিচারের ডেট দিছিলাম কেউ আসল না। আমার সাথে বেয়াদবি করছিল। আমি ওনে যাই নাই। আমি কোন চড় থাপড় দেয় নাই। এইডা শুনার পরে পুলাপানে বোধ হয় য্যায়া ওর যে বড় বড় চুল আছিল তা ক্যাইটা দিছে। কেউ অপরাধ কইরা থাকলে আমি বিচার কইরা দিমু।’

এদিকে ঘটনার পাঁচ দিন পরও অভিযুক্তদের কেউ আটক বা গ্রেপ্তার না হওয়াতে আনোয়ার খানের গ্রাম বাওয়ার কুমারজানীর লোকজন ফুঁসে উঠছেন। গত বুধবার বিকালে গ্রামবাসী বাওয়ার কুমারজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে সভা করেন। তারা দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি করেন।

মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, যদি চুল কাটার ঘটনা সত্য হয় তবে তা ফৌজদারি অপরাধ।

মির্জাপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ জানান, এসব কাজ কোন সুস্থ মানসিকতার লোক করতে পারে না। তিনি এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। 

অভিযোগ তদন্তের দায়িত্বে থাকা মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাজাহান খান বলেন, অভিযুক্ত সেলিমের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।

মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ্ মাসুদ করিম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে বিষয়টির সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২০মে/এলএ)