ট্রাস্টি বোর্ডের কর্মকাণ্ডে নর্থ সাউথের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও অসন্তোষ

প্রকাশ | ২১ মে ২০২২, ১২:৪১ | আপডেট: ২১ মে ২০২২, ১৩:৫১

ওমর ফারুক, ঢাকাটাইমস

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। তবে সম্প্রতি ট্রাস্টি বোর্ডের বিরুদ্ধে প্রায় ৩০৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা আলোচনার জন্ম দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

নর্থ সাউথের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা বলছেন, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিলাসবহুল খরচের কথা তারা জানেন। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে তাদের সরাসরি কোনো কর্মকাণ্ড না থাকায় শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে চাইলেও পদক্ষেপ নিতে পারেন না।

আবার শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলছেন, ট্রাস্টি বোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক আওতার বাইরে বলে শিক্ষার্থীরা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে জানার পরও কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড আর্টিকেলস (রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনস) অনুযায়ী নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি একটি দাতব্য, কল্যাণমুখী, অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানেই ক্যাম্পাসের জমি কেনা বাবদ ব্যয় দেখিয়ে ৩০৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদক।

এছাড়া গবেষণায় উন্নয়ন খাত দেখিয়ে ১০টি বিলাসবহুল গাড়ি কেনে নর্থ সাউথ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আদৌ তা কোনো গবেষণার কাজে ব্যবহৃত হয়নি। সম্প্রতি বিলাসবহুল ১০টি গাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা ইউনিভার্সিটির তহবিলে জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ট্রাস্টি বোর্ডের অনিয়ম নিয়ে ঢাকাটাইমস কথা বলেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ও বর্তমান বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের এক শিক্ষার্থী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের বিলাসবহুল খরচের কথা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই জানেন। তবে ট্রাস্টি বোর্ডের সঙ্গে যেহেতু ছাত্রদের তেমন কোনো ইন্টারএকশন নেই, তাই তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা অতোটা ওয়াকিবহাল নয়।’

বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসনিকভাবে ভিসি বা রেজিস্টারের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ থাকে। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ড শিক্ষার্থীদের আওতার বাইরে তাদের কোনো কাজকর্মে শিক্ষার্থীরা হস্তক্ষেপ করতে পারে না। ফলে অনিয়ম দুর্নীতির কথা শুনলেও কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগ শিক্ষার্থীদের নেই বললেই চলে।’

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কিংশুক (ছদ্মনাম) বলেন, ‘নর্থ সাউথের একটি অন্যতম সমস্যা হলো প্রশাসনিক ক্ষেত্রে ট্রাস্টি বোর্ডের হস্তক্ষেপ। অনেক ক্ষেত্রেই এই হস্তক্ষেপ বিরূপ প্রভাব ফেলে। ক্ষেত্রবিশেষে ভিসির চাইতেও অধিক প্রভাব খাটান তারা।’

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রেদওয়ান হেসেন বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ড শিক্ষার্থীদের টাকাতে চললেও তাদের কর্মকাণ্ড বিতর্কিত। গাড়ির বিষয়ে ট্রাস্টি বোর্ড বলেছিলো, নর্থ সাউথের প্রশাসনিক কাজে গাড়িগুলো কেনা হয়েছে। বিদেশি অতিথি বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিদের জন্য গাড়িগুলো ব্যবহৃত হবে। অর্থাৎ যা নর্থ সাউথের সম্পত্তি। কিন্তু গাড়িগুলোর ব্যক্তিগত ব্যবহার করা হয়েছে।’

তাসকিন মাহমুদ নামে ইসিই বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়মে আমরা প্রতিবাদ করে প্রশাসনিকভাবে তার সমাধান করেছি। কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ড প্রশাসনিক আওতার বাইরে বিধায় আমরা চাইলেও তাদের বিষয়ে কেনো পদক্ষেপ নিতে পারি না।’

(ঢাকাটাইমস/২১মে/ডিএম)