ভারতে গ্রেপ্তার আলোচিত বাংলাদেশি যারা

প্রকাশ | ২২ মে ২০২২, ০৭:৪৫ | আপডেট: ২২ মে ২০২২, ১৪:০৯

সিরাজুম সালেকীন, ঢাকাটাইমস

দেশে অপরাধ করে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেকে কৌশলে পাশের দেশ ভারতে পালিয়ে যান।  দেশটিতে গিয়ে অনেকে দীর্ঘমেয়াদে বসবাস শুরু করেন। ভুয়া পরিচয়ে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান ও আধার কার্ড জোগাড় করে নেন তারা। ভারতীয় পাসপোর্ট করে দেশ-বিদেশ ঘুরেও বেড়ান। বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অনেকে সেখান থেকে দেশে নিয়ন্ত্রণ করেন সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি।

পলাতক বেশির ভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেও অনেকে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হন বিভিন্ন সময়। সবশেষ আটক হন বাংলাদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে পলাতক প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার।
এর আগে যারা আটক হয়েছেন, সেই তালিকায় রয়েছেন- ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী, জঙ্গি কিংবা পুলিশ কর্মকর্তা। অনেককে দেশে ফেরত এনে বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। আবার অনেককে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।

পি কে কাণ্ডের পর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সিপিএমের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমান বসু বলেছেন, বাংলাদেশে অপরাধ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়াটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে। শেখ মুজিবের ঘাতকরাও পশ্চিমবঙ্গ থেকে ধরা পড়েছে।

 

নিজের নাম বদলে ভারতে পি কে

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে দেশজুড়ে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে পি কে হালদারের নাম আলোচনাতে আসে। ওই মাসেই বেনাপোল-পেট্রাপোল দিয়ে ভারতে ঢোকেন দেশজুড়ে আলোচিত পি কে।

হাজার কোটি টাকা পাচারকারী পলাতক পি কে হালদার বাবা-মায়ের দেওয়া নাম পাল্টে নিজে ধারণ করেন শিবশঙ্কর হালদার নাম। এই পরিচয়ে ভারতীয় নাগরিকত্ব নেওয়ার পাশাপাশি পি কে জালিয়াতি করে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, প্যান কার্ড ও আধার কার্ড নিয়েছিলেন। 
দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাকে আটকের পর জানায়, পি কে হালদারের সহযোগীরাও একইভাবে পরিচয় গোপন করে সেখানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন। জালিয়াতি করে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়েছেন তারা। ২০১৬ সালের বন্দিবিনিময় চুক্তি অনুযায়ী পি কে হালদারকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেয়া হবে।

 

২৫ বছর ভারতে পালিয়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর খুনি মাজেদ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ছিলেন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ। গত ২৫ বছর ধরে ভারতে পালিয়ে ছিলেন। করোনাভাইরাস আতঙ্কে সেখান থেকে ২০২০ সালের ১৬ মার্চ ময়মনসিংহের সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন তিনি। দেশে ফেরার গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একই বছরের ৬ এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। 

ভারতের বেডফোর্ড লেনে বিহারি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে আব্দুল মাজেদ হয়ে গিয়েছিলেন আলী আহমেদ। সেই নামেই তৈরি হয়েছিল ভারতীয় নাগরিকত্বের সমস্ত নথি। গ্রেপ্তারের ছয় দিনের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ১২ এপ্রিল তাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। মাজেদ শুধু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডেই অংশগ্রহণ করেননি, তিনি জেলহত্যায়ও অংশ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিল।

 

শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যাক্সন কলকাতায় গ্রেপ্তার

চট্টগ্রামের শিবির ক্যাডার নূরনবী ওরফে ম্যাক্সনকে এ বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। উত্তর চব্বিশ পরগনার ডানলপ নর্দান পার্ক এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অস্ত্র মামলায় ২১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত এ সন্ত্রাসী জাল পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে নাম বদলে তমাল চৌধুরী পরিচয়ে কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন।

কলকাতা ও চট্টগ্রাম পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ম্যাক্সন নিজেকে পরিচয় দিতেন মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে। দালাল ধরে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট জোগাড় করেন। চট্টগ্রামের পুলিশই ম্যাক্সনের কলকাতায় অবস্থানের বিষয়ে কলকাতা পুলিশকে তথ্য সরবরাহ করে। পরে তাকে ধরতে অভিযানে নামে সেখানকার সিআইডি পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর ম্যাক্সনের সঙ্গে থাকা কাগজপত্র ঘেঁটে পুলিশ জানতে পারে আত্মগোপনে থাকতে নিজের নামের পাশাপাশি বাবার নামও পরিবর্তন করে ম্যাক্সন। বাবার নাম রাখেন অসীম চৌধুরী।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল সারোয়ার বাবলা ও নূরনবী ম্যাক্সন। দুজনের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। একে-৪৭-এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন দুজন। 
২০১৭ সালে গোপনে জামিন নিয়ে দুবাই পালিয়ে যায় এই দুই সন্ত্রাসী। পরবর্তীতে ম্যাক্সন দুবাই থেকে কলকাতায় চলে আসে।

বর্তমানে ম্যাক্সনের বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় সাতটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। তাকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে অথবা কূটনৈতিক চ্যানেলে যোগাযোগ করে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।

 

নারায়ণগঞ্জ সাত খুনের পরিকল্পনাকারী নূর হোসেন

২০১৪ সালের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে খুন করা হয় নূর হোসেনের পরিকল্পনায়। এই হত্যাকাণ্ডের পর ভারতে পালান নূর হোসেন। ২০১৫ সালের ১ জুন কলকাতার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন বাগুইহাটির একটি ভবন থেকে আটক করা হয় আলোচিত সাত খুন মামলার প্রধান আসামিকে। 

একই বছরের ১২ নভেম্বর ভারত সরকার নূর হোসেনকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে। দেশটির কয়েকজন ব্যক্তি নূর হোসেনকে সেখানে থাকার সুযোগ করে দেয়।

ট্রাকচালকের সহকারী হিসেবে জীবন শুরু করা নূর হোসেন ১৯৯২ সালে বিএনপির সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে যোগ দেন বিএনপিতে। সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়। 

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিশও পাঠানো হয়। ২০০৮ সালে এলাকায় ফিরে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে তিনি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় ছয়টি হত্যা মামলাসহ ২২টি মামলা রয়েছে।

 

মোল্লা মাসুদ ভারতে গ্রেপ্তার

বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ ভারতে পালিয়ে ছিল বলে বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল। বিভিন্ন সময় পলাতক সন্ত্রাসীদের যে তালিকা বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে দেওয়া হয়, তাতে মোল্লা মাসুদের নাম ছিল। এ ছাড়া মোল্লা মাসুদের নামে ইন্টারপোলের ‘রেড নোটিশ’ ছিল।

২০১৫ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশে অন্তত ১০টি হত্যা মামলার আসামি মোল্লা মাসুদ। 
প্রায় দেড় দশক আগে ২০০১ সালে সরকার ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করলে মোল্লা মাসুদ ভারতে পালিয়ে যান। রাজধানীর মগবাজার এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া মাসুদ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছিলেন বলে ‘মোল্লা মাসুদ’ নামে পরিচিতি পান।

৯০-এর দশকে মোল্লা মাসুদ একসময় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী কালা জাহাঙ্গীরের শিষ্য ছিলেন বলেও মনে করা হয়। মগবাজারে বিশাল সেন্টারের একটি দোকান নিয়ে অন্তঃকোন্দলের কারণে মুরাদ নামের এক যুবককে হত্যার মধ্য দিয়ে অপরাধ জগতে পা রাখেন মোল্লা মাসুদ। আরেক সন্ত্রাসী ‘মুরগি মিলন’ হত্যাকাণ্ডেও নাম আসে মাসুদের।

ভারতের কারাগারে বন্দি এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া আটকে গেছে। তাকে দেশে আনার উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণে সৃষ্ট স্থবিরতায় সেই উদ্যোগ গতি হারিয়েছে।

 

ভারতের জেলে সুব্রত বাইন

২০০৩ সাল পর্যন্ত সুব্রত বাইন ছিল ঢাকার অপরাধ জগতের প্রভাবশালী চক্র সেভেন স্টার গ্রুপের প্রধান। ২০০১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছিল, তার মধ্যে ত্রিমাতি সুব্রত বাইন অন্যতম। ৩০ মামলার এই আসামি গ্রেপ্তার এড়াতে ২০০৩ সালে দেশ ছেড়ে ভারতে পালান।

প্রায় নয় বছর পর ২০১২ সালে ভারতে গ্রেপ্তার হন বাংলাদেশ পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন। গ্রেপ্তারের পর থেকে ভারতের কারাগারে আছেন তিনি।  

১৯৯১ সালে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতা মুরাদকে হত্যার মধ্য দিয়ে কুখ্যাত সন্ত্রাসী হিসাবে সুব্রত বাইনের অভিষেক হয়। তখন সুব্রত বাইনের পরিবার থাকত মগবাজারে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় পলাতক জীবন বেছে নেয় এই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী।

 

শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ

পুলিশের তালিকাভুক্ত পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ। ইন্টারপোলেও তার নামে রেড অ্যালার্ট আছে। 
২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে ডিবির দুই ইন্সপেক্টরকে হত্যা করে আলোচনায় আসেন জিসান। এর পরে দীর্ঘ সময় আত্মগোপনে থেকে ২০০৫ সালে জিসান ভারতে চলে যান। সেখানে ২০০৯ সালে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। ছাড়া পাওয়ার পর কলকাতায় বসেই নিয়ন্ত্রণ করতেন ঢাকার চাঁদাবাজি।

জিসান ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে দুবাই যান। নিজের নাম পাল্টে আকবর নামে ভারতীয় পাসপোর্ট নেন। এরপর সেখান থেকেই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। পরে ভারতের পাসপোর্ট ব্যবহার করে জার্মানিতে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পান বলে জানা যায়।

২০১৯ সালে দুবাইয়ে জিসান গ্রেপ্তার হয়েছে বলে বাংলাদেশের পুলিশ দাবি করলেও পুলিশ সদর দপ্তর গোলকধাঁধায় পড়ে। আকবর নামে এক ভারতীয় গ্রেপ্তারের পর এই গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়। জিসানের নামে মালিবাগ, মগবাজার, খিলগাঁও এলাকায় একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে।

 

মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া মোস্ট ওয়ান্টেড শীর্ষ সন্ত্রাসী জয়। ২০০৫ সালে সারা দেশে রেড অ্যালার্ট ও তার মাথার দাম ৫০ হাজার টাকা ঘোষণা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি কোথাও।

ধারণা করা হয়, জয় প্রথমে ভারতে পরে অন্য দেশে পালিয়ে গেছেন। তারেক রানা নামের এক যুবককে ভারতীয় পুলিশ গ্রেপ্তার করলে তাকে তানভীরুল ইসলাম জয় বলে দাবি করে বাংলাদেশ। সেসময় তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়।

কিন্তু এর আগেই তারেক রানা জামিন পেয়ে যান। কারণ প্রমাণিত হয় তিনি ভারতীয় সিটিজেন। বাংলাদেশের কেউ না। এরপরই ২০১৪ সালে তারেক রানা কানাডা গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। দেশটির পুলিশের খাতায়ও মোস্ট ওয়ান্টেড। পুলিশ ধরতে গিয়ে দেখে তার অফিসে তালা। তারেক রানা পালিয়েছে। তখন কলকাতার আনন্দবাজারের রিপোর্টে তাকে বাংলাদেশের ‘দাউদ ইব্রাহিম’ বলা হয়।

২০০৬ সালের ১৪ মে বিদেশে কাজের জন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে যাওয়া সংস্থা ‘তুর্কি অ্যাসোসিয়েট’-এর মালিককে ৮ লাখ মার্কিন ডলার চেয়ে ফোন করেন জয়। টাকা না দেওয়ায় ওই সংস্থার অফিসে ঢুকে ছয়জনকে গুলি করে খুন করে তার দলবল। জয় তখন সিঙ্গাপুর থেকে ফোন করে টাকা চেয়েছিলেন।

 

বোমা মিজান

২০১৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে জেএমবির যে তিন শীর্ষ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমা মিজান তাদেরই একজন। এই ঘটনার পর মিজান পালিয়ে ভারতে চলে যান। সেখানে জেএমবির জঙ্গি তৎপরতায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২০১৮ সালের আগস্টে বেঙ্গালুরুতে গ্রেপ্তার হন ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার হাতে। 

বাংলাদেশে যাবজ্জীবন সাজার আসামি মিজানকে বিহারের বুদ্ধ গয়া এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় খুঁজছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। বলা হয়, একুশ শতকের শুরুর দিকে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তাইয়েবার কুখ্যাত জঙ্গি নসরুল্লাহর কাছ থেকে বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন মিজান। বোমা তৈরির দক্ষতার কারণেই সংগঠনে তার নাম হয় ‘বোমা মিজান’ বা ‘বোমারু মিজান’। একটি মামলায় ভারতের আদালতে মিজানের ২৯ বছরের কারাদণ্ড হয়।

 

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন

২০১৫ সালের শুরুর দিকে যখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে একের পর এক বিএনপির নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে, তখন দলটির মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্য দিতেন তখনকার যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে থেকে বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন। 

ওই বছরের মার্চে ঢাকার উত্তরা এলাকার একটি ভবন থেকে ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী’ পরিচয়ে একদল অস্ত্রধারী তাকে ‘অপহরণ’ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। নিখোঁজের দুই মাস পর মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ের একটি রাস্তা থেকে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। পরে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

মামলায় খালাস পেলেও প্রায় সাত বছর ধরে মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে আটকে আছেন বিএনপির সাবেক এই টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী। দীর্ঘদিনের নিঃসঙ্গ জীবনে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। 

বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যের পরিবার জানায়, অনুপ্রবেশের মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদ। কিন্তু সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দেশটির রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতে আপিলের পর সেটার আর নড়াচড়া নেই। ওভাবেই কাগজ পড়ে আছে। 

বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ২৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৫ সালে অবরোধের সময় বেশ কয়েকটি মামলা হয়।

 

বনানী থানার পরিদর্শক সোহেল রানা

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মালিক ও বনানী থানার পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক হন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সীমান্ত টপকে ভারতে প্রবেশের অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। এখনো সেখানেই আছেন।
ই-অরেঞ্জের এক হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দেয়ার লক্ষ্যে ভারতে পালিয়েছিলেন সোহেল। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহল দিয়ে তিনি দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেন। 

 

তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনে টিকটক বাবু আটক

এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে যৌন নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের পর সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে বাংলাদেশি এক যুবককে  গত বছরের ২৮ মে আটক করে কেরালা পুলিশ। বাংলাদেশি ওই যুবকের নাম হৃদয় বাবু ওরফে টিকটক বাবু। তার বাড়ি ঢাকার মগবাজার। নির্যাতনের শিকার মেয়েটিও একই এলাকার বাসিন্দা। 

গ্রেপ্তারের চার মাস আগে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে হৃদয়কে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর সে ভারতের কেরালায় চলে যায়। চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ওই মেয়েকেও নিয়ে যায়। সেখানে তাকে অনৈতিক কাজে জড়াতে চাপ দেওয়া হয়। এতে রাজি না হলে মেয়েটিকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করে তা ভিডিও ধারণ এবং পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়, বাবু টিকটকের আড়ালে সংঘবদ্ধ মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কাজ চলছে।

 

বঙ্গবন্ধুর খুনি মোসলেহউদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুল মাজেদ কলকাতায় গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জাতির পিতার আরেক পলাতক খুনি রিসালদার মোসলেহউদ্দিনকে আটক করা হয় বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা জানান। তবে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। 

২০২০ সালের এপ্রিলে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, মোসলেহউদ্দিনকে দেশের কোনো এক স্থলবন্দর দিয়ে ঢাকার কাছে হস্তান্তর করেছে ভারত সরকার। তবে কিছু গণমাধ্যমের দাবি, তিনি এখনো ভারতেই আছেন। তার সব নথি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। সেখান থেকে সবুজ সংকেত এলেই ভারত তুলে দেবে বাংলাদেশের সরকারের হাতে। মোসলেহউদ্দিন আত্মগোপন করে ছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার যশোরের একটি স্থানে। যশোর রোড সংলগ্ন ঠাকুরনগর  কলকাতা শহর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে। যদিও বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দূরত্ব মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের। মোসলেহউদ্দিন যে বাড়িতে থাকতেন, তার নাম মঞ্জু কুঠির। একেবারে নির্জন একতলা বাড়ি। এলাকাটি মূলত হিন্দু অধ্যুষিত। তাই মোসলেহউদ্দিন নাম পরিবর্তন করে হয়েছিলেন সমীর কুমার দত্ত। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ইউনানি চিকিৎসা। সমীর কুমার দত্ত ‘দত্ত ডাক্তার’ নামে পরিচিত ছিলেন এলাকায়।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/এসএস/মোআ)