পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে রুবলের নাটকীয় উত্থান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১৫:৫৪ | প্রকাশিত : ২২ মে ২০২২, ১৫:৪৩

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ঘিরে পুতিনের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে বেশ সমালোচনা হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। পশ্চিমা মিত্ররাও দেশটির ওপর চাপিয়েছে একর পর এক নিষেধাজ্ঞা। দেশটির অর্থনীতি, তেল-গ্যাসসহ বিশিষ্ট সব ব্যক্তি ও কূটনীতিকদের ওপরেও এসেছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবল নিষেধাজ্ঞাকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল বেশ নাটকীয়ভাবে শক্তি ফিরে পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ব্যবসা ও অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্বখ্যাত সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ বলেছে, রুবল গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে রুবল যে অবস্থায় ছিল, এখন তার চেয়েও শক্তিশালী হয়েছে।

ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পরপরই ইউরোপ এবং আমেরিকা মিলে রাশিয়ার ওপর নানা ধরণের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। যার ফলে রুবলের মান বেশ দ্রুত নিচের দিকে নামতে থাকে। পরিস্থিতির অবনতি দেখে অনেক বিশ্লেষকই ভেবেছিল অচিরেই মান হারাতে যাচ্ছে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল।

নিষেধাজ্ঞার ফলে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলায় রুবলের মান বাঁচাতে টানা দুই সপ্তাহ মস্কোর শেয়ার বাজার বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু মার্চের শেষের দিকে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে রুবল। রুবল ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে অনেকে নানা কারণ বিশ্লেষণ করছেন। মুদ্রাটি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সেটি অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হয়ে হয়েছে। রাাশিয়ার প্রতি সবার ধারণা পাল্টে দিয়ে এভাবে রাশিয়া ঘুরে দাঁড়াবে এটা ছিল ধারণাতীত।

রুবল ঘুরে দাঁড়ানোর মূল কারণ হচ্ছে, রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানী। অর্থাৎ গ্যাস ও তেল রপ্তানি। রাশিয়া শর্ত দিয়েছিল তাদের থেকে ইউরোপের দেশগুলো গ্যাস ও তেল ক্রয় করতে চাইলে সেটির মূল্য পরিশোধ করতে হবে রুবলে।

এই পদক্ষেপের কারণে রাশিয়ার মুদ্রা রুবল শক্তিশালী হয়েছে বলে দাবি করছে ব্লুমবার্গ। পাশাপাশি চীন-ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্য অব্যাহত রয়েছে রাশিয়ার। যার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের পথ খোলা রয়েছে।

রাশিয়ার রপ্তানি করা পণ্যের মধ্যে ৬০ শতাংশই হচ্ছে গ্যাস এবং তেল। দেশটির রপ্তানি আয়ের ৪০ শতাংশ আসে তেল ও গ্যাস বিক্রি থেকে। ইউরোপের দেশগুলো বৃহদাংশে রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের ওপর নির্ভরশীল। শুধু ইউরোপের দেশগুলোই প্রতিদিন তেল-গ্যাসের জন্য চল্লিশ কোটি ইউরো পরিশোধ করছে রাশিয়াকে।

রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তাতিয়ানা রোমানোভা বলেন, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল-গ্যাস রপ্তানির পরিমাণ কমেছে এ কথা ঠিক। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় রাশিয়া সেটি পুষিয়ে নিচ্ছে। পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে রুবলের চাহিদা ও যোগানের উপর।

তিনি আরো বলেন, রাশিয়ার ওপর নানা ধরণের নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে দেশটি অনেক জিনিস আমদানি করতে পারছে না এবং রাশিয়ার মানুষ আগের মতো বিদেশেও যেতে পারছে না। ফলে তাদের ডলার ও ইউরোর চাহিদা কমে গেছে। অন্যদিকে তেল-গ্যাস বিক্রি বাবদ অর্থ রুবলে কনভার্ট করে নেওয়ায় রুবলের চাহিদা বেড়েছে। এ কারণে ডলারের বিপরীতে শক্ত অবস্থান তৈরি করছে রুবল।

রুবলের চাহিদা বাড়াতে রাশিয়ার পদক্ষেপ

রুবলের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে রাশিয়ার সরকার দেশের ভেতরে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী রাশিয়ায় কর্পোরেট শেয়ার এবং সরকারি বন্ড ক্রয় করেছে। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পর তারা সেগুলো বিক্রি করতে চাইবে। তাদের এই চাওয়া পূরণ না করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন পুতিন।

পুতিনের পদক্ষেপের ফলে একদিকে রাশিয়ার স্টক ও বন্ড মার্কেটের পতন রোধ হয়েছে অন্যদিকে মুদ্রা দেশের বাইরেও যেতে পারেনি। রুবল তার অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সুদের হার দ্বিগুণ বাড়িয়েছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রুবল সঞ্চয়কারীদের জন্য প্রণোদনার ঘোষণাও দিয়েছেন পুতিন।

রাশিয়ার অনেক কোম্পানি বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করে ডলার, ইউরো এবং ইয়েন আয় করছে। কিন্তু এখন রাশিয়ার কোম্পানিগুলো বিদেশে ব্যবসা করে যে আয় করবে তার ৮০ শতাংশ রুবলে কনভার্ট করে নিতে হবে। এত রুবলের একটি বড় চাহিদা তৈরি হয়েছে। দেশের বাইরে অর্থ পাঠাতে হলেও ডলার বা ইউরোতে কনভার্ট করতে হতো। এখন সেটা বন্ধ করায় ডলার বা ইউরোর চাহিদা কমেছে এবং দেশের ভেতরে থাকা বৈদেশিক মুদ্রাও দেশেই রয়ে গেছে। এতে দরপতনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে রুবল।

তবে এ নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি এখন চাইলে নগদ সর্বোচ্চ ১০ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক তাতিয়ানা রোমানোভা।

রুবল কতদিন শক্তিশালী থাকবে?

বর্তমানে এক মার্কিন ডলার সমান ৬২ রুবল। তবে রুবল যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে তাতে এক ডলার সমান ৫০ রুবল হয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কিন্তু রুবল বেশি শক্তিশালী হলে তেল-গ্যাস রপ্তানি বাবদ রাশিয়ার আয় কমে যাবে। এ কারণে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে না রুবল বেশি শক্তিশালী হোক। কারণ রপ্তানি আয় থেকেই রাশিয়ার বাজেটের বড় একটি অংশ আসে। এজন্য জারি করা বিধি-নিষেধ কিছুটা শিথিল করেছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারপরেও রুবলের শক্তিশালী হওয়া ঠেকাতে পারছে না তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রুবল শক্তিশালী হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয় এবং এটি কতটা দীর্ঘমেয়াদি হবে তা নিয়ে সংশয় আছে। অধ্যাপক তাতিয়ানা রোমানোভাও বলেছেন, বাজারের স্বাভাবিক গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে নির্ধারিত না হওয়ায় ডলারের বিপরীতে রুবলের যে বিনিময়মূল্য সেটি বাস্তবসম্মত নয়। বরং বাজারে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২২মে/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

আন্তর্জাতিক বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ

দুই নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিকে গুলি করে হত্যার পর বালিচাপা দিলো ইসরায়েলি সেনারা 

গাজায় যুদ্ধাপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে আইসিসির প্রতি আহ্বান

কলকাতা বিমানবন্দরে চলল গুলি, নিরাপত্তা কর্মীর মৃত্যু

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে হুমকি পেলেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ

মস্কোতে কনসার্টে হামলা: এখনো প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ 

বাবা কোটিপতি, ২০ বছর ধরে জানতই না ছেলে!

গাজা যুদ্ধের ১৭৩তম দিন, প্রাণহানি বেড়ে সাড়ে ৩২ হাজার

মস্কোতে সন্ত্রাসী হামলা: ফের মৃত্যুদণ্ড চালুর আহ্বান রুশ আইনপ্রণেতাদের

দশ বছরে ৬৪ হাজার অভিবাসীর মৃত্যু, বেশিরভাগই সাগরে ডুবে: জাতিসংঘ

৩০ হাজার কোটি রুপি ব্যয়ে মিয়ানমার সীমান্তে বেড়া দেবে ভারত

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :