পরিশ্রমের ফসল অন্যের হাতে দিয়েছি, কেন বলছেন তারানা হালিম?

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২২, ০৭:৪৮ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২, ০৭:৫০

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস

অভিনয়ে জনপ্রিয়তা, আইনজীবীর পরিচিতি, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়তা- সবকটিতেই বেশ নাম তারানা হালিমের। তবে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ইদানীং বেশ চুপচাপ।

সব মিলিয়ে তারানা হালিমের কাছে প্রশ্ন রেখেছিল ঢাকাটাইমস। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি জানালেন তার রাজনৈতিক জীবনের নানা কথা। আলাপে উঠে এসেছে সমসাময়িক রাজনৈতিক গতিপ্রবাহের বিষয়ও।

তারানা বলছিলেন, ‘রাজনীতিতে যদি ব্যবসায়ীদের খুব বেশি ভিড় হয়, তখন রাজনীতিটা একটু পেছন দিকে চলে যায়। প্রকৃত রাজনীতিকরা একটু নিরুৎসাহিত হয়। আমার এমনই মনে হয়।’

নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারী আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন তারানা হালিম। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় ছিলেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। তবে বাদ পড়েন।

তারানা হালিম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি দল থেকে মনোনয়ন চেয়েছি কিন্তু পাইনি। আমার পরিশ্রমের ফসল বারবার অন্যের হাতে তুলে দিয়েছি এবং তা আমার দল আওয়ামী লীগের খাতিরেই।’

‘যারা জীবনে আন্দোলন-সংগ্রাম করে এগিয়েছে জনকল্যাণে হাটে-মাঠে-ঘাটে রোদে-পুড়ে বৃষ্টিতে ভেজেন, তারা যদি পেছনের সারিতে চলে যান, এরকম যদি রাজনীতি প্রবাহ হয়—তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার মনে হয় একটু পিছনে পড়ে যাব। এবং সেখানে খুব কম্পিটিশনলি সামনে যাবারও খুব একটা ইচ্ছা বোধহয় কাজ করবে না’—যোগ করেন তিনি।

ইদানীং আপনি বেশ চুপচাপ, কেন? প্রশ্নে সাবেক প্রতিমন্ত্রী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কোভিডের সময় আমরা কমবেশি সবাই ঘরেই ছিলাম। কোভিডের প্রকোপ কমেছে, এখন একটু কাজকর্ম বেড়েছে। একটি টিভি চ্যানেলে জীবন যেখানে যেমন নামে ডকুমেন্টারি করছি। আইনজীবী হওয়ার পর থেকে আসলে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম অভিনয় বা অন্যান্য কাজে মিডিয়া থেকে। তবে ডকুমেন্টারিটা করেই যাচ্ছি।’

‘তবে, হ্যাঁ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম। সেটা আন্দোলন-সংগ্রামে সবসময়ই সক্রিয় থাকি। আবার কখনো যদি আন্দোলন-সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয় তখন সক্রিয় হবো রাজপথে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে থাকার সময় আমি যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা ছিলাম। কাজেই আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়েই আমরা রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছি।’

কথায় কথায় তারানা জানান, বাদাম খেয়ে সারাদিন ট্রাকে করে আন্দোলন করেছেন, জনতার মঞ্চ করেছেন। টাঙ্গাইলের নাগরপুরেও দীর্ঘ নয় বছর ধরে কাজ করে আসছেন।

‘এরপর তো প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছি। আমরা কিন্তু মূলত কাজের মধ্য দিয়েই এসেছি। এটাও ঠিক দলের এবং নেত্রীর যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো রকম আন্দোলন-সংগ্রামে তার পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো’—বলেন তারানা হালিম।

তারানা হালিম মনে করেন, শেখ হাসিনার সরকার দেশের যে উন্নয়ন করেছে সেসব আর দলের ইতিবাচক দিকগুলো প্রচার করতে হবে। নানাভাবে বিভিন্ন ফোরামে তুলে ধরতে হবে।

ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘এটাও ঠিক যে রাজনীতির মধ্যে এখন এত বেশি ব্যবসায়ী ঢুকে গেছে আমরা তো ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজনীতি করতে পারব না। পারলেও কতদূর অগ্রসর হতে পারবো সেটাও প্রশ্ন। রাজনীতি অবশ্যই করতে চাই কিন্তু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিতে চাই না। কারণ তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমরা পারবো না।’

‘আমি প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় ট্রলার বলেন, প্লট বলেন, টেলিভিশনের লাইসেন্স বা রেডিওর লাইসেন্স কিছুই নিইনি। কখনো ব্যবসা করাটা আমার ফ্যামিলিতে ছিল না। সবাই সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন।’

রাজনীতিকে ব্যবসা বা টাকা বানানোর হাতিয়ার হিসেবে দেখেন না মন্তব্য করে তারানা হালিম বলেন, ‘আমি ব্যবসায়ী না। আমার দুই নম্বর টাকা নাই। রাজনীতিটাকে আমি কখনো সন্ত্রাসের হাতিয়ার হিসেবে দেখি না। রাজনীতিকে আমি জনকল্যাণের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করার জন্য দেখি।’

‘আমার কোনো আফসোস নেই। কারণ দিনশেষে আমার আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে, সেখানে আমি মাথা উঁচু করে জবাবদিহি করতে চাই যে, আমি দলের প্রতি, নেত্রীর প্রতি সৎ ছিলাম। আমি কর্মক্ষেত্রে সৎ ছিলাম। এই হিসাবগুলো আমি আল্লাহর কাছে দেবো, এই হিসেবগুলো আমি জনগণের কাছে দেবো।’

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/ডিএম)