ঘুরে দাঁড়াবে পুঁজিবাজার, আজই?

প্রকাশ | ২৩ মে ২০২২, ০৯:৪০ | আপডেট: ২৩ মে ২০২২, ১১:৩৪

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ঘুরে দাঁড়াবে দেশের পুঁজিবাজার এবং আজই। এই প্রত্যাশা নতুন করে শুরু হয়েছে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। ছোট কিংবা বড়- সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল তা অনেকখানি কেটে গেছে। কেন? অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনকে একগুচ্ছ দিকনির্দেশনা দেওয়ার পর এটা পরিষ্কার, পুঁজিবাজারের আকাশে থাকা কালো মেঘ সরতে শুরু করেছে। আজই পুঁজিবাজার ঘুরতে শুরু করবে। এই মত বাজার বিশ্লেষকদের। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকট কিংবা ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এসব নতুন কোনো ঘটনা নয়, যা পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার মতো। 

রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) আগের চেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে বাজারে এটি এখন পরিষ্কার। কারণ, গতকাল রবিবার সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সংস্থা পরিষ্কার নির্দেশনা দিয়েছে ব্যাংকের বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ সীমা বা এক্সপোজার লিমিটেডের বাইরে থাকবে। এই কথার অর্থই হলো আইসিবি আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় বিনিয়োগ করার সুযোগ পাচ্ছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে আজ থেকেই যে আইসিবি নতুন করে শেয়ার কেনা শুরু করবে তা পরিষ্কার।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আহমেদ রশিদ লালী ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এতদিন ধরে বাজার যেভাবে পড়ে যাচ্ছিল, বাজারে যেভাবে গুজব ছড়াচ্ছিল আর এই সবকিছুর জন্য একটা প্যানিকের সৃষ্টি হয়েছিল তা গতকাল অর্থমন্ত্রী, বিএসইসি আর বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন এর ফলে আমি মনে করি বাজার আজকেই তার গতি ফিরে পাবে ইনশাআল্লাহ এবং আমি খুব আশাবাদী। আর সবচাইতে বড় বিষয় হচ্ছে সরকার আর অর্থ মন্ত্রণালয় যে এই বিষয়টা নিয়ে বসেছে এটা খুবই আশাব্যঞ্জক। আমি আশা করি অর্থমন্ত্রীর যে নির্দেশনা তা বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপালন করবে।’ 

একজন বাজার বিশ্লেষক আলাপকালে ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আইসিবিকে দেওয়া দেড় শ কোটি টাকার তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল সেটির মেয়াদ বাড়িয়ে তহবিলের আকার দিগুণ করার সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য খুবই ইতিবাচক হয়েছে। আজ সোমবার থেকেই যেহেতু এই তহবিল থেকে বিনিয়োগ করা হবে তার সুফল যে পুঁজিবাজার পাবে তা খুবই নিশ্চিত করে বলা যায়।’

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুব আলী ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় পুঁজিবাজারকে চাঙা করার জন্য যে একগুচ্ছ নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসিকে দিয়েছেন তার সুফল পুঁজিবাজার পাবে এটাই স্বাভাবিক।’ 

এর পাশাপাশি রবিবার মার্জিন ঋণ সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারহাউজের দেওয়া ঋণের (মার্জিন ঋণ) অনুপাত যা আগে ১:৮ ছিল তা এখন থেকে বাড়িয়ে ১:১ করা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহকের নিজস্ব মূলধন ১০০ টাকা থাকলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তাকে আরও ১০০ টাকা ঋণ দিতে পারবে। তবে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব এখতিয়ার। যা বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ তৈরি করবে। জোরপূর্বক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করার প্রবণতা কমাতে বাধ্য হবে ব্রোকারেজ হাউজগুলো। শেয়ার বিক্রির চেয়ে কেনার প্রবণতা বাড়বে। 

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) প্রেসিডেন্ট ছায়েদুর রহমান ঢাকা টাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বাজারের অব্যাহত পতনের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় অর্থমন্ত্রী বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআরকে নিয়ে সমন্বয় বৈঠক করে যেসব নির্দেশনা দিয়েছেন তা আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করে দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এবং আজ থেকেই হয়তো এই যাত্রা শুরু হবে।’ 

এর আগে টানা দরপতন হতে থাকে দেশের পুঁজিবাজারে। গতকাল রবিবার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক পতনের মধ্যে দিয়ে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শুরু হয়। সেই সঙ্গে কমে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর ও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ।

এদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত ডিএসইতে ১৩৭ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। আর গত কার্যদিবসের একই সময়ে ১৭৮ কোটি ৫৯ লাখ ৩৩ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। সেই হিসাবে রবিবার প্রথম ঘণ্টায় লেনদেন কমেছে ৪০ কোটি ৯১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসই প্রধান বা ডিএসইএক্স সূচক ২৬.৭২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৬ হাজার ২৩১ পয়েন্টে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস বা শরীয়াহ সূচক ৫.৭২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৭৭ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২.৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ৩১৪ পয়েন্টে।

ডিএসইতে ৩৬৮টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১০১ টির, কমেছে ২২০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) আজ মূল্য সূচক পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শুরু করেছে। এই সময়ে সিএসইতে ৩ কোটি ৫ লাখ ১৯ হাজার ৭৩২ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/বিএস/এফএ)