ঢাকা মেডিকেলে এত দালাল! কী বলছে কর্তৃপক্ষ?

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২২, ০৭:৪৯

ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেলে প্রতিদিনই কমপক্ষে তিন থেকে চার হাজার রোগী আসেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আসেন বহির্বিভাগ থেকে সেবা নিতে।

বিপুল এই রোগীদের ঘিরে ঢাকা মেডিকেলে বেড়েই চলেছে দালালদের উৎপাত। দেশের এই অন্যতম প্রধান হাসপাতাল ঘুরে দালালদের হাতে রোগী বা তাদের স্বজনদের হয়রানি হতে দেখেছেন প্রতিবেদক।

তবে হাসপাতালটির পরিচালকের ভাষ্য, দালাল নিয়ে রোগীরা কোনো অভিযোগ করেন না। অবশ্য দালাল থাকলে তাদের ছবি বা তথ্য দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলছেন তিনি।

গত রবিবার সকালে ঢাকা মেডিকেলের বর্হিবিভাগে ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের আশপাশে ঘুরঘুর করছেন বেশ কয়েকজন দালাল। তারা রোগীদের কাছে গিয়ে টাকা দিলে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। রোগীদের তারা প্রলোভন দেখায়—এখানে অনেক ভিড়, চিকিৎসা পেতে দেরি হবে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে আক্রমনাত্বক আচরণের শিকার হতে হয় রোগী বা তাদের স্বজনদের।

সেদিন সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্হিবিভাগের টিকিট কাউন্টারে সিরিয়াল ধরেছেন শ খানেক সাধারণ রোগী। মধ্যবয়সী এক নারী দালাল চিকিৎসা নিতে আসা সাথী নামের এক রোগীর হাসপাতালে কেন এসেছে কী লাগবে তাকে বলতে বলেন।

চিকিৎসাপ্রত্যাশী নারীর স্বামী ওই দালালকে তাদের কিছু লাগবে না জানালে অনেকটাই উত্তেজিত হয়ে ওই নারী দালাল বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন, আমাদের সহযোগিতা না লাগলে আমরা কীভাবে চলবো?’

এসময় সেখানে কমপক্ষে ২০ জন নারী দালালকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন প্রতিবেদক। অভিযোগ রয়েছে, এই দালালদের সঙ্গে হাসপাতালের স্টাফদের নানা ধরনের খাতির আছে। ফলে সিরিয়াল ছাড়াই দালালরা অনেক কাজ দ্রুত করে দেন রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে।

বহির্বিভাগের নিউরো সার্জারী, অর্থপেডিকস, ক্যান্সার, গাইনি, মেডিসিন বিভাগের সামনে বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ দালালকে ঘোরাফেরা করেন। দালালরা রোগীদের ডাক্তার দেখাতে সময় লাগার কথা বলে বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালেও ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

ক্যান্সার বিভাগে পাবনা থেকে আসা সখিনা বেগম ঢাকাটাইমসকে জানান, তিনি ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। কেমোথেরাপী নেওয়া শেষ হয়েছে। এখন তার রেডিওথেরাপি করাতে হবে। তাই ঢাকা মেডিকেলে এসেছেন।

সখিনা বেগম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এক নারী এসে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেছে, এখানে থেরাপি দিতে গেলে কবরে চলে যেতে হবে। তার সঙ্গে পান্থপথের একটি হাসপাতালে গেলে কম খরচে থেরাপি দিতে পারবে বলেছে।’

রবিবার বেলা ১১টার দিকে টিকিট কাউন্টারের সামনে দেখা যায়, এক ব্যক্তির সঙ্গে ঝগড়া করছেন এক দালাল। প্রতিবেদক জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তি জানান, তিনি ভাঙা পা নিয়ে এসেছেন নাটোরের বড়ইগ্রাম থেকে।

জামাল উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমাকে এক দালাল এসে বলে এখানে ভালো চিকিৎসা পাবো না, তাই তার সঙ্গে যেন চাঁনখারপুলের একটি হাসপাতালে যাই, সেখানে নাকি কম খরচে ভালো ট্রিটমেন্ট। আমি তার কথায় রাজি হইনি বলে ওই দালাল উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ করে।’

এসময় সেই দালালের কাছে গিয়ে প্রতিবেদক তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সটকে পড়েন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন দালালের কাছে না পরিচয় জিজ্ঞেস করলে তারা কেউই নাম বলতে রাজি হননি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালদের বেপরোয়া উৎপাত নিয়ে জানতে চাইলে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দালাল থাকলে তাদের ছবি তুলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দালালের বিষয়ে কোনো রোগী তো আমাদের কাছে অভিযোগ করে না। তাহলে আমরা কী করবো? আপনার কাছে তথ্য থাকলে দেন, ছবি তুলে দেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

ঢাকাটাইমস/২৫মে/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :