সাধারণ সদস্যদের অভিযোগে ক্ষুব্ধ ইলিয়াস কাঞ্চন

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২২, ১০:৪৫ | আপডেট: ২৫ মে ২০২২, ১১:২৩

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। বর্তমানে যিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে জিতে তিনি এ পদে আসীন হয়েছেন। তবে শিল্পীদের নেতা হয়ে মোটেই স্বস্তিতে নেই ‘বেদের মেয়ে জোছনা’র নায়ক। শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির কার্যক্রম নিয়ে কয়েকজন সাধারণ সদস্যের অভিযোগে ভিষণ ক্ষুব্ধ তিনি।

গত ১৪ এপ্রিল ছিল পহেলা বৈশাখ। এর কয়েকদিন পরই রাজধানীর একটি রেস্তোরাঁয় অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী সমিতির ইফতার পার্টি। সমিতির সাধারণ কয়েকজন সদস্যের অভিযোগ, বেছে বেছে শিল্পীদের বৈশাখের উপহার দেওয়া হলেও তারা তা পাননি। অন্যদিকে ইফতার পার্টির দাওয়াত দেওয়া হয়েছে মোবাইলে এসএমএস দিয়ে, তাও কয়েকজন পাননি। এছাড়া শিল্পীদের সেভাবে খোঁজখবর নেয় না বর্তমান কমিটি।

এ নিয়ে একটু দেরিতে হলেও মুখ খুলেছেন সমিতির সভাপতি ও সমাজসেবক ইলিয়াস কাঞ্চন। সম্প্রতি তার সঙ্গে আলাপকালে তিনি ঢাকাটামসের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিল্পী সমিতি কেন উপহার দেবে? আমি তো নতুন নয়, এর আগে সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সে সময় এ ধরনের কোনো নিয়ম দেখিনি। মিশা-জায়েদরা এই রীতি চালু করেছে শুধু ভোটে জেতার উদ্দেশ্যে।’

ইলিয়াস কাঞ্চন পরিষ্কার জানিয়ে দেন, ‘৫০০ শিল্পীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নেওয়া সমিতির পক্ষে সম্ভব নয়। এরকম কোনো নিয়মও নেই। কারও সমস্যা থাকলে তারা সমিতিতে এসে যোগাযোগ করে সমস্যার কথা বলবে। যার সমস্যা তাকেই বলতে হবে।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘যে অভিযোগগুলো হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পী করেছে, সেগুলো করা কি সমিতির কাজ?’ আগে যারা নেতৃত্বে ছিল, তারা সমিতির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলে দাবি করেন অভিনেতা।

শিল্পী সমিতি শিল্পীদের সম্মানের জায়গা বলে মনে করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। আগে যারা সমিতির দায়িত্বে ছিল, তারা সেই জায়গাটি নষ্ট করে ফেলেছে বলে অভিযোগ তার। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, ‘এ ধরনের অনিয়ম ও সম্মানহানিকর কাজ অন্তত আমি করতে দেব না।’

শিল্পী সমিতির কার্যক্রম প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা তিনটি মিটিং করেছি। তবে জায়েদ খান ছলনার আশ্রয় নেওয়ায় একটি মিটিং বৈধ নয়। নিপুণকে সঙ্গে নিয়ে করা বাকি দুটি মিটিং বৈধ। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সকল সংগঠনকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। সবাই আমাদের সঙ্গে আছে। যা আগে ছিল না। সবাই একে অন্যের সমিতি এড়িয়ে চলত। সেসব এখন আর নেই। শিগগিরই তৃতীয় মিটিংয়ে নির্বাচনের সময় দেওয়া প্রতিশ্রুত কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’

গত দুই মিটিংয়ে জায়েদ-মিশা প্যানেলের পাস করা অনেকেই অংশ নেননি। তৃতীয় মিটিংয়েও না থাকলে সমিতির করণীয় কী? ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অন্য প্যানেল থেকে যারা পাস করেছে তারা কেন আসেনি বুঝতে পারছি না। তারা কেন একটি পোস্ট কেন্দ্রিক? যেখানে ইলিয়াস কাঞ্চন সভাপতি, সেখানে তারা আসতে পারে, তাদের মতামত দিতে পারে।’

প্রশ্ন রেখে নায়ক বলেন, ‘চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে নেতৃত্ব দিতে যারা দাঁড়িয়েছে এবং পাস করেছে, তাদের উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য ছিল শিল্পীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা। এখন যদি তারা না আসে, কাজ না করে, তাহলে দাঁড়াল কেন? সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে একটা সমাধান আসবে সেটার জন্য বসে থাকার কী আছে? কাজ হচ্ছে না, সময় চলে যাচ্ছে, এটা তো ঠিক হচ্ছে না।’

ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ‘নিয়ম অনুযায়ী তিন মিটিংয়ে কেউ অংশ না নিলে তার সদস্যপদ থাকে না। তার পরও কিছু শর্ত থাকে, কিছু ভদ্রতার বিষয় থাকে। পরবর্তী মিটিংয়ে না আসলে হয়ত তাদের চিঠি দেওয়া হবে। উত্তর না দিলে কিংবা ব্যাখ্যা নিয়ে চতুর্থ মিটিংয়ে আলোচনা হবে। আলোচনায় কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবে, তার উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে ইলিয়াস কাঞ্চনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন খল অভিনেতা মিশা সওদাগর। যিনি গত দুই মেয়াদে সমিতির সভাপতি ছিলেন। এবার তিনি হেরে যান। নতুন সভাপতি হন ইলিয়াস কাঞ্চন। এর আগে তিনি ১৯৮৯ সালে সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সে বার সভাপতি ছিলেন খল অভিনেতা আহমেদ শরীফ। তিন দশক পর ফের সমিতির নেতৃত্বে ইলিয়াস কাঞ্চন।  

এদিকে সম্প্রতি এই অভিনেতা এবং ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কলকাতা থেকে নায়করাজ রাজ্জাক নামাঙ্কিত আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন। চার দশকের ক্যারিয়ারে সাড়ে তিন শর বেশি সিনেমা ও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের জন্য তাকে এই সম্মান দিয়েছে দেশটির বেঙ্গল ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন চেম্বার অব কমার্স (বিএফটিসি)। পাশাপাশি সম্প্রতি তিনি ভিসতা ইলেকট্রনিক্সের পরিচালক হিসেবেও যোগ দিয়েছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫ মে/এমআই/এএইচ)