উপবৃত্তির নামে প্রতারণা, গ্রেপ্তার তিন

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২২, ১৫:৪৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

করোনার সময়ে আর্থিক অনুদান ও শিক্ষা উপবৃত্তির দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল একটি চক্র। ভুক্তভোগীদের অভিযোগে চক্রের তিনজন স্বক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি এলআইসি) একটি দল।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-মো. আশিকুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম সর্দার এবং মোক্তার হোসেন।

 

বুধবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানান সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।

 

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, সম্প্রতি উপবৃত্তি দেওয়ার নামে কয়েকটি প্রতারক চক্রের সদস্যরা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠাত। পরে তাদের ফাঁদে পা দিলে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা বের করে নিতো। উপবৃত্তির দেওয়ার নামে প্রতারণার বিষয়টি দেশজুড়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে সিআইডির এলআইসি শাখার একটি চৌকস দল প্রতারণায় জড়িত চক্র শনাক্ত ও তাদের কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে। এভাবেই একাধিক প্রতারক চক্র শনাক্ত করা হয়। ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতারক চক্রের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পরে প্রতারক চক্রের দুই সদস্য আশিকুর রহমান, সাইফুল ও মোক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

 

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার বলেন, তারা দুই থেকে তিন বছর ধরে উপবৃত্তি দেওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে আসছিল। প্রথমে শিক্ষাবোর্ডের নামে টার্গেটের মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে যোগাযোগের নম্বর হিসেবে প্রতারক চক্রের মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হতো। করোনার আগে শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হলেও করোনার সময়ে উপবৃত্তির টাকা বন্ধ রাখা হয়। চক্রটি এই টাকা বন্ধের সুযোগ নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হচ্ছে বলে লোভ দেখায়। প্রতারক চক্রটি পঞ্চম,অষ্টম এবং এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব চক্র সাধারণত তিন থেকে চার সদস্যের হয়ে থাকে। চক্রের প্রত্যেক সদস্যদের কাজ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে।

 

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, প্রথম সদস্য বিকাশ, নগদ, রকেটের দোকানে টাকা পাঠানোর বিকাশের দোকানে অবস্থান নেন। কৌশলে বিকাশ গ্রাহকদের লেনদেনের খাতা থেকে ছবি তুলে নেন। ওই ছবি ইমো, মেসেঞ্জার, হোয়াটঅ্যাপসের মাধ্যমে দ্বিতীয় সদস্যের কাছে পাঠায়। দ্বিতীয় সদস্যের কাজ হচ্ছে পিন নম্বর সংগ্রহ করা। তিনি ভুক্তভোগীকে ফোন করে কথাবার্তার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেন। এক পর্যায়ে উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। তখন ভুক্তভোগীকে তার বিকাশের পিন নম্বরটি যোগ অথবা বিয়োগ করতে বলে চক্রের প্রথম সদস্যকে বলতে হবে। ভুক্তভোগী ফাঁদে পড়ে পিন নম্বরটি যোগ অথবা বিয়োগ করে প্রতারক চক্রের কাছে দেন। তৃতীয় সদস্য তখন পাওয়া পিন কোডটি অসংখ্য বিকাশ নগদ রকেট অ্যপে সম্বলিত অপর একটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনের অ্যাপে লগ ইন করলে ভেরিফিকেশন কোড যায় ভুক্তভোগীর নম্বরে। তখন দ্বিতীয় সদস্য ওই ভেরিফিকেশন কোড ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নিয়ে নেন। যখনই ভুক্তভোগীর নম্বর কোথাও থেকে ক্যাশ ইন হয়, তখন দলের তৃতীয় সদস্য ওই টাকা দলের তৃতীয় সদস্য দলনেতার কাছে থাকা বিকাশ, নগদ রকেট নম্বরে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে দলনেতা প্রতারণার মাধ্যমে নেওয়া টাকা বিভিন্ন জেলায় অবস্থানরত তাদের পরিচিত ব্যক্তিদের কাছে পাঠিয়ে আবার দলনেতার নম্বর ফিরিয়ে আনেন। সবশেষে দলনেতা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে নিবন্ধন করা সিমকার্ডগুলো সংগ্রহ করে দলের সদস্যদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন।

 

গ্রেপ্তারকৃত মো. আশিকুর রহমান, সাইফুল সর্দার এবং নাজিম উদ্দিনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায়।

 

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এএ/ইএস)