ভালো নেই জাতিসংঘের রিয়েল হিরো উপাধিপ্রাপ্ত রূপসার আঁখি

এস এম মাহবুবুর রহমান, খুলনা
| আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ১৫:৫৭ | প্রকাশিত : ২৫ মে ২০২২, ১৫:৪৬

জাতিসংঘের রিয়েল হিরো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত রূপসার কিশোরী আঁখি ভালো নেই। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই মিললেও দরিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত তার পরিবার। জমি নিয়ে জটিলতায় মিনি গার্মেন্টস করার স্বপ্ন বান্তবায়ন না হওয়ায় মাস্ক কোম্পানির শ্রমিকদের মাস্ক তৈরি এখন তার জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। এক সময় আঁখিকে নিয়ে সংবাদ কাভারেজে মিডিয়া কর্মীরা সকাল বিকাল তাদের বস্তিঘরে হুমড়ি খেলেও এখন আর কেউ তার খবর রাখেন না। এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা নিয়মিত তার খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি এলাকার এই মেয়ের সফলতায় গর্ববোধ করেছেন। কিন্তু তারাও কেউ ফিরে দেখছেন না আঁখিকে। অনেকটা আক্ষেপ করে এসব কথা বললেন তার অসহায় বাবা-মা।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাস্ক তৈরি ও দরিদ্রদের মাঝে তা কম দামে বিক্রি করার জন্য জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ স্বীকৃতিলাভ করে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার বাগমারা গ্রামের মাছুদ মোল্লার কনিষ্ঠ এই কন্যা। ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট বিশ্ব মানবিক দিবস উপলক্ষে আরো চার বাংলাদেশিসহ আঁখিকে এই ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। জাতি সংঘের এমন ঘোষণায় রীতিমতো সাড়া পড়ে সর্বস্তরে। নিম্নবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা অতি সাদা মাঠা জীবন-যাপনের কিশোরী আঁখি হয়ে যায় বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনাম। টিভি চ্যানেলগুলি তাদের নিয়মিত সংবাদ প্রচার অনুষ্ঠান ছাড়াও বিশেষ প্রতিবেদন হিসেবে প্রচার করে আঁখিকে নিয়ে প্রতিবেদন। গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে আঁখি তার মত অসহায়দের নিয়ে গার্মেন্টস করার স্বপ্ন রয়েছে বলে জানায়। তার এই স্বপ্ন পুরণে এগিয়ে আসে খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মূর্শেদী ও তার সহধর্মিণী সারমিন সালাম। আঁখির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি খাস জমি বরাদ্দ দিয়ে সেখানে গার্মেন্টস করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পাশাপাশি প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের গার্মেন্টস সরঞ্জাম দেন তাকে। এসব সরঞ্জাম পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছিল আঁখি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। এসব মালামাল জায়গার অভাবে সঙ্গে করে আর নিয়ে যাওয়া হয়নি। আঁখির স্বপ্ন আটকা পড়ে নৈহাটী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে। এমপি সালাম মুর্শেদী আঁখির স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকারি জমি পাইয়ে দিতে নির্দেশনা দেন রূপসা উপজেলা প্রশাসনকে। যেখানে আঁখির স্বপ্নের নীড়সহ গড়ে উঠবে একটি মিনি গার্মেন্টস। সে মোতাবেক উপজেলার ইলাইপুরে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গড়ে ওঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি পাকা ঘরে ঠাঁই মেলে আঁখির পরিবারের। এমপির নির্দেশনা মোতাবেক ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশে থাকা খাস জমি তাকে বন্দোবস্ত দেয়ার লক্ষ্যে ভূমি অফিস থেকে মাপঝোখও করা হয়। করা হয় সীমানা নির্ধারণ। এরপর প্রায় ২ বছর অতিবাহিত হতে গেলেও জমি বরাদ্দ কার্যক্রম সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। এদিকে আঁখিসহ আরো ৬টি পরিবারের জন্য গড়ে ওঠা আশ্রয়ণ প্রকল্পে নেই কোন চলাচলের রাস্তা। যাতায়াত করতে হয় অন্যের বাড়ির উপর দিয়ে। একটি টিউবওয়লের পাইপ বসানো হলেও গত আট মাসেও মাথা লাগানো হয়নি। এক কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে পান করতে হয় ওই পরিবারগুলোর।

এ ব্যাপারে রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুবাইয়া তাছনিম বলেন, আঁখির স্বপ্ন পুরণে জমি বরাদ্দের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। জমি মেপে তাকে বুঝিয়েও দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই কাগজ-পত্র আঁখির হাতে তুলে দেওয়া হবে। এছাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের রাস্তা ও টিউবওয়েলের যে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুত সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :