পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় বন্ধুকে হত্যা

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২২, ২০:২৯

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

এক বন্ধুর পাওনা ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করা এবং আরেক বন্ধুর  স্ত্রীর চরিত্র নিয়ে কথা বলার কারণে শিপন নামের এক যুবককে খুন করেছে তার অপর তিন বন্ধু। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ ব্যুরো ইনভেটিগেশনের (পিবিআই) জ্ঞিাসাবাদের এক পর্যায়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য স্বীকার করেছে এই হত্যার সঙ্গে জড়িত মোস্তফা। তিনি আদালতেও নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় পিবিআইয়ের সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেটর চাঞ্চল্যকর শিপন হত্যার সাথে জড়িত মো. মোস্তফা মিয়াকে গত ২০ মে চট্টগ্রাম ইপিজেড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই সিলেট জেলার একটি দল।

গ্রেপ্তারকৃত মো. মোস্তফা মিয়া সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা থানার লামাহাজারাই গ্রামের আসাব উল্লার ছেলে।

নিহত শিপন মিয়া এবং মোস্তফা প্রায় এক বছর  আগে ঢাকায় এসে রাজ মিস্ত্রীর কাজ করতো। গত তিন মাস আগে শিপন মিয়া ঢাকা থেকে ফিরে রায়েদ নামের এক বন্ধুর সাথে মন্দিরখলা রাসেল সাহেবের কয়েল লাকড়ি তৈরির মিলে এক সাথে কাজ শুরু করে। শিপন মিয়া ও মোস্তফা এক সাথে ঢাকা থাকার  কারণে তাদের মধ্যে লেনদেন নিয়ে একটি বিরোধ ছিল। ওই বিরোধের জের ২০২১ সালের ২০ আগস্ট সকাল নয়টার দিকে মোস্তফা বাসায় এসে শিপন মিয়ার নাম ধরে ডাকাডাকি করে। তখন শিপনের স্ত্রী মুসলিমা ঘর থেকে বের হয়ে মোস্তফা মুসলিমাকে বলে তোমার জামাইরে কও আইতো, তারে অখন মারতাম নায়" তখন শিপন মিয়া বাড়িতে নাই বলে  মুসলিমা মোস্তফাকে  জানায়। তখন মোস্তফা ওই সময়ে শিপনের বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর ২২ আগস্ট রাত ১০ টার দিকে মোস্তফা ও রায়েদ সহ অজ্ঞাতনামা একজন শিপনকে তার বাসা থেকে চৌধুরীগাঁও নতুন বাজারে নিয়া যায়। ওইদিন রাক ১২ টার দিকে শিপন মিয়ার মুঠোফোনে তার ছোট ভাই রিপন আহমদ ফোন করলে একবার হ্যালো বলার পর আর কোন কথা বলতে পারে নাই। পরে রিপন ওই মুঠোফোনে বারবার ফোন করে, রিং হয় কিন্তু তার মোবাইল রিসিভ হয় নাই। এরপর আত্মীয় স্বজনরা চারদিকে শিপন মিয়াকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু তাকে খুঁজে না পাওয়ায় গত ২৫ আগস্ট দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি জিডি করে। শিপন নিখোঁজ হওয়ার পরপরই  মোস্তফা ছয় এলাকা থেকে চলে যায়। শিপন মিয়াকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকার সময়ে ৪ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার দিকে মোল্লারগাঁও গ্রামের নাজিরুল আলম সুমন দক্ষিণ সুরমা থানার লামাহাজরাই সিলেট-সুনামগঞ্জ বাইপাস সড়কের সামনে ছোয়াব আলীর নতুন বাড়ার দক্ষিণ পাশে ডোবার মধ্যে থেকে শিপনের পচাগলা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহত শিপনের বাবা দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি মামলা করে।

গ্রেপ্তারকৃত মোস্তফার বরাত দিয়ে পিবিআই জানায়, নিহত  শিপন মিয়া ও মোস্তফা মিয়া একসাথে চলাফেরা করতো এছাড়াও তারা একসঙ্গে নেশা করত। শিপন ঢাকায় মোস্তাফার সাথে রাজমিস্ত্রীর কাজ শুরু করে। শিপন নেশা করে সব টাকা শেষ করে ফেলত। তার স্ত্রী ও একটি সন্তান রয়েছে। শিপন ঘর ভাড়া ও দোকান বাকি বাবদ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ না করে বউ সন্তানকে মোস্তফার উপরে ফেলে বেশ কয়েক মাস আগে  সিলেট চলে আসে। মোস্তফা অনেক চেষ্টা করে শিপনে বউ সন্তানকে নোয়াখালীতে পাঠিয়ে দেয়। এই কারণে শিপনের উপরে মোস্তফার রাগ হয়। মোস্তফা তার অটো বিক্রি করে শিপনের  ঘরভাড়া ও মুদি দোকানের ধার শোধ করে।

 

পিবিআই জানায়, মোস্তফা গত ২১ আগস্ট সিলেটে লামা হাজারাই আসলে তার বন্ধুদের সাথে দেখা হয়। মোস্তফা শিপনের ঘটনার বিষয়ে তার অপর বন্ধু রায়েদের কাছে অভিযোগ করে।  রায়েদের সাথে শিপনের আগে থেকে বিরোধ ছিল। শিপন এলাকার ছেলেদের কাছে রায়েদের বউয়ের চরিত্র কথা বলতো। রায়েদের বউ রোকেয়ার সাথে মোস্তফার প্রেম ছিল। রোকেয়া বিদেশ চলে যাওয়ায় মোস্তফা আরেক জায়গায় বিয়ে করে। এই নিয়ে শিপন এলাকায় কথা বলায় শিপনের উপরে রায়েদের খুব বেশি রাগ ছিল। শিপন শামিমের বাড়িতে গিয়ে নেশা করে  আর নেশার টাকার জন্য গালাগালি করত। তখন মোস্তফা, শামিম, রায়েদ তিন জন মিলে পরিকল্পনা করে। শিপনকে নিয়ে তার চারজন মিলে গাঁজা সেবন করে। এছাড়াও জাক্কির শরবতের জিনিসপত্র নিয়ে আসে। রাত ১০টার দিকে শিপনের ছোট ভাই রিপন এসে রায়েদ ও শিপনকে ওদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যায়। মোস্তফা ও শামিম মোস্তফার বাসায় খাওয়া দাওয়া করে রাস্তার মুখে যায়। কিছুক্ষণ পর রায়েদ ও শিপন আসে। তখন তারা তিনজনে মিলে জাকি পান করে আর গাঁজা সেবন করে। মোস্তফার ২৫ হাজার টাকা, রায়েদের বউয়ের চরিত্র কথার বিষয় নিয়া শিপনের সাথে তর্ক বিতর্ক করে। তখন শিপন রায়েদকে থাপ্পড় মারে। মোস্তফাও শিপনকে থাপ্পড় মারে। রায়েদ তখন শিপনকে ধাক্কা মারলে মাথা পিলারের সঙ্গে বাড়ি খায়, তখন রায়েদ আরেকটা ধাক্কা মারলে শিপন মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে  যায়। ওই সময়ে মোস্তফা বৃষ্টির পানি শিপনের মুখে ছিটায়, শিপনের জ্ঞান না ফিরায় তারা বুঝতে শিপন মারা গেছে। মোস্তফা শিপনের লাশ রায়েদের কাঁধে তুলে দিয়ে লাশ ডোবায় ফেলে কচুরি পানা দিয়ে ডেকে রাখে।

গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মোস্তফা মিয়াকে পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করেন। এ ছাড়াও আদালতে নিজেকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাপর অপরাধীকে নামও বলেছে।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/এএ/এআর)