ইভিএম পরীক্ষা, বৈঠক শেষে যা বললেন সিইসি ও বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশ | ২৫ মে ২০২২, ২০:৫৭ | আপডেট: ২৫ মে ২০২২, ২১:১০

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি করার সুযোগ নেই। এসব মেশিনের প্রতিটি অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে যে, কেউ ইচ্ছে করলেই কোনো কিছু পরিবর্তন করতে পারবে না। নির্বাচন কমিশনের সরবরাহ করা ইভিএম মেশিন দেখে এমনই অভিমত ব্যক্ত করেছেন লেখক ও শিক্ষাবিদ জাফর ইকবালসহ কয়েক কারিগরি বিশেষজ্ঞ।

 

ইভিএম মেশিন নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তির মুখে ইসির আমন্ত্রণে এসব মেশিন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেন তারা।

 

বুধবার কারিগরি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইভিএম নিয়ে মতবিনিময় করে নির্বাচন কমিশন। মতবিনিময় সভা শেষে এ নিয়ে অভিমত ব্যক্ত করেন তারা।

 

তবে ইভিএমের বিষয়ে এখনই কিছু বলতে চান না প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের টেকনিক্যাল টিম দিয়ে ইভিএম যাচাই করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

 

ইভিএম প্রদর্শন শেষে অধ্যাপক জাফর ইকবল সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটা মেশিন খুলে দেখেছি। এটা অত্যন্ত চমৎকার একটা মেশিন। আমার মনে হয়, পৃথিবীর কম দেশেই এই মূল্যবান জিনিসটা আছে। যারা এটি তৈরি করেছেন আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাই। অত্যন্ত সহজভাবে এটা চালানা সম্ভব।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি খবরের কাগজে দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে কমিশন তৈরিসহ নানান দাবি করছে। আমি রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো— আপনাদের মত অনুযায়ী যদি নতুন কমিশন তৈরি করতে পারেন, তারপরও তাদেরকে অনুরোধ করবো— আপনারা এই নতুন মেশিনটা ব্যবহার করেন, তাতে আপনাদেরই লাভ হবে।’

 

চাইলেই নিজের মতো করে ইভিএম কাস্টমাইজড করা যায় কিনা? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, ‘যারা এ কথাটা বলছে তাদেরকে আমি অনুরোধ করবো, তারা যেন সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ  আমাদের জানান যে, আপনারা আমাদের এই জিনিসটা করে দেখান। টেকনিক্যাল দিক থেকে অন্য কিছু করা সম্ভব না। অন্য যেকোনও মেশিন থেকে এটা আধুনিক। এটি এমনভাবে করা যে, এটি মেন্যুপুলেট করার সম্ভাবনা নেই।’

 

ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এম কায়কোবাদ বলেন, ‘কোনো মেশিনকে শতভাগ বিশ্বাস করা যাবে না। তবে এখানে যেটা করা হয়েছে, এর প্রত্যেকটা অংশ এমনভাবে কাস্টমাইজড করা হয়েছে যে, একজন ইচ্ছে করলেই সেটাকে পরিবর্তন করতে পারবেন না। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা যথেষ্ট দক্ষ এবং তাদেরকে আমরা বিশ্বাস করতে পারি, এই প্রকল্পের সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের যে পরিমাণ কনফিডেন্স, তাদের যে প্রাউড কমিন্টমেন্ট— সেটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। এটা খুবই একটা ভালো মেশিন তৈরি করা হয়েছে। আমি আশা করি, এটা ডিসপ্লে করা হবে এবং যে কেউ টেস্ট করতে পারবে।’

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক ‘দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর বিধান নির্বাচন কমিশনে রয়েছে। আশা করি, উনারা সেটা করবেন।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি, আমরা কিন্তু কারও মতামতকে উপেক্ষা করিনি। বিরোধী দল থেকে যে মতামত এসেছে— আমরা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিইনি। আমরা অনেকগুলো মিটিং করেছি। আজকেও বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বেসেছি। যারা প্রযুক্তিবিদ তাদের সঙ্গে বসেছি। এই মেশিনের (ইভিএম) ব্যাপারে উনাদের বক্তব্যের পরে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি, এই মেশিনের বিষয়ে আরও কয়েকটা মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টিকে ডাকা হবে।’

 

তিনি বলেন, ‘একজন টেকনিক্যাল ব্যক্তি পারবে মেশিন নিয়ে মূল্যায়ন করতে। আমরা সেই পার্সপেক্টিভ থেকে টেকনিক্যাল পারসনদের ডেকেছি। পলিটিক্যাল পার্টিদেরও আমরা অনুরোধ করব, তাদের যে টেকনিক্যাল টিম আছে কিংবা যদি থাকে, তাদের যাচাই করার জন্য।’

 

সিইসি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে প্রযুক্তিবিদরা বলেছেন, মেন্যুপুলেশন করার সুযোগ নেই। আমার কিন্তু আস্থা রাখতে হবে ওইসব মানুষের ওপর, যারা এই জিনিসগুলো বোঝেন, যারা প্রোডাক্টগুলো তৈরি করেছেন তাদের ওপর। প্রযুক্তিবিদরা আশ্বস্ত হয়েছেন। আমরা আরও কয়েকটি বড় মিটিং করব। পলিটিক্যাল পার্টি যেহেতু বাইরে মাঠে বলছেন, এটা মন্দ মেশিন ভালো মেশিন না। আমরা লিখিতভাবে জানতে চাইব, আপনারা কী কী সমস্যা পাচ্ছেন। আমাদেরকে লিখিতভাবে অবগত করুন। আমরা যেন সিস্টেমেটিক্যালি অ্যাড্রেস করার সুযোগ পাই। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করবো, আমাদের হয়তো লিমিটেশন আছে— কিন্তু চেষ্টার কোনও ত্রুটি থাকবে না। যদি সবার আস্থা অর্জন করতে পারি, মেশিনের ভালো-খারাপ নিয়ে কিছু বলব না, আপনাদের আর একটু অপেক্ষা করতে হবে।’

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম মেশিন নিয়ে আমরা কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৩০০ আসন ইভিএমে ভোট করব নাকি ১০০ আসনে করব, না মোটেই করব না, নাকি এগুলো যখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় হবে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, ব্যবহার করা হবে কী হবে না।’

 

মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), রাশেদা সুলতানা, মো. আলমগীর, মো. আনিছুর রহমান, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মতিন সাদ আবদুল্লাহ, ড. মো. মাহফুজুল ইসলাম, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) পরিচালক মেজর জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন, সেনাকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামসহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/২৫মে/আরকেএইচ/ইএস)