কবিতা
দলিত জীবন-প্রেম
প্রকাশ | ২৬ মে ২০২২, ১২:২৮
দু:সময়ের এতো যে কন্টকাকীর্ণ পালকে ভরা অজস্র ডানা আছে,
আছে হায়েনার মতো সুতীক্ষ্ণ সহস্র নখড়,
কেয়ামতের মাঠে কপালের উপর জ্বলতে থাকা
সূর্যের মতো এর উত্তাপ এতো যে প্রখর,
হিংস্র জানোয়ারের মতো এর যে সর্বগ্রাসী দুর্বিনীত এতো উদ্ধত থাবা আছে!
এর অস্তিত্ব অনায়াসে করা যায় আঁচ,
আমাকে নিশানা করে তীর-ধনুক হাতে নিয়ে
ওঁত পেতে বসে আছে সশস্ত্র পিশাচ।
সুসময়ের যখন আরবি ঘোড়ার সোয়ারি ছিলাম,
তখন কস্মিনকালেও জানতে পারিনি সে খবর—
দু:সময় হতে পারে কতোটা ভয়ংকর,
আমার প্রাণ নিধনের খঞ্জর সে লুকিয়ে রাখে
আমারি জামার আস্তিনের ভেতর।
শকুনের মতো এর ধারালো চঞ্চু আছে,
শ্যেনের মতো সুতীক্ষ্ন দৃষ্টিশক্তি আছে,
গোখড়ো সাপের মতো বিষাক্ত ছোবল আছে,
এ সবি আমার দু:সময়ের হলাহল-
নিয়তি-নির্দিষ্ট ফলাফল;
দেবীমাতা থেটিসের অনুরোধে দেবতা হেফেস্টাস যেমন পুত্র এ্যাকিলিসের জন্য বানিয়েছেন
অভেদ্য বর্ম,
তেমনি আমার গারদ ঘরের জন্যে সেই দেবতার গড়া সপ্ত-থরের অগ্নিআগল।
মুক্তি নেই, নিস্তার নেই, আমার কসরতের ঘাম হয়ে যায় জল,
দু:সময়ের চাপে সুখস্বপ্নের আকুতি
প্রতিটা সূর্যোদয়ে দেখে তার অসহায় রসাতল।
সবি যেনো গিলে খায় শূন্যতার দৈত্য,
শিরচ্ছেদ করে নি:সঙ্গতার জল্লাদ,
কন্ঠনালী ছিঁড়ে ফেলে একাকীত্বের মহাযম;
পৃথিবীর বধির কান শুনতে পায়না জানি
বিলাপ, আর্তি,আহাজারি, বুকফাটা কান্নার মাতম।
বৃষ্টি-বন্যা-সুনামির জলের রাহাজানিতে
পৃথিবীর ভূভাগের অণু অণু ধুলিকণা
আর্তনাদে যদি আহাজারি করে,
তবুও জলেরা ওড়াবে না অশ্রুপতাকা;
আমার কাহিনী কখনো হবে না চোখের জলেতে লেখা,
জলেদের সমিতির সঙ্গে আমার পুরাদস্তুর
এই সমোঝতা স্মারক হয়ে গেছে পাকা।
বর্তমানের সুসময়ের সঙ্গমে ভূমিষ্ট হয় ভবিষ্যতের কাল কেউটে সাপ,
যে সাপের ফণায় দিন-দিনান্তে চমক ধরে
সেই মহামূল্যবান মণি; দু:সময়ের শনি,
অজানিতে দুর্দিন হয়ে-যে বিলায় ঘোর অভিশাপ।
লোভের লাভায় হাবুডুবু খেয়ে সুসময়কে স্বাগত জানানোর খুঁজবো না আর কোনো অজুহাত,
আর আমি কোনোদিন বলবো না,
কাছে এসো, পাশে বসো,এই নাও— হাতে রাখো হাত;
আমি আর কষবো না সুদিন আর দুর্দিনের অণু অনুপাত,
হয়ে যেতে দাও আমার দলিত জীবন-প্রেমের সি:নঙ্গ নিপাত।