বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানছে না আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক

প্রকাশ | ২৬ মে ২০২২, ১৭:৪৭ | আপডেট: ২৬ মে ২০২২, ১৮:০৪

বীর সাহাবী, ঢাকাটাইমস

বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে নির্দেশনা দিয়েছে তা এখনও বাস্তবায়ন করেনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। নির্দেশিত বেতন-ভাতা কার্যকর না হওয়া এবং তিন বছর ধরে অনেকের প্রমোশন আটকে থাকায় ব্যাংকটির কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

গত ২০ জানুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনে একজন শিক্ষানবিশ ব্যাংকারকে সর্বনিম্ন ২৮ হাজার টাকা এবং শিক্ষানবিশকাল শেষে সর্বনিম্ন ৩৯ হাজার টাকা বেতন প্রদানের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর ক্যাশ শাখার জন্য এটি হবে ২৬ হাজার টাকা, যা শিক্ষানবিশকাল শেষে হবে ৩৬ হাজার টাকা।

এছাড়া ব্যাংকের অধস্তন কর্মচারী তথা নিরাপত্তারক্ষী ও পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বেতনের ক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট সর্বনিম্ন বেতন প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এপ্রিল থেকেই সব ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা কার্যকর করতেও বলা হয়।

নির্দেশনাটি জারির অল্প কিছু দিনের ভেতরেই নতুন নিয়ম অনুযায়ী বেশকিছু ব্যাংক তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করেছে। তবে চলতি মে মাসেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করেনি আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক।

ঢাকাটাইমসের হাতে আসা নথিপত্রে দেখা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যাংকারদের বেতন বৃদ্ধি করে প্রস্তাবিত খসড়া জানুয়ারি মাসেই তৈরি করে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। সে মাসেই অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে আল-আরাফাহও নতুন বেতন-ভাতার নির্দেশনা কার্যকর করবে এমনটাই বলা হয়েছিল।

কিন্তু বেতন বৃদ্ধি তো দূরের কথা উলটো অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় এ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অনেক কম বলে অভিযোগ রয়েছে। বেতন-ভাতা নিয়ে কর্মীদের অসন্তোষ রীতিমতো ব্যাংকের কার্যক্রমের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকটির একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা রীতিমতো শোষণের শিকার হচ্ছি। আমাদের ন্যায্য বেতন থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ উচ্চপদস্থ কয়েকজন কর্মকর্তা ঠিকই বেশি বেতন নিচ্ছেন। আমরা যারা নিম্ন পর্যায়ে আছি, অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় আমাদের এখানে বেতন অনেকগুণ কম।’

এই কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য ব্যাংকে বিভিন্ন পোস্টে যে পরিমাণ বেতন-ভাতা তার সঙ্গে আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের বেতন-ভাতার অনেক অসঙ্গতি। আল-আরাফাহ্ ব্যাংকে একজন এক্সিকিউটিভ অফিসারের বেসিক বেতন ২০ হাজার আর সর্বসাকুল্যে দেওয়া হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা। অন্যদিকে একজন এন্ট্রি লেভেলের অফিসারের বেতন ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার টাকা।’

অন্য ব্যাংকে একই পদবীর একজন কর্মকর্তার বেতন ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। সেখানে প্রায় অর্ধেক বেতন দিচ্ছে আল-আরাফাহ ব্যাংক। এর মাধ্যমে কর্মীদের তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে ব্যাংকটি—অভিযোগ এই কর্মকর্তার।

আল আরফাহ্ ব্যাংকের বেশ কয়েকজন কর্মকতার দাবি, ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বেতন ঠিকই অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় অনেক বেশি। তারা অন্যদের বেতন-ভাতা নিয়ে চুপ করে আছেন। তাদের মাথা ব্যথা না থাকায় ২০২২ সালেও পে স্কেল করা হয়নি।

এদিকে বেতন বৈষম্যের পাশাপাশি তিন বছর ধরে বহু কর্মকর্তার প্রমোশন রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন আচরণের কারণে একসময় ভালো মানের ব্যাংকটির কর্মীদের কাজের পরিবেশ অনেকাংশেই নষ্ট হয়েছে।

কবে নাগাদ বেতন-ভাতা বাড়ানো হবে জানার জন্য ঢাকাটাইমস আল আরাফাহ্ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফরমান আর চৌধুরীর বক্তব্য নিতে চেষ্টা করেছে। তবে তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। বার্তা পাঠালে তারও কোনো উত্তর আসেনি।

এদিকে এপ্রিল মাস থেকেই নতুন বেতন-ভাতা কার্যকরের নির্দেশনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘প্রত্যেকটা ব্যাংকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যারা নতুন জয়েন করবে তাদের বেতন-ভাতার বিষয়ে ন্যূনতম একটা বেতন কাঠামো নির্দেশনাতে রয়েছে। আমার জানা মতে ম্যাক্সিমাম ব্যাংকই তা বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। দুই একটা ব্যাংক হয়তো এখনো করেনি।’

এর কারণ হিসেবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দুই একটা ব্যাংক যদি এটা না করে, এটা করার কিন্তু একটা পর্যায় আছে। হয়তো বোর্ডে অ্যাপ্রুভাল নিতে হবে তা নিতে দেরি হচ্ছে। তারা দেরি করলেও হয়তো পরবর্তী সময়ে ইফেক্টিভ দেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার তারিখ থেকে।’

(ঢাকাটাইমস/২৬মে/ডিএম)