নিউমার্কেটে সংঘর্ষ: মামলা ৫টি, তদন্ত কতদূর?

প্রকাশ | ২৭ মে ২০২২, ০৮:৫৩ | আপডেট: ২৭ মে ২০২২, ১০:২৯

মোয়াজ্জেম হোসেন, ঢাকাটাইমস
ফাইল ছবি

রাজধানীর নিউমার্কেটের দুই দোকানের বিরোধের জেরে ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঘটা সংঘর্ষের ঘটনায় মোট মামলা হয়েছে ৫টি। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটি, একটি সংঘর্ষের, একটি ককটেল বিস্ফোরণের এবং একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরের মামলা।

মামলাগুলোর তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে ঢাকাটাইমস যোগাযোগ করে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কাইয়ুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২টি হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ৩টি মামলা নিউমার্কেট থানা পুলিশ তদন্ত করছে।’

সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেছে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক এই দুটি মামলায় নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর একটি মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করা হলেও বাকিরা সবাই অজ্ঞাত।

এছাড়া কুরিয়ারকর্মী নাহিদ হাসান নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেছে তার পরিবার। ওই মামলায় ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। দোকানকর্মী মোরসালিনের মৃত্যুর ঘটনায় তার ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেছেন। এই মামলায়ও অজ্ঞাত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরের মামলাটি করেছেন যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স সে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার।

অর্থাৎ নিউমার্কেটের সংঘাতের ঘটনায় সর্বমোট দায়েরকৃত পাঁচটি মামলায় দেড় হাজারের বেশী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশের তদন্ত করা মামলাগুলোর বর্তমান অগ্রগতি কতদূর প্রশ্নে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স ম কাইয়ুম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘এখনো তদন্ত চলমান আছে। আমরা দোষীদের শনাক্ত এবং গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি। ’ তদন্ত চলমান থাকায় এর বেশী কিছু বলতে রাজি হননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরের মামলাটি করেছেন যে প্রতিষ্ঠানের অ্যাম্বুলেন্স তার ম্যানেজার। তবে এ মামলায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে অ্যাম্বুলেন্স ভাংচুরের অনেকগুলো ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখান থেকে শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওসি কাইয়ুম।

এছাড়া ককটেল বিস্ফোরণের একটি মামলা হয়েছে। সে মামলায়ও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে সংঘর্ষের মামলায় এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর হত্যা মামলাগুলো ডিবি তদন্ত করছে বলে জানান নিউমার্কেট থানার ওসি।

এসব বিষয়ে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হোক এটা আমরাও চাই। তবে সাধারণ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে যারা গেপ্তার হয়েছে তাদের মধ্যে একজনের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি অনেকেই সে নয় বলে দাবি করেছেন। এই বিষয়গুলো খেয়ার রাখার দাবি জানাচ্ছি আমি।’

‘এখন পুলিশ অজ্ঞাত শত শত আসামী করে মামলা দিয়েছে। এখানে ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করলে চলবে না। শুধু রাস্তায় নেমেছে বলেই গ্রেপ্তার করা ঠিক হবে না। কেননা অনেকে না চাওয়া সত্বেও এক প্রকার বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছে। রাস্তায় নেমেছে তাদের গ্রেপ্তার করলে নিউমার্কেটেরও হাজার হাজার লোক সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এই বিষয় চিন্তা করে ঢালাওভাবে যেন কাউকে গ্রেপ্তার করা না হয় সে দাবি জানাচ্ছি আমি।’—যোগ করেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের এই নেতা।

উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল সোমবার রাতে নিউমার্কেটের ওয়েলকাম ফাস্ট ফুড এবং ক্যাপিটাল ফাস্টফুড দোকানের দুই কর্মীর মধ্যে ইফতারের দোকান বসানো নিয়ে সংঘর্ষ তৈরি হয়। পরে ওয়েলকাম ফাস্টফুডের কর্মী ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়ে আসে।

কিন্তু নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ী ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত করেছে —এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী এবং নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় দিন ১৯ এপ্রিল দিনভর চলা এ সংঘর্ষে শতাধিক আহতের পাশাপাশি নিহত হন দুজন।

পরদিন ২০ এপ্রিল সংঘর্ষ না হলেও পুরোটা সময় থমথমে ছিল নিউমার্কেট এলাকা। সেদিন মধ্যরাতে নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা কলেজের ছাত্র ও শিক্ষক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমঝোতা বৈঠক হয়। বৈঠকে শিক্ষার্থীদের দেয়া শর্তসাপেক্ষে ২১ এপ্রিল থেকে নিউমার্কেট খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই বৈঠকে ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের সংঘর্ষ বা সমস্যা এড়াতে ত্রিমাত্রিক কমিটি তৈরির ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিটিতে ব্যবসায়ী-মালিক সমিতি, ঢাকা কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/ডিএম)