ফেসবুকে তথ্যগুজব: কারা ছড়াচ্ছে জীবিতের মৃত্যুর খবর?

প্রকাশ | ২৭ মে ২০২২, ১২:৩৪

আরিফ হাসান, ঢাকাটাইমস

খ্যাতিমান তারকা থেকে পাবলিক ফিগার। তারা বেঁচে থাকলেও তাদেরকে মেরে ফেলা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে। সেই খবর ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসের বেগে। তৈরি হচ্ছে বিভ্রান্তি। যাকে মেরে ফেলা হচ্ছে তিনি বা তার পরিবার পড়ছে বিব্রত অবস্থায়। একের পর এক এই ধরনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে কারা করছে এমন অপকর্ম?

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে ভিউ পাওয়ার লোভে একশ্রেণির ব্যক্তি পেইজ খুলে অতিপরিচিত ব্যক্তিদের টার্গেট করে গুজব ছড়াচ্ছে। এই ভিউ শিকারিদের প্রধান টার্গেট দেশের খ্যাতিমান তারকারা। এর সবশেষ উদাহরণ ‘ইত্যাদি’ নির্মাতা জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেত।

এর আগে ‘মৃত্যু গুজবের’ শিকার হয়েছেন প্রয়াত কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান, ‘মিয়া ভাই’ খ্যাত চিত্রনায়ক এবং ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক, চিত্রনায়ক আলমগীর, নায়করাজ খ্যাত প্রয়াত রাজ্জাক।

এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। প্রতিবারই কিংবদন্তী এই অভিনেতাকে ফেসবুক লাইভে এসে জানাতে হয়েছে—তিনি বেঁচে আছেন!

ক্যান্সার আক্রান্ত চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ওরফে ফারুক সিঙ্গাপুরে বছর ধরে চিকিৎসাধীন। এই সংসদ সদস্যকেও নিয়ে একের পর এক ছড়ানো হয়েছে মৃত্যুর গুজব। সবশেষ গত এপ্রিলে রীতিমতো অনলাইন পোস্টারে ছড়ানো হয়, ফারুক মারা গেছেন। অথচ তিনি চিকিৎসাধীন। পরে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তার পরিবার।

২০২১ সালের অক্টোবরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন এক সময়কার জনপ্রিয় চিত্রনায়ক আলমগীর। নায়ক ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরপরই গুজব ছড়ানো হয়—আলমগীর মারা গেছেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগও দেন আলমগীরের স্ত্রী খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা।

জীবিত ব্যক্তিকে নিয়ে এমন অমানবিক অপকর্মের সবশেষ ভুক্তভোগী জনপ্রিয় উপস্থাপক ও নির্মাতা হানিফ সংকেত। গত মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, হানিফ সংকেত সদক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন!

মিথ্যা তথ্যে বিব্রত তার পরিবারের এক সদস্য ঢাকাটাইমসকে সেদিনই জানান, ফেসবুকে ছড়ানো খবর ভুয়া। হানিফ সংকেত কোনো ধরনের দুর্ঘটনাই পড়েননি। তিনি ভালো এবং সুস্থা আছেন।

পরেরদিন বুধবার রীতিমতো একটি দীর্ঘ ফেসবুক-পোস্ট দিয়ে তার বেঁচে থাকার প্রমাণ দেন হানিফ সংকেত। ক্ষোভ প্রকাশ করে ইত্যাদি নির্মাতা লেখেন, ‘আমার ভাবতে কষ্ট হচ্ছে, আমাকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রমাণ দিতে হলো, আমি বেঁচে আছি। আমার মৃত্যু নিয়ে এ ধরণের স্ট্যাটাস কখনও দিতে হবে ভাবিনি।’

হানিফ সংকেত বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারী এক শ্রেণির বিকৃত মানসিকতার মানুষ তাদের ভিউ ব্যবসা ও ফলোয়ার বাড়াবার প্রত্যাশায় মানুষের মৃত্যু নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে অসামাজিক কাজ করছে।’

`তারা ছড়িয়েছে আমার মৃত্যু সংবাদ। একজন সুস্থ মানুষকে মেরে ফেলার পেছনে এদের কী ধরণের মানসিকতা কাজ করে আমার বোধগম্য নয়। এদের শাস্তি হওয়া উচিত।’ হানিফ সংকেত ডিএমপির সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ করেছেন।

এর আগে গত বছরের জুনে ইত্যাদির ‘নাতি’ খ্যাত নিপুর মৃত্যুর খবর ছড়ানো হয়। সেসময় হানিফ সংকেত জানিয়েছিলেন শওকত আলী তালুকদার নিপুর মৃত্যুর খবরটি ভুয়া। নিপু নিজেও বেঁচে আছেন জানিয়ে বলেছিলেন,‘সবার দোয়ায় আমি সুস্থ আছি। যারা আমার ছবি ব্যবহার করে অপপ্রচার করেছেন, তারা যেন এমন ঘৃণিত কাজ থেকে বিরত থাকেন।’

(ঢাকাটাইমস/২৭মে/ডিএম)