বোয়ালখালী-পটিয়া-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তে পাহাড়ি সন্ত্রাসীর রাজত্ব
প্রকাশ | ২৭ মে ২০২২, ১৬:৫৫
চট্টগ্রাম বোয়ালখালী-পটিয়া- রাঙ্গুনিয়া দুর্গম সীমান্তে চলছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের রাজত্ব। তাদের লেবু শ্রমিকদের মারধর লুটের অভিযোগ, মুক্তিপণ আদায় ও ৩জন কৃষকের মুক্তি এখনো মেলেনি।
বোয়ালখালী উপজেলার আহলা কড়লডেঙ্গার পটিয়া- রাঙ্গুনিয়ার সীমান্তে সেলান পাহাড়ি এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার(২৬ মে) সকালে কাজ করতে যান কড়লডেঙ্গার চম্পা তালুকদারপাড়া, মৌলভী বাজার ও পটিয়া এলাকার প্রায় ৭০/৮০ জন লেবু শ্রমিক। ওই শ্রমিকদের জিম্মি ও মারধর করে নগদ টাকা, মোবাইল লুট ও মুক্তিপণ আদায় করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।
এদের মধ্যে থাকা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের ছেড়ে দিলেও স্থানীয় ৮/১০জনকে আটকে রাখে তারা। এ ঘটনায় পুলিশি অভিযান চালানো হলেও দিনভর কুলকিনারা করা যায়নি। সন্ধ্যায় চম্পা তালুকদারপাড়ার ৫ জনের কাছ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকা মুত্তিপণ আদায় করে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। তবে মৌলভীবাজার তালুকদার পাড়ার বাদশা, অশোক কুমার, লতিফের এখনও হদিস মেলেনি বলে দাবি পরিবার ও স্থানীয়দের। অন্যদিক মো. হাসান ইমনসহ পটিয়ার তিনজনকে মুক্তিপণ না দেওয়ায় জিম্মি করে রাখে অপহরণকারীরা।
উপজেলার চম্পা তালুকদারপাড়ার মুক্তিপণ দিয়ে ছাড় পাওয়া ৫ জন হলেন আবুল ফয়েজ (৫০), জাহেদুল ইসলাম মানিক (৩২), মোহাম্মদ হাছান (২০), আবুল কালাম (৩৭) ও শেখ জামাল (৩৬)। তারা মুক্তিপণের কথা স্বীকার করলেও ঘটনার ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ। তাদের ভাষ্য ওই সন্ত্রাসী গ্রুপে পটিয়া, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার পাশাপাশি স্থানীয় কড়লডেঙ্গারও কয়েকজন ছিল।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ে লেবু শ্রমিকদের আটক করে মারধর ও মোবাইল ছিনিয়ে নেয়া নতুন কিছু নয়। এর আগে বিছিন্নভাবে এ ঘটনা ঘটলেও বৃহস্পতিবার একযোগে একাধিকজন আটকে মারধর, জিম্মি, মোবাইল টাকা ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তারা জানান, চম্পা তালুকদার পাড়া থেকে সেলান পাহাড় ১ ঘণ্টার পথ প্রায় ৪ কিলোমিটার। এ স্থানের লেবু বাগানে স্থানীয়সহ রোহিঙ্গারা কাজ করেন। স্থানীয়দের মধ্যে পটিয়ার শ্রমিকও আছেন।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা আব্দুল হান্নান জানান, সন্ত্রাসীদের দুইজন মুখবাঁধা, বাকি ৫/৬জন মুখ খোলা ছিল। তাদের চেহারা চাকমাদের মতো। সঙ্গে অস্ত্র ছিল। হঠাৎ তারা উপস্থিত হয়ে প্রথমে আমাদের নড়াচড়া করতে নিষেধ করে। কয়েকজনকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। একে একে সবার কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল হাতিয়ে নেয়। এরপর পরিচয় জানতে চায়। রোহিঙ্গা যারা ছিল, তা নিশ্চিত হয়ে হালকা মারধর করে ছেড়ে দেয়। সর্বশেষ স্থানীয় তালুকদারপাড়া, মৌলভীবাজারের ৮-১০ জনকে আটকে রাখে। তাদের বেঁধে রাখা হয়। আমরা চলে আসি, ওদের কী হয়েছে তা আর জানি না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কড়লডেঙ্গার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদ জানান, বিষয়টি নিয়ে দিনভর পুলিশি অভিযানে সহযোগিতা করেছি। বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি, আটক করার পর শ্রমিকদের হালকা মারধর করলেও মোবাইল ও টাকা হাতিয়ে নেয়া ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
স্থানীয় চেয়ারম্যান হামিদুল হক মান্নান ওমরাতে সৌদি আরবে অবস্থানরত রয়েছে। এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একাধিকবার এমন ঘটনা ঘটলেও আইনি কার্যকরী পদক্ষেপ দুর্বল হওয়াতে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা এমন সাহস দেখাতে পাচ্ছে। তারা দাবি করেন, সবাই কোনো না কোনোভাবে চলে আসলেও তালুকদারপাড়ার বাদশা, অশোক কুমার, লতিফের এ পর্যন্ত হদিস মিলেনি।
বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবদুল করিম বলেন, খবর পেয়ে পটিয়া,দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালীর যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে কাউকে আটক করা যায়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। যেহেতু সীমান্ত এলাকার ঘটনা তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সামনে বড় ধরণের যৌথ অভিযানের প্রস্তুতি চলছে। পাহাড়ে সন্ত্রাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বোয়ালখালী আহলা কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে এর আগে গত ১২ এপ্রিল লেবু বাগান থেকে ৩২ বাগান মালিক ও লেবুচাষি, ১৩ মে জ্যৈষ্টপুরা থেকে ৩ জনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটেছিল।
(ঢাকাটাইমস/২৭মে/এআর)