‘জনগণ আবারও আ.লীগকে বিজয়ী করবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৮ মে ২০২২, ১১:৪৫ | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২২, ১০:৫৮

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নিজ দায়িত্বেই অংশগ্রহণ করবে বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলছেন, যেকোনো বিষয়ে প্রথমে না করা বিএনপির পুরোনো অভ্যাস। সময় এলে বিএনপি ঠিকই নির্বাচনে অংশ নেবে। আর আওয়ামী লীগও চায় বিএনপিসহ সব দল অংশ নিক। তাতেই দেশের কল্যাণ হবে।

এই আওয়ামী লীগ নেতা এও মনে করেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৩ বছরে দেশের যে উন্নয়ন হয়েছে, তার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ জনগণ আগামী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগকেই বিজয়ী করবে।

ঢাকাটাইমসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সাক্ষাৎকারে তিনি সাম্প্রতিক রাজনীতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।

বাহাউদ্দিন নাছিম এর আগে টানা তিন মেয়াদে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২১তম জাতীয় সম্মেলনে দলের যু্গ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসা নাছিম প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীও ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত বাহাউদ্দিন নাছিম।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন তিনি।

প্রশ্ন: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিতে মাঠের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীনরা কৌশলে নমনীয় কি না।

নাছিম: বিএনপি নামক দল থেকে যে চরিত্রটা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে, সে প্রত্যাশাটা তারা পূরণ করুক, সেটা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও চায়। আমরা চাই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। নির্বাচনে দেশের জনগণ অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়েই ভোট দিতে যায়। সেক্ষেত্রে সব দল অংশগ্রহণ করলে ভালো।

কোনো দলকে নির্বাচনে আনতে আওয়ামী লীগ নমনীয় না। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল, মুক্তিযুদ্ধের ধারক-বাহক, সেই পথেই আছে। কখনো লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হয়নি। নির্বাচন বাংলাদেশ ও বাঙালির ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। সেটা রক্ষা করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের।

দায়িত্বশীল দল হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময় চায় গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা, জনগণ উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোটদানে অংশগ্রহণ করুক। অর্থাৎ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সে নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়ে জনমত প্রতিফলিত হোক। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের একমাত্র কথা।

আর বিএনপির রয়েছে নির্বাচন না করার মানসিকতা। এ মানসিকতা নতুন কিছু নয়। তারা কিন্তু ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা দিয়েও কথা রাখেনি। জোটগতভাবে ভোটে অংশগ্রহণ করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপি, রাতের অন্ধকারে তারা সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। ইলেকশন না করা বিএনপির নতুন কিছু নয়।

আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি হলো সবাই মিলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। সেখানে সব রাজনৈতিক দল থাকবে। আমরা চাই অন্তত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে আসুক।

প্রশ্ন: বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে বিদেশি কোনো চাপ আছে?

নাছিম: বিএনপিকে রাজনৈতিক দল হিসেবে বলতেও আমার দ্বিধা হয়। কারণ তারা রাজনৈতিক আচরণ করতে পারে না। তাদের সৃষ্টিই হয়েছে অরাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক আচরণ করুক। সেটা কখনো তারা করে না। রাজনৈতিক দল মানুষের ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংযোজিত হোক, এটা তো আওয়ামী লীগের সদিচ্ছা। জনমত প্রতিফলিত হোক এটা আমরা চাই। বাংলাদেশের মানুষ চায়।

আমরা প্রত্যাশা করি বিএনপি নির্বাচনে আসুক। অংশগ্রহণ করুক। আমরা মনে করি বাংলাদেশে শক্তিশালী বিরোধীদল থাকা প্রয়োজন। বিরোধীদল থাকলে তারা গঠনমূলক আচরণ করবে, সমালোচনা করবে, পরামর্শ দেবে। তাহলে রাষ্ট্র পরিচালনায় কল্যাণকর হবে।

আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তার মানে এই নয়, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে আসার দায়িত্বটা বিএনপিকেই নিতে হবে। দেশের মানুষের প্রত্যাশার সঙ্গে থাকবে কি থাকবে না এ দায়িত্ব বিএনপির। আওয়ামী লীগ মনে করে যার যার দায়িত্ব থেকেই নিবন্ধিত দলগুলো নির্বাচনে আসবে।

প্রশ্ন: দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে মানুষের মাঝে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়। নির্বাচনে এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন?

নাছিম: বাংলাদেশ জোয়ার-ভাটার দেশ। এটা আসে-যায়। এটা থাকবে। জোয়ারটা হচ্ছে বড় বিষয়। আওয়ামী লীগ থাকবে জনমতের সঙ্গে। জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে। গত ১৩ বছর ধরে টানা আওয়ামী লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছে। এই ১৩ বছরে আমরা যা করেছি বাংলাদেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তা মানুষের মনে হৃদয়ে গেঁথে আছে। সেই সুফল অবশ্যই দেবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে যে উন্নয়ন, অগ্রগতি ও দেশ সমৃদ্ধিশালী হয়েছে এই স্বীকৃতি শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সারা পৃথিবীতে এ স্বীকৃতি। এত কাজ করার পরেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে ভোট পাবে না, এ ধরনের কথা যারা বলে তারা আসলে কল্পনাপ্রসূত কথা বলে। তাদের বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই। দেশের মানুষের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এত কাজ করেছেন, যা অতীতে কেউ ভাবেনি। এটা বলে শেষ করা যাবে না।

অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল বাংলাদেশ। নিভু-নিভু করে আলো জ্বলত। আমরা হারিকেনও ব্যবহার শুরু করছিলাম। সেখান থেকে আজকে আমরা কোথায় এসেছি। আজকে বাংলাদেশ কোথায় দাঁড়িয়েছে। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। এ বিবেচনা বাংলার মানুষ করবে না, মনে রাখবে না, এ কথাগুলো এক ধরনের অপপ্রচার। বাংলাদেশের মানুষ সচেতন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা ভুল করে না। এটা আমাদের বিশ্বাস রাখতে হবে। দেশের মানুষকে সম্মান জানাতে হবে। তাদের ওপর আস্থা রাখতে হবে।

প্রশ্ন: সংসদীয় প্রতিনিধি দলের একটি টিম যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কৌশল হিসেবে এই সফর?

নাছিম: না, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সংসদীয় প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যায়নি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সম্পর্ক আছে। যেকোনো সময়ের চেয়ে আওয়ামী লীগের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভালো। সেই সুসম্পর্কের কারণেই রাষ্ট্রীয় কাজে গিয়েছে। এই সফর আগে থেকেই নির্ধারণ করা ছিল।

প্রশ্ন: আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের প্রতিদান দেশের জনগণ দেবে বলে মনে করেন?

নাছিম: বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের উন্নয়ন দেখছে। তা উপভোগ করছে। তার দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। সেই কথা কখনো দেশের মানুষ ভুলে যাবে না। এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সবসময় দেশের জনগণের কথা ভাবেন, দেশের কল্যাণে কাজ করেন। এদেশের যত উন্নয়ন-অগ্রগতি, অর্জন হয়েছে আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে হয়েছে।

বাংলাদেশ স্বাধীনও হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে। শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের কারণে দেশের সকল মানুষ আবার ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানাবেন এটাই সত্যি। আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা ছাড়া দেশে মানুষের কল্যাণে কাজ করার মতো অন্য কোনো দল ও ব্যক্তি নাই। সুতরাং দেশের মানুষ শেখ হাসিনাকেই ভোট দিয়ে উন্নয়নের প্রতিদান দেবেন।

প্রশ্ন: জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের কর্মপরিকল্পনা কী?

নাছিম: আওয়ামী লীগই একমাত্র দল, যে দল জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে রূপ রেখা নির্ধারণ করে দল পরিচালনা করে। আগামী জাতীয় সম্মেলন ঘিরে আওয়ামী লীগের অনেক কর্ম পরিকল্পনা আছে। সেগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করেই এগিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আওয়ামী লীগ কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেই তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সম্মেলন করে যাচ্ছে। তৃণমূলের সম্মেলন করা আওয়ামী লীগের নিয়মিত রুটিন ওয়ার্কের একটা অংশ। যেকোনো সময়ের চেয়ে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/জেএ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

বাংলাদেশে একদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবেই, তখন আ. লীগ থাকবে না: আমিনুল হক

উপজেলা নির্বাচন ঘিরে তৃণমূল আ.লীগে বাড়ছে দ্বন্দ্ব

সরকারের এমপিরা ঘোষণা দিয়ে লুটপাট শুরু করেছে: এবি পার্টি

বদরের চেতনায় লড়াই অব্যাহত রাখার আহ্বান ছাত্রশিবির সভাপতির

আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ফখরুলের

বিএনপির ভারত বিরোধিতা মানুষের কষ্ট বাড়ানোর নতুন সংস্করণ: নাছিম

ভোট ডাকাত সরকারকে সমর্থনকারী দেশের পণ্য বর্জন ন্যায়সঙ্গত: রিজভী

১১ মামলায় আগাম জামিন পেলেন বিএনপি নেতা বকুল

বর্তমান সরকার ভারতের অনুগ্রহে ক্ষমতায় বসে আছে: সাকি

জিয়াউর রহমান উগ্র-সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করে: ওবায়দুল কাদের

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :