রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের ওপর যে পাঁচটি প্রভাব পড়েছে

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২২, ১৬:৪০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

ইউক্রেনে রুশ সামরিক অভিযানের পর থেকে বিশ্বজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশের বাজারেও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আঁচ লেগেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সব খাবারের দাম ঊর্ধ্বমুখী। যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের পাঁচটি ক্ষেত্রে বড় প্রভাব পড়েছে।

ইউক্রেনে প্রায় ২০ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। বিশ্বে খাদ্য সংকট এড়াতে ইউক্রেনে মজুদ খাদ্যশস্যের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। অন্যথায়, খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে। তবে, খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক করতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

বিশ্বে ইউক্রেন সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে-সানফ্লাওয়ার অয়েল, ভুট্টা, গম এবং বার্লি।

গম আমদানিতে প্রভাব

বাংলাদেশের মানুষ ক্যালরির জন্য ভাতের উপর নির্ভরশীল। তবে আটা-ময়দার উপরও ধীরে ধীরে নির্ভরশীলতা বাড়ছে। আর এই আটা-ময়দা আসে গম থেকে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট-এর গবেষণা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বাংলাদেশে গমের চাহিদা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বাংলাদেশে তার চাহিদার ৮০ শতাংশ গম আমদনি করে। এর অর্ধেক আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। কিন্তু সে সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হবার কারণে গমের দাম বেড়েছে।

ফলে বাংলাদেশ আটা-ময়দার দামও বেড়েছে। সেই সাথে আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি খাদ্যর দাম বেড়েছে বেশ খানিকটা।

 

ভোজ্য তেলের উপর প্রভাব

বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের দাম এখন লাগামছাড়া। যদিও বাংলাদেশের বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের বেশিরভাগই আসে পাম অয়েল এবং সয়াবিন অয়েল থেকে। বিশ্বজুড়ে যেসব ভোজ্য তেল ব্যবহার হয় তার মধ্যে সানফ্লাওয়ার তেল প্রায় ১৩ শতাংশ। এর প্রায় ৭৫ শতাংশই আসে ইউক্রেন এবং রাশিয়া থেকে। যেহেতু এই সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে, সেজন্য বিশ্বজুড়ে ভেজিটেবল অয়েলের চেইনের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনিস্টিটিউট-এর গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তার প্রয়োজনীয় ভেজিটেবল অয়েল আমদানি করে হয় কাঁচামাল হিসেবে, নয়তো প্রক্রিয়াজাত পণ্য হিসেবে (পাম অয়েল এবং সয়াবিন অয়েল)। অথবা তেলবীজ আমদানি করে সেটিকে স্থানীয়ভাবে প্রক্রিয়াজাত করে।

মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া পাম তেল রপ্তানি করে। কিন্তু একদিকে করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী শ্রমিক সংকটে কারণে দাম কিছুটা উর্ধ্বমুখী ছিল। পরবর্তীতে ইউক্রেন যুদ্ধ সে দাম আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

হাঁস-মুরগি গরুর খাবার

পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ভুট্টা। বিশ্ববাজারে ইউক্রেন ১৬ শতাংশ ভুট্টা সরবরাহ করে। পৃথিবীর আরো অনেক দেশে ভুট্টা উৎপাদিত হয়।

যেহেতু ইউক্রেন থেকে ভুট্টা সরবরাহ আসতে পারছে না সেজন্য বিশ্বজুড়ে পোল্ট্রি ফিড-এর দাম বেড়েছে। এর ফলে বাজারে মুরগী ও ডিমের দাম বেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ ফিড ইন্ডাট্রিজ এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা দেবাশিষ নাগের মতে, পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনের ৬০ শতাংশ উপকরণ আমদানি করতে হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় উপকরণ হচ্ছে ভুট্টা।

"ভুট্টার দাম অনেক বেড়ে গেছে। পোল্ট্রি ফিডের মূল উপাদানে মধ্যে ভুট্টা এবং সয়াবিন মিল (সয়াবিনের ভুষি) - এ দুটো হচ্ছে মূল উপাদান," বলেন মি. নাগ।

সার আমদানিতে খরচ

বিশ্ববাজারে সিংহভাগ সার রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া এবং বেলারুশের ভূমিকা রয়েছে। রাশিয়ার উপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেবার ফলে সেটি বাংলাদেশকেও প্রভাবিত করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ রাশিয়া থেকে সার আমদানি করে। সেটি ব্যাহত হলে ভিন্ন কোন উৎস দেখতে হবে। এতে করে খরচ বাড়বে কৃষি খাতে।

জ্বালানী তেলের দাম

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে জ্বালানী তেলের দাম হু হু করে বেড়েছে। বিশ্ববাজারে তেল-গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ। জ্বালানী তেলের আমদানি ব্যয় মেটাতে এখন হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আসছে বাজেটে জ্বালানী তেলের ভর্তুকির জন্য সরকারকে অনেক টাকা গুণতে হবে। অন্যথায় তেলের দাম বাড়াতে হবে। কিন্তু তেলের দাম বাড়লে দ্রব্যমূল্য আরো বাড়বে।

(সূত্র- বিবিসি বাংলা)

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/আরআর)