স্যানিটারি প্যাড কেনার টাকা নেই, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে মিয়ানমারের নারীরা

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২২, ১৭:০৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
ছবি-ইউনিসেফ

মিয়ানমারে সেনা শাসন শুরু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর পর থেকেই দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ এবং ৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়। এছাড়াও খাদ্য ও চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক বিষয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।

মিয়ানমারের অবস্থা বর্তমানে এতটাই নাজুক যে দেশের নারীরা পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত স্যানিটারি প্যাড পাচ্ছে না। বিশ্ব পিরিয়ড দিবসে কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এমনি চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দেশের উত্তর-পশ্চিম সাগাইং অঞ্চলের বাসিন্দা সান্দার (ছদ্মনাম) আল-জাজিরাকে বলেছেন, আমাকে সারা দিন এবং রাতে একটি স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হয়। যতক্ষণ না রক্ত ​​ওভারফ্লো হয় ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে একটি প্যাড ব্যবহার করতে হয়। যখন আমার কাছে প্যাড থাকে না তখন কাপড় ব্যবহার করি।

দেশটিতে সামরিক শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে সান্দারের মতো অনেক মেয়েদেরই গ্রাম ছেড়ে পালাতে হয়েছে। আশ্রয় নিতে হয়েছে জঙ্গলে বা কাছাকাছি স্কুল ও মঠে। এতে মেয়েদের পিরিয়ডের সময় স্যানিটারি প্যাডের সঙ্কটের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। গোসল বা অন্তর্বাস পরিষ্কার করার মতো পর্যাপ্ত পানিও মিলছে না তাদের। এতে মেয়েদের শারীরিকভাবে অস্বস্তিকর, বিব্রত এবং সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্য দিয়ে জীবন পার করতে হচ্ছে।

পিরিয়ডের সময় মেয়েরা সাধারণত বাইরে যেতে অস্বস্তিবোধ করে বলে জানিয়েছে। কারণ ব্যববহারের মতো পর্যাপ্ত প্যাড না থাকায় বাহ্যিকভাবে রক্তের দাগ বা গন্ধের উপস্থিতি নিয়ে তারা শঙ্কায় থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দারিদ্র্য বা দ্বন্দ্বের মতো পরিস্থিতিতে যেসব নারীদের পিরিয়ড হয় তারা অস্বস্তি এবং চাপের মধ্যে থাকে। এমনকি এ সময় ঋতুস্রাব তাদের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং সুস্থতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলতে পারে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির জেন্ডার, অ্যাডোলেসেন্ট ট্রানজিশনস অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (গেট) প্রোগ্রামের জনস্বাস্থ্য গবেষক ম্যাগি স্মিথ। তিনি জরুরী মানবিক পরিস্থিতিতে ঋতুস্রাব নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা পরিচালনার জন্য ২০১৫ সাল থেকে আন্তর্জাতিক উদ্ধার কমিটির সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেছেন, বাস্তুচ্যুত নারী এবং মেয়েরা পিরিয়ডের সময় দারিদ্র্যের কারণে স্যানিটারি প্যাডের মতো প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত পণ্য না পাওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ, ব্যক্তিগত ও পরিষ্কার টয়লেট এবং পরিবর্তন ও ধোয়ার সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হয়।

অপর্যাপ্ত মাসিক পণ্যের কারণে রক্তের দাগের ভয় মহিলা এবং কিশোরী মেয়েদের কাজ এবং স্কুলসহ তাদের দৈনন্দিন কাজকর্মে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে পারে বলেও ম্যাগি স্মিথ জানিয়েছেন।

মিয়ানমারের নারীরা জানিয়েছেন, স্যানিটারি প্যাড কেনার সামর্থ্য প্রতিনিয়ত তাদের বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান জ্বালানি খরচ, অপর্যাপ্ত সরবরাহ এবং দেশটির মুদ্রা কিয়াতের দরপতনের কারণে দেশজুড়ে মৌলিক পণ্যের দাম বেড়েছে।

২০২১ সাল থেকে সেনা শাসন এবং করোনা মহামারির প্রভাবে দেশটিতে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারিয়েছে। সশস্ত্র সংঘাতে ব্যাকার হয়েছে বেশিরভাগ কৃষক এবং দিনমজুর। জাতিসংঘ গত ডিসেম্বরে বলেছিল এই বছরের শুরুর দিকে মিয়ানমারের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যার আয় হবে দৈনিক এক ডলারের কম।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/এসএটি)