আমাজনের গহীনে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন শহরের সন্ধান

প্রকাশ | ২৮ মে ২০২২, ১৮:২৩ | আপডেট: ২৮ মে ২০২২, ১৮:৩৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

লেজার ইন দ্য স্কাই প্রযুক্তি ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন এক শহরের সন্ধান মিললো আমাজনের গহীনে। গবেষকদের ধারণা প্রচীন এই শহরটি ৫০০-১৪০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যকার সময়ে কাসারাবে সম্প্রদায় নির্মাণ করেছিল। এই শহরগুলি বলিভিয়ার ল্যানোস ডি মোজোস সাভানা-বনে অবস্থিত এবং বহু শতাব্দী ধরে ঘন গাছের ছাউনির নীচে লুকিয়ে থাকায় অনুসন্ধানে ধরা দেয়নি।

ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, লেজার ইন দ্য স্কাই প্রযুক্তির (ঘন গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনের গভীরে কী আছে, তা জানতেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়) মাধ্যমে আবিষ্কৃত এই শহরে ৫৪ একর জুড়ে বিস্তৃত ১৬ ফুট-উঁচু সোপান, ৩০ টি ফুটবল পিচের সমতুল্য এবং ৬৯ ফুট লম্বা শঙ্কুযুক্ত পিরামিডেরও সন্ধান পাওয়া গেছে।

এই প্রযুক্তিতে হেলিকপ্টার, ছোট বিমান বা ড্রোনের সঙ্গে যুক্ত একটি লেজার স্ক্যানার দিয়ে আকাশ থেকেই ভূখণ্ড জরিপ করে দেখা হয়। এই লেজারের স্ক্যানিংয়ের ফলে ওই ভূখণ্ডের একটি ডিজিটাল মডেল কম্পিউটারের পর্দায় ধরা পড়ে।

ইউনিভার্সিটি অফ এক্সেটারের জোসে ইরিয়ার্তে বলেন, আমাজনের বলিভিয়ার এই অংশের পুরো অববাহিকা জুড়ে সবচেয়ে জটিল প্রাক-কলম্বিয়ান সমাজ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার অনুমান আমরা দীর্ঘ দিন ধরে করে আসছিলাম। কিন্তু বনের বিশালাকার ছাউনির নিচে প্রমাণগুলো ঢেকে পড়ায় আমাদের পক্ষে খুঁজে পাওয়া মুষ্কিল হয়ে পড়ে। লেজার ইন দ্য স্কাই প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে অবশেষে আমরা তা খুঁজে পাই।

গবেষণায় সঙ্গে জড়িত জার্মান প্রত্নতাত্ত্বিক ইনস্টিটিউটের ড. হেইকো প্রুমারস বলেছেন, শহরটি প্রাক-হিস্পানিক সময়কার তুলনামূলকভাবে ঘন বসতির সাক্ষ্য দেয়। আমাদের কাজের উদ্দেশ্য ছিল ছিল মৌলিক গবেষণা পরিচালনা করে সেখানকার বসতি এবং জীবনের ইতিহাসের খোঁজ করা।

এ ছাড়াও আমেরিকা এবং জার্মানির গবেষকদের আন্তর্জাতিক দল এই শহরের কয়েক মাইলের মধ্যে বিস্তৃত জলাধার এবং একাধিক ছোট ছোট কাঠামোও খুঁজে পেয়েছেন। আবিষ্কৃত শহরটি আমাজনে বসবাসকারী সম্প্রদায়ের সম্পর্কে পুরনো সব ধারণা বদলে দিয়েছে। কেননা, এই শহরটি প্রমাণ করছে বনাঞ্চলে বসবাস করলেও আমাজনে এমন কিছু সম্প্রদায় বাস করত যারা সময়ের তুলনায় বেশ কিছুটা এগিয়ে ছিল। এই এলাকে কেন্দ্র করে নগর-সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলেও ধারণা করছেন গবেষকরা।

শহরটির নির্মাণশৈলি এ সভ্যতার মানুষদের নিপুণ স্থাপত্যের জ্বলন্ত প্রমাণ। শহরটি সূক্ষ পরিকল্পনামতো সাজানো হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন গবেষকরা। বিংশ শতাব্দীর শেষ পর্যন্ত আমাজন অঞ্চলের বাসিন্দাদের শিকারি উপজাতি হিসেবে মনে করা হতো। এ ধারণার মূল কারণ ছিল আমাজন অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের মোজোস সমভূমি বছরের বেশিরভাগ সময়ে বন্যা কবলিত থাকায় এখানে স্থায়ী বসতি গড়া সম্ভব হতো না।

কিন্তু বিংশ শতাব্দির সেই প্রাচীন ধারণা বলে নতুন আবিষ্কৃত এই শহরটি। গবেষকদের ভাষ্যমতে, লুকানো এই শহরের চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। জঙ্গলের ঘনত্ব এবং একাধিক উঁচু মাটির ঢিপির কারণে এখনো বেশ কয়েকটি এলাকা গবেষকদের চোখে ধরা পড়েনি। কিন্তু এখানকার বাসিন্দারা কেন শহর ছেড়েছিল সে সম্পর্কে কারণ জানা যায়নি। বিষয়টি গবেষণা সাপেক্ষ।

সেখানে কত লোক বাস করত তা এখনও অনুমান করা সম্ভব হয়নি। তবে শহরের বিন্যাস থেকে বোঝা যায় যে এটি মোটামুটি ঘনবসতিপূর্ণ ছিল।

গবেষণাকারীরা বলছেন, এখানে জনবসতি নির্মাণের জন্য যে পরিশ্রম এবং পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা আমাজোনিয়ায় অভূতপূর্ব এবং এর পরিবর্তে কেবলমাত্র কেন্দ্রীয় আন্দিজের প্রাচীন রাজ্যগুলির সঙ্গে তুলনীয়। শহরটিতে প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সফল টেকসই জীবিকা নির্বাহের কৌশল নিযুক্ত করা হয়েছিল যা আশেপাশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়ক।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/এসএটি)