নরসিংদীতে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতকের মৃত্যু

নরসিংদী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মে ২০২২, ২২:৫৯

নরসিংদী শহরের মেরিস্টোপস ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় শনিবার নিহতদের স্বজনরা লিখিত অভিযোগ জানাতে নরসিংদী মডেল থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। এর আগে গত শুক্রবার রাতে ওই মা ও নবজাতক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নিহত ওই গৃহবধূর নাম সালেহা বেগম (৩০)। তিনি নরসিংদী শহরের শালিধা নতুন বাস¯ট্যান্ড এলাকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক হান্নান মিয়ার স্ত্রী।

নিহত নারীর স্বজনরা জানান, শুক্রবার দুপুরের পর শহরের মেরিস্টোপস ক্লিনিকে নবজাতকের পরিস্থিতি জানার জন্য আলট্রাসনোগ্রাম করাতে যান প্রসূতি সালেহা। আলট্রাসনোগ্রামের রেজাল্ট সেখানকার একজন নারী চিকিৎসককে দেখান তিনি। ওই চিকিৎসক তাকে জানান, ১৫ দিন পর তার প্রসবের সম্ভাব্য সময়, তবে ইচ্ছে করলে আপনি আজই সিজার করাতে পারেন। সালেহা বিষয়টি স্বজনদের জানালে এক সপ্তাহ দেখার পর এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে বলে সিদ্ধান্ত নেন স্বজনেরা। এই আলোচনার মধ্যেই ওই চিকিৎসক সালেহাকে স্যালাইন দেওয়ার কথা বলে কেবিনে নিয়ে যান।

সন্ধ্যার দিকে ওই নারী চিকিৎসক সালেহার স্বজনদের জানান, সালেহার তীব্র খিচুনি উঠেছে। তাড়াতাড়ি কয়েক ব্যাগ রক্ত যোগাড় করেন। অথচ হাসপাতালটিতে অবস্থানের সময়ও সালেহা ছিলেন সম্পূর্ণ সুস্থ। রাত ৮টার দিকে স্বজনদের কাউকে কিছু না বলে সালেহাকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে নেওয়া হয়। পরে তারা নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে সালেহার সিজার করে ফেলেন। রাত ৯টার দিকে স্বজনদের হাতে একটি ছেলে নবজাতক তুলে দেয়া হয়। কিন্তু ওই নবজাতকের চোখ না ফোটায় হিটের মধ্যে রাখার কথা বলে তাকে আবার ভেতরে নিয়ে যায় তারা।

দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষার পরও অপারেশন থিয়েটার থেকে সালেহাকে বের করছিলেন না তারা। রাত ১১টার দিকে ওই চিকিৎসক ও নার্স অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সালেহাকে তুলে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্বজনরা জানতে চাইলে তারা জানান, রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। ওই সময় সালেহার দুই বোন ও একজন বোন জামাই তাদের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সে উঠে বসেন। ওই সময় সালেহা জিভ বের করে দাঁতে কামড় দেওয়া অবস্থায় ছিল। শরীর ছিল বরফের মত ঠান্ডা। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সাহেপ্রতাপ এলাকায় পৌঁছার পরই অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে ওই চিকিৎসক ও নার্স নেমে পালিয়ে যান। ওই অবস্থায় স্বজনরা সালেহাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, ২-৩ ঘণ্টা আগেই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে রাত ১১টার দিকে নবজাতক শিশুকে স্বজনদের হাতে তুলে দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নবজাতকের অবস্থা ভালো না। তাকে তাড়াতাড়ি নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে ওই হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার চিকিৎসক পরামর্শ দেন, দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। রাত ২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা হন স্বজনরা। পরে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তাকেও মৃত ঘোষণা করেন। মা ও নবজাতকের লাশ এখনও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

নিহত নারীর ছোট বোন রাশিদা বেগম জানান, হাসপাতালটিতে গর্ভবতী নারীর প্রসব করানোর মত ভালো কোন ডাক্তার ছিল না। সময় হওয়ার আগেই শুধু টাকার জন্য সেখানকার চিকিৎসক এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। তার ভুল চিকিৎসার কারণে আমার বোনের জরায়ু কেটে যায়। ফলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়, তাতেই সে মারা যায়। আমরা এই ঘটনায় মামলা করতে সকাল থেকে থানার সামনে বসে আছি, কিন্তু পুলিশ মামলা নিচ্ছে না।

পুরোটা সময় সঙ্গে থাকা প্রতিবেশী এক নারী জানান, ভুল চিকিৎসার কারণেই মা-নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। সালেহা আপা মারা গেছেন রাত ১১টার সময় হাসপাতালে থাকা অবস্থাতেই। আর নবজাতক মারা গেছে রাত সাড়ে তিনটায়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে। এই ঘটনায় যারা দায়ী তাদের সবার বিচার হওয়া দরকার। যেন লোভে পড়ে আর এমন ঘটনা না ঘটায়।

এই ঘটনায় মামলা কেন নেওয়া হচ্ছে না জানতে চাইলে নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ তালুকদার জানান, এই ঘটনায় নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের হাতে আটক ক্লিনিকটির দুই কর্মকর্তাকে আমরা থানায় নিয়ে এসেছি। ফৌজদারি বিষয় না হওয়ায় আমরা এই ঘটনায় মামলা নিতে পারছি না। নিহতের স্বজনদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগে লিখিত অভিযোগ জানাতে। বিষয়টি চিকিৎসা সংক্রান্ত হওয়ায় জেলার সিভিল সার্জনের পরামর্শে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নরসিংদীর সিভিল সার্জন নূরুল ইসলাম জানান, বেসরকারি ওই ক্লিনিকে সিজার করতে গিয়ে মা ও নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কয়েকজন চিকিৎসক সমন্বয়ে একটি দল ক্লিনিকটি সিলগালা করতে যায়। কিন্তু সেখানে কিছু রোগী ভর্তি থাকায় ক্লিনিকটি সিলগালা করা যায়নি। এই ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশেরভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(ঢাকাটাইমস/২৮মে/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :